সান নিউজ ডেস্ক:
বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষার জন্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তিনটি থার্মাল স্ক্যানারের মধ্যে দুটিই বিকল ছিল। বাকি একটি দিয়ে কোন রকমে কাজ চালিয়ে আসা হলেও অবশেষে গতকাল (সোমবার) রাত থেকে এখন সেটিও বিকল হয়ে পড়েছে। ফলে সাধারণ যাত্রীদের করোনা শনাক্তে এখন ব্যবহার করা হচ্ছে হ্যান্ডহেল্ড ইনফারেড স্ক্যানার।
শাহজালাল বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেন, ‘রাতে থার্মাল স্ক্যানারটি বিকল হয়ে গেছে। মেশিনটি মেরামত করা যায় কিনা তা টেকনিশিয়ানরা পর্যবেক্ষণ করছেন। এ মুহূর্তে হ্যান্ডহেল্ড স্ক্যানার মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে।’
তবে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের দেহে ভাইরাস শনাক্তকরণে প্রাথমিকভাবে থার্মাল স্ক্যানার অতি প্রয়োজনীয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ যে কোন বন্দর থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রীর দেহে ভাইরাসের লক্ষণ হিসেবে জ্বরকে সনাক্ত করতে হ্যান্ড থার্মালের ব্যবহার অনেক সময় সাপেক্ষ। করোনা, জিকা, ইবোলা ও নিপাহসহ অনেক সংক্রামক ব্যাধির প্রাথমিক লক্ষণ জ্বর। এক্ষেত্রে কোনও স্পর্শ ছাড়াই থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে মানুষের শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয় করা যায়। কারও শরীরের তাপমাত্রা বেশি ধরা পড়লেই তিনি কোন্ ধরণের ভাইরাসে আক্রান্ত, তা জানার জন্য রয়েছে অন্যান্য পরীক্ষা।
কেবল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেই গড়ে প্রতিদিন ২০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করে থাকেন। ইবোলা সংক্রমণ শুরু হলে ২০১৪ সালের নভেম্বরে বিমানবন্দরে তিনটি থার্মাল স্ক্যানার মেশিন বসানো হয়। এগুলোর মধ্যে একটি ভিআইপি জোনে, বাকি দু’টি সাধারণ যাত্রীদের যাতায়াতের স্থানে রয়েছে। তাই এই আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরটিসহ দেশের আর কোন বিমান, স্থল বা নৌ-বন্দরে এই মুহুর্তে কোন থার্মাল স্ক্যানার না থাকায় বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের মাধ্যমে করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে জনমনে।
এদিকে দেশের সবগুলো বন্দরে থার্মাল স্ক্যানার বসাতে হাইকোর্টের নিদের্শনার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ৫ টি স্ক্যানার কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশজুড়ে নানা প্রস্তুতির কথা জানিয়ে জনগণকে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার কথা বলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তারপরও আস্থার সংকট রয়েছে সাধারন মানুষের মাঝে।
কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য কিট, পার্সোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট, হাসপাতালের প্রস্তুতিসহ নানা বিষয়েই প্রশ্ন, সংশয় তাদের মাঝে।
দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে করোনাভাইরাস সন্দেহে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিমান বন্দর থেকেও কয়েকজনকে পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে ।
মঙ্গলবার ভোরে একটি ফ্লাইটে সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরা এক দম্পতির মধ্যে শ্বাসকষ্টের লক্ষণ দেখা দেয়ায় তাদেরকে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে পাঠানো হয় কোয়ারেন্টিনে।একই ফ্লাইটে তাদের ছেলেও দেশে ফিরেছেন, যিনি সৌদি আরবে যাওয়ার আগে চীন ভ্রমণ করেছিলেন।
এর আগে সোমবার ইতালি থেকে ফেরা দুজন এবং সিঙ্গাপুর থেকে আসা একজনকে কোয়ারান্টিনে পাঠিয়েছিল বিমানবন্দর স্বাস্থ্য কেন্দ্র। তাদের দুজনের শ্বাসকষ্ট এবং একজনের শরীরে জ্বর ছিল।
এদিকে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার সাদুল্লাহপুর ইউনিয়নে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে ইতালি ফেরত এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ওই রোগীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি আলাদা ভবনে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
করোনা সন্দেহে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে এক নেপালি ছাত্রকে (১৯) ভর্তি করা হয়। পরে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
জামালপুরে মালয়েশিয়া ফেরত এক প্রবাসী নিজ বাড়িতে স্বাস্থ্য বিভাগের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। মেলান্দহ উপজেলার মালয়েশিয়া ফেরত ওই ব্যক্তিকে নিজ বাড়িতে পর্যবেক্ষণে রাখে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবেবিভিন্ন জেলার হাপাতালগুলোতে কোয়ারেন্টােইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বেনাপোল চেকপোস্টে সতর্কতা বাড়লেও থার্মাল স্ক্যানার মেশিনের বিকল মনিটরটি সংস্কার না করায় হ্যান্ডডিটেক্টর থার্মাল দিয়ে চলছে করোনা পরীক্ষা। যাত্রীদের তুলনায় এই সরঞ্জামেরও স্বল্পতা রয়েছে। এতে স্বাস্থ্যকর্মী ও যাত্রী উভয়কেই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
শুরু থেকেই কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রশ্নের সম্মুখে বাংলাদেশের প্রস্তুতি। সম্প্রতি তিন জনের দেহে করোনাভাইরাস ধরা পড়ায় এই শঙ্কা আরও বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চোখ কান খোলা আছে, সমস্যা হবে না। তবে দেশের মানুষ কতটা হোম কোয়ারেন্টাইনে অভ্যস্ত হবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বাংলাদেশের ঘনবসতিকে একটি বিরাট দুর্বলতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলেছেন, আরেকটি দুর্বলতা হচ্ছে, দেশের বাইরে রয়েছে আমাদের এক কোটি মানুষ। ১০২টা দেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিটি দেশে আমাদের লোক রয়েছে, তারা যদি করোনা ভাইরাস নিয়ে দেশে আসেন, তাহলে এই রোগের সংক্রমণ বাড়বে। তখন নিয়ন্ত্রণ করাও কষ্ট হবে।
সান নিউজ/সালি