নিজস্ব প্রতিবেদক : চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা কমাতে বাংলাদেশে বিশ্বমানের হাসপাতাল নির্মাণ করতে চায় চীন। এ নিয়ে একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পাঠিয়েছে বেইজিং। বাংলাদেশ সে প্রস্তাবকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে। তবে এখনও এ বিষয়ে বেইজিংকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।
প্রস্তাবটির বিভিন্ন দিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। চীন ছাড়াও অল্প সময়ের ব্যবধানে তুরস্ক এবং সৌদি আরবও বাংলাদেশে অত্যাধুনিক চিকিৎসা সুবিধা সমৃদ্ধ হাসপাতাল নির্মাণে প্রায় একই প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের প্রত্যেকেরই সুলিখিত বিনিয়োগ প্রস্তাব রয়েছে। তিনটি প্রস্তাব বাংলাদেশ সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে উপস্থাপন করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এর কারিগরি দিক পর্যালোচনা চলছে। বাংলাদেশে চিকিৎসা ব্যবস্থার শুনগত মান নিয়ে বৈশ্বিক মহামারি করোনায় সবাইকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, এমন মন্তব্য করে ঢাকার এক কর্মকর্তা বলেন, নানা কারণে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা তথা হাসপাতালগুলোর ওপর অনেকের আস্থা নেই।
দেশের মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনার চেষ্টার পাশাপাশি দেশে উন্নত মানের হাসপাতাল নির্মাণের বিষয়টিও ইতিবাচক ভাবে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে দেশি-বিদেশি অনেক প্রস্তাব এখন আলোচনার টেবিলে। করোনার কারণে বিদেশ যাত্রা বিশেষত রোগীদের যাতায়াতে বিধি-নিষেধ আরোপে বিভিন্ন দেশে নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহণকারী বাংলাদেশিরা মারাত্মক বিপাকে পড়েছেন।
তুরস্ক কিংবা সৌদি আরব ঢাকার বাইরে যেতে রাজি নয়। তারা ঢাকার আশেপাশেই হাসপাতাল নির্মাণ করতে চায়। চীন সরকারের প্যাট্রনে চায়না মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন- সিএমইসির হাসপাতাল নির্মাণ সংক্রান্ত বিনিয়োগ প্রস্তাবণায় বলা হয়েছে, পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহর এবং জেলা পর্যায়েও তারা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হাসপাতাল তৈরিতে বিনিয়োগ করতে চায়।
এলাকা এবং জনসংখ্যার বিবেচনায় হাসপাতালগুলোর শয্যা নির্ধারিত হবে। প্রত্যেকটি হাসপাতাল সর্বনিম্ন ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার শয্যার হবে। সব মিলে বাংলাদেশে প্রায় ৫০ হাজার শয্যার ৫০ থেকে ১০০টি হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে চীনের। চীন প্রস্তাবিত বিভাগীয় এবং জেলা শহরের হাসপাতাল হবে অনেকটা ডিজিটাল।
হাসপাতালগুলোর চিকিৎসক ও নার্সের ৭০ শতাংশ থাকবে বাংলাদেশি। বাকি ৩০ ভাগ বিদেশি। তা চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে নিয়োগ হবে। প্রত্যেক হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত থাকবে একটি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট। যেখানে চিকিৎসক, নার্সের পাশাপাশি টেকনিশিয়ানদের নিয়মিত প্রশিক্ষণে গড়ে তোলা হবে। চীনের প্রস্তাব বিষয়ে গত অক্টোবরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক হয়েছে।
আন্তঃমন্ত্রণালয় সে বৈঠকে প্রস্তাবটি খুঁটিনাটি পর্যালোচনা হয়েছে। পরবর্তী পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তা নীতিনার্ধারণী পর্যায়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। দেশের চিকিৎসা উন্নতকরণ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস গণমাধ্যমকে বলেন, চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রতিবছর দেশ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার মতো বিদেশে চলে যায়।
ভারতের মেডিকেল ট্যুরিজম বিষয়ক প্রফেশনাল সেবা নেটওয়ার্ক গ্র্যান্ট থর্টনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- প্রায় ৪-৫শ কোটি ডলারের বেশি ভারতের মেডিকেল ট্যুরিজম খাতে বড় অবদান বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের। দেশ দুটির যৌথ অবদান প্রায় ৩৪ শতাংশ। কলকাতা, চেন্নাই, মুম্বই হচ্ছে বাংলাদেশি রোগীদের প্রধান গন্তব্য।
সান নিউজ/এসএ