আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বৈশ্বিক মহামারির শেষ প্রান্তে আলোর ঝিলিকের মতো করোনা টিকার স্বপ্নও উজ্জ্বল হয়েছে। ফলে বিশ্বের বড় অর্থনৈতিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে স্বপ্নও দেখতে শুরু করেছেন। করোনা টিকা আমাদের শরীরের রক্ত প্রবাহে প্রবেশের পর পুনরুদ্ধারের স্বপ্নকে বাস্তবতাও বলা যেতে পারে। খবর দ্য নিউইয়র্ক টাইমস।
কিন্তু করোনা প্রতিষেধক উৎপাদনকারী দেশসমুহের অবস্থান একটু খতিয়ে দেখলে এই সফলতার উল্টো দিকে হতাশাজনক একটি চিত্রেরও দেখা মিলবে। যেখানে নিপিড়িত মানুষের প্রাপ্তসুবিধাগুলো সমতা ভিত্তিক বণ্টন থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছে।
ইউরোপ ও আমেরিকার মতো ধনী দেশগুলো ইতোমধ্যে বিশাল পরিমাণ টিকার মজুদ নিজেদের জন্য সুনিশ্চিত করেছে। নিজেদের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের উন্নতির জন্য যথাযথ ব্যবস্থাও নিশ্চিত করেছে। বিপরীতে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যেখানে বেশির ভাগ মানুষের বসবাস, তারা এখনও নিজেদের জন্য টিকা নিশ্চিত করতে পারেনি।
এখন করোনা টিকার এই বৈষম্যমুলক বিতরণের কারণে অর্থনৈতিক অবস্থা আরও খারাপ হবে বলে মনে হচ্ছে। এমনিতেই করোনা মহামারিতে ইতিহাসের এই অধ্যায়ের পর যে বিশ্ব আমাদের সামনে হাজির হতে যাচ্ছে তা সাম্প্রতিক অতীতের যেকোনও সময়ের চেয়ে বৈষম্যপূর্ণ হবে। মহামারীর কারনে দরিদ্র দেশগুলো আরও দরিদ্র হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে যার অবস্থা হবে খুবই শোচনীয়।
সেখানে তাদের সম্পদের স্বল্পতার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও চীনের ঋণের বোঝা দ্বারা আরও চাপের মুখে পড়বে। বৈশ্বিক অর্থনীতি দীর্ঘ সময় ধরে প্রকৃতির বিরুপ প্রভাব, সম্পদের অপব্যবহার, শিক্ষা, বিশুদ্ধ পানি, বিদ্যুৎ ও ইন্টারন্টের বৈষম্যমূলক বিতরণ দ্বারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। পাশাপাশি এই মহামারী জাতিগত সংখ্যালঘু, নারী এবং অল্প আয়ের পরিবারগুলোর জীবন ও জীবিকার ওপর চালিয়েছে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ।
বাস্তবে মানুষের অর্থনৈতিক জীবন আগামী কয়েক বছরের জন্য নতুন একটি বিভাজনে রূপ নিতে যাচ্ছে। যেখানে টিকা নিতে না পারা মানুষ আলাদা একটি শ্রেণি হিসেবে বিবেচিত হবে। জেনেভায় জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংক্রান্ত কনফারেন্সে বিশ্বায়ণ ও উন্নয়ন বিষয়ক ডিরেক্টর রিচার্ড কোযোল-রাইট বলেন, এটা স্পষ্ট যে উন্নয়নশীল দেশগুলো, বিশেষত দরিদ্র, উন্নয়নশীল দেশগুলো কিছু সময়ের জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকবে।
এমনকি টিকাকে একটি বৈশ্বিক পণ্য ( সমতা ভিত্তিক বন্টন) হিসেবে উপলব্ধি করা সত্ত্বেও সামগ্রিকভাবে এর দখল অগ্রসরমাণ অর্থনীতির দেশ সমুহের বড় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর হাতে রয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক অনেক দাতা সংস্থা এবং কোনও ধনী রাষ্ট্র চেষ্টা করছে একত্র হয়ে সব দেশের জন্য সমতা ভিত্তিক বণ্টন নিশ্চিত করতে।
মহামারীর বিরুদ্ধে সম্মিলিত লড়াই গড়ে তুলতে চেষ্ট চালিয়ে যাচ্ছেন অনেক দেশ। কিন্তু তাদের হাতে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ না থাকায় তারাও সে উদ্যোগে যথাযথ সফলতা পাচ্ছে না। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এবং অন্যান্য সংগঠন একত্র হয়ে ৫০০ কোটি ডলারের কম অর্থ সংগ্রহ করতে পেরেছে। অথচ তারা ৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলার সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়েছিল।
ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো শীর্ষস্থানীয় উন্নয়নশীল দেশগুলো আবার ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে নিজেরাই টিকার উৎপাদন করে যথাযথ সরবরাহ নিশ্চিত করতে চাইছে। যেখানে তারা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার প্রতি আবেদন করেছে বৈশ্বিক সম্পত্তির ওপর চিরায়ত যে সুরক্ষা ব্যবস্থা, তা মওকুফ করে দিতে।
যাতে দরিদ্র দেশগুলো নিজেদের মতো সাশ্রয়ী মুল্যে টিকা তৈরি করে নিতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে ঐকমত্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে ডব্লিউটিও। যেখানে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে। সব মিলিয়ে টিকা আবিষ্কারে সফলতা অর্জিত হলেও তার সমবণ্টন এখনও অনেক দূরের পথ এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর হওয়া এখনও অস্তমিত সূর্য।
সান নিউজ/এসএ