সান নিউজ ডেস্ক : মানুষ ও পশুপাখিতে এন্টিবায়োটিকের অযাচিত ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও ডাইরেক্টরেট জেনারেল অব হেলথ সার্ভিসেস। তারা বলছে, আর দেরি না করে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।
‘‘বিশ্ব এন্টিমাইক্রোবিয়াল সচেতনতা সপ্তাহ-২০২০” উদযাপন উপলক্ষে সোমবার (২৩ নভেম্বর) ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভায় এ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। যৌথভাবে এ সভা আয়োজন করে সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), বাংলাদেশ এএমআর রেসপন্স অ্যালায়েন্স (বিএআরএ) এবং বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি)।
সভায় ডাইরেক্টরেট জেনারেল অব হেলথ সার্ভিসেস এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার অনিন্দ রহমান বলেন, ইতোমধ্যে অনেকগুলো এন্টিবায়োটিক অকার্যকর হয়ে গেছে। রিজার্ভড এন্টিবায়োটিকগুলোও সহজেই ব্যবহার করা হচ্ছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে নতুন কোনো কার্যকর এন্টিবায়োটিক উদ্ভাবন করা না গেলে সংকট ঘনীভূত হবে। তাই জীবন রক্ষাকারি রিজার্ভড এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও), বাংলাদেশ অফিসের এসেনসিয়াল ড্রাগস অ্যান্ড আদার মেডিসিনের টেকনিক্যাল অফিসার মোহাম্মদ রামজি ইসমাইল বলেন, পশুপাখি, মানুষ আমরা সকলেই একই পরিবেশ, মাটি ও পানি ব্যবহার করছি। কাজেই একের অপরিনামদর্শী পদক্ষেপ অন্যের বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
তিনি বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত বিচক্ষণ একজন মানুষ। ‘‘ওয়ান হেলথ গ্লোবাল লিডার্স গ্রুপ অন অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স” -এ তার ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আশাকরা যায় আগামীতে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে অর্থবহ কিছু করে দেখাবে।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, হাত বাড়ালেই যেখানে এন্টিবায়োটিক পাওয়া যায় সেখানে আমদানি কিংবা উৎপাদনে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা না গেলে এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কঠিন। এন্টিবায়োটিকমুক্ত ডিম ও মাংস উৎপাদনে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
এজন্য খামারে জীবনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, খামার ব্যবস্থাপনা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হবে এবং সব অনিবন্ধিত পিএস ফার্ম, হ্যাচারি, ফিড মিলগুলোকে অবশ্যই সরকারি নীতিমালার আওতায় আনতে হবে নতুবা বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে আরও কঠোর হতে হবে এবং সরকারি সংস্থা, বেসরকারি উদ্যোক্তা ও উন্নয়ন সহযোগীদের যৌথ উদ্যোগে অচিরেই একটি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করে কাজে নামতে হবে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. শেখ আজিজুর রহমান বলেন, আমরা সামনের দিকে এগুতে চাই, সুস্থ-সবল জাতি গড়তে চাই। কিন্তু সরকারের একার পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব নয়। তাই সরকার, বেসরকারি উদ্যোক্তা, উন্নয়ন সহযোগীসহ সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। এ মাসেই এলডিডিপি প্রকল্পের আওতায় কোভিড মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের নগদ সহায়তা দেওয়া শুরু হচ্ছে বলে জানান তিনি। সরকারের এ উদ্যোগ তৃণমূল খামারিদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে বলে মনে করেন ডা. আজিজুর।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার কর্মকর্তা ডা. কামরুন নাহার বলেন, কৃষির উন্নয়ন ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ও গবাদি পশুপাখির রোগবালাই প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ, এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স ও এ বিষয়ে দক্ষ জনবল তৈরিতে কাজ করছে এফএও।
ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, মানুষ ও পোল্ট্রিতে এন্টিবায়োটিকে ব্যবহার নিয়ে এফএও এবং বিএআরএ গাইডলাইন তৈরি করেছে। শিগগিরই মৎস্য খাতের জন্যও অনুরূপ একটি গাইডলাইন তৈরি করা হবে।
বিপিআইসিসির সহ-সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ বলেন, বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্পে গুণগত পরিবর্তন এসেছে। তার মতে দেশে উৎপাদিত মৎস্য ও পশুখাদ্যে এখন প্রোবায়োটিক, প্রিবায়োটিক এবং এন্টিবায়োটিক-অলটারনেটিভ ফিড এডিটিভস এর ব্যবহার বেড়েছে। ট্যানারির বর্জ্য কিংবা হেভিমেটাল নিয়ে যে সমস্যাগুলো ছিল তা অনেকটাই কমে এসেছে। বর্তমানে বাংলাদেশের পোল্ট্রি ফিড ভারত ও নেপালে রপ্তানি হচ্ছে। ডিম, একদিন-বয়সী মুরগির বাচ্চা এবং পোল্ট্রির মাংস ও মাংসজাত প্রোডাক্ট রপ্তানিরও চেষ্টা চলছে।
সান নিউজ/এম/এস