নিজস্ব প্রতিবেদক : ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে কার্যকর ওষুধ পাওয়ার দাবি করেছে দেশের একদল গবেষক। ‘এলট্রম্বোপ্যাগ’ নামের একটি জেনেরিক ওষুধের স্বল্পমাত্রার ডোজ ব্যবহার করে ডেঙ্গু রোগী উপকার পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মৌসুমী সান্যাল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এএইচএম নুরুন নবীসহ ১২ সদস্যের একটি দল এই গবেষণায় অংশ নেন।
চিকিৎসা বিষয়ক সাময়িকী দ্যা ল্যানসেটে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছেন তারা। প্রতিবেদনে বলা হয়, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (ইমিউন সিস্টেম) দুর্বল হয়ে পড়লে, লিভারের মারাত্মক জটিলতার কারণে অথবা লিউকোমিয়া (রক্তের ক্যান্সার) রোগীদের ক্যামোথেরাপি দেয়ার কারণে প্ল্যাটিলেট কমে যায়।
যে পরিস্থিতিকে থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া বা থ্রম্বোসাইটিস বলা হয়। এসব পরিস্থিতিতে এলট্রম্বোপ্যাগের কার্যকারিতা প্রমাণিত। উপসর্গজনিত মিল থাকার কারণে ডেঙ্গুজনিত প্লাটিলেট স্বল্পতায়ও এই ওষুধ কার্যকর হবে ধরে নিয়ে গবেষণার পরিকল্পনা করা হয়। গবেষক দলের অন্যতম সদস্য অধ্যাপক নুরুন নবী বলেন, ডেঙ্গু হলে প্ল্যাটিলেট সংখ্যা কমে যাওয়ায় রক্ত জোগাড়ে মানুষ অস্থির হয়ে পড়ে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এমনই একজন রোগীর ক্ষেত্রে ডা. মৌসুমী ‘এলট্রম্বোপ্যাগ’ ওষুধটি ব্যবহার করেন। এতে পরের দিনই রোগী ভালো হয়ে যান। এই সুফলের ফলে তিনি আরও ৪ জন অসহায় রোগীর চিকিৎসা করেন। কিন্তু মোট ৫ জনের মধ্যে ২ জন ভালো ফল পান, ২ জন মোটামুটি আর একজনের ফলাফল আশানুরূপ পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে ডা. মৌসুমীর সঙ্গে মিলে তারা যৌথ উদ্যোগে ১০১ জন ডেঙ্গু রোগীর ওপর এলট্রম্বোপ্যাগ প্রয়োগ করে ওষুধটির কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আরও বলেন, ওষুধটির কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে কিনা, সেটাও আমরা দেখেছি। কারণ অনেকের প্ল্যাটিলেট বেড়ে গেলে সেটা ক্ষতির কারণও হতে পারে।
কিন্তু আমরা এরকম কিছু পাইনি। শুধু তিন শতাংশের ক্ষেত্রে ডায়রিয়ার মতো কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পেয়েছি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বেটার লাইফ হাসপাতাল ও এ এম জেড হাসপাতাল থেকে পরিকল্পনা মাফিক ডেঙ্গু রোগীদের এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরমধ্যে সাধারণ ডেঙ্গু রোগী ৭৭ জন ও রক্তক্ষরণসহ ডেঙ্গু রোগী ছিলেন ২৪ জন।
অধ্যাপক নুরুন নবী বলেন, এই ওষুধ ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে এখনও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইনে আসেনি। আরও বৃহৎ পরিসরে পরীক্ষা করে সফলতা পাওয়া গেলে তখন নিশ্চয়ই এটা ডেঙ্গুর চিকিৎসার গাইডলাইনে অন্তর্ভুক্ত হবে। আমাদের গবেষণার উদ্দেশ্য হলো, সবাইকে যাতে রক্তের জন্য দৌড়াতে না হয়।
এই ওষুধের মাধ্যমে যাতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা সুফল পান। বাংলাদেশের একটি ওষুধ কোম্পানির অর্থায়নে এই গবেষণা দলে আরও ছিলেন- ঢাকা মেডিকেল কলেজের ডা. আহমেদুল কবির, ডা. রোবেদ আমিন, ডা. চৌধুরী তামান্না তাবাস্সুম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সজীব চক্রবর্তী, স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী সারওয়ার আলম, মোহাম্মদ সায়েম, তন্ময় দাশ ও পিয়াল সাহা, স্কয়ার হাসপাতালের চিকিৎসক বার্থোলোমিয়া কেয়া বেপারী, আইচি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডা. মোহাম্মদ সায়েম।
সান নিউজ/এসএ