নিজস্ব প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের সরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীদের জন্য ডেডিকেটেড আইসিইউ শয্যা কিছুটা খালি গেলেও নভেম্বর মাস জুড়ে আইসিইউ না পাওয়ার পুরোনো দৃশ্যটাই ফিরে আসতে শুরু করেছে। সামনের দিনগুলোতে এটি আরও ব্যাপক রূপ নেওয়ার আশঙ্কার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ)কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমানের একজন রোগী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ৬ দিন ধরে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হঠাৎ করে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া সে রোগীর জন্য সরকারি হাসপাতালে একটি আইসিইউ সিটের জন্য দৌড়ঝাঁপ করেও সফল হননি তিনি।
এটিই প্রথম নয়, চলতি নভেম্বর মাসের বিভিন্ন সময়ে আরও ৩ জন রোগীর জন্য তদবির করেও সরকারি হাসপাতালে একটি আইসিইউ সিট ম্যানেজ করতে পারেননি সেই চিকিৎসক নেতা। তারই যখন এই দশা, সেখানে সাধারণ মানুষের কী দুর্দশা যাচ্ছে সেটা সহজেই অনুমান করা যায়।
করোনা রোগীদের জন্য ডেডিকেটেড আইসিইউ শয্যায় হঠাৎ রোগী বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে নিচ্ছেন সিভিল সার্জনসহ চট্টগ্রামের সরকারি হাসপাতালের পরিচালকরাও। আইসিইউ প্রয়োজন এমন জরুরি রোগীর সংখ্যা নভেম্বর মাসে বাড়ছে এ কথা স্বীকার করে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বী বলেন, এখন কিছু শয্যা খালি আছে। তবে তুলনামূলকভাবে নভেম্বরে আইসিইউতে রোগীর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে করোনা আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে।
তবে করোনার চিকিৎসায় আইসিইউ খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয় জানিয়ে সিভিল সার্জন বলেন, ‘করোনায় অক্সিজেন আর হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা সবচেয়ে বেশি দরকার। সেসব ক্ষেত্রে আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে। তবুও পরিস্থিতি যেভাবে বদলাচ্ছে, মানুষকে সচেতন হতেই হবে। বারবারই এই একটা বিষয়ে আমরা জোর দিচ্ছি। সচেতনতার কোনও বিকল্প নেই।’
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রামে সরকারি হাসপাতালের আইসিইউ শয্যা রয়েছে মোট ৩০টি। যদিও এর মধ্যে হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালের ১০টি আইসিইউতে ভেন্টিলেটর সুবিধা নেই। সেই সিটগুলোতে গত কয়েক মাসে একজনও রোগী ভর্তি হয়নি। বাকি ২০টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) ১৫টি এবং শনিবার (২৮ নভেম্বর ১২টি শয্যায় রোগী ভর্তি ছিল।
অন্যদিকে, বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ১৩২টি আইসিইউ শয্যার বিপরীতে ২৬ নভেম্বরের সবশেষ হিসাব অনুযায়ী মোট ৪৩ জন করোনা রোগী চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। তবে বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ সেবা অত্যন্ত ব্যয়বহুল দাবি করে অনাগত সময়ের কথা ভেবে সরকারি হাসপাতালগুলোতে আরও সক্ষমতা বৃদ্ধির দাবি তুলছেন স্বাস্থ্যসেবা খাতের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিবর্গ।
আরও একটু উদ্যোগ নিলে অল্প সময়ের মধ্যে চট্টগ্রামে করোনা রোগীদের জন্য আরও আটটি ডেডিকেটেড আইসিইউ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসার মূল প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি পাওয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ খালি থাকলেও সরকারি হাসপাতালের সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে চিকিৎসক নেতা মিনহাজুর রহমান বলেন, ‘আমার একজন রোগী ৬ দিন ধরে বেসরকারি একটা হাসপাতালে আছে। যেখানে প্রথম দিনেই বিল এসেছে ৫০ হাজার টাকা। এরপর প্রতিদিন ৩০ হাজার করে বিল আসছে। এটা তো সবার পক্ষে বহন করা সম্ভব না।’ সূত্র : চট্টগ্রাম প্রতিদিন।
সান নিউজ/এসএ