আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিশ্ববাসী অধীর আগ্রহে করোনাভাইরাসের টিকার জন্য অপেক্ষা করছে। বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান করোনার টিকা উম্মুক্ত করনের পরীক্ষায় চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে। ব্রিটিশ ওষুধ কোম্পানী অ্যাস্ট্রাজেনেকার পরীক্ষামূলক টিকাটি করোনা টিকার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে।
বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সংস্থা ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে উৎপাদন ও বাজারজাত সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে ওষুদ কোম্পানীটি। গত অক্টোবর মাসে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, টিকাটি বৃদ্ধ, যুবক উভয় ক্ষেত্রেই প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা আশা করছে, তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তথ্য আসছে সপ্তাহে প্রকাশ করবে।
বাস্তবে এখনও পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণের যে উর্ধ্বগতি তাথেকে মুক্তির কোন উপায় এবং পরিত্রাণের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এখন অপেক্ষা শুধু মরণঘ্যাতি ভাইরাস থেকে বাঁচার পথ আবিস্কার করা। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, করোনার টিকা নিয়ে বেশ কিছু নতুন হালনাগাদ তথ্য পাওয়া গেছে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান টিকার ফলাফল জানিয়ে দিতে পারে।
গত বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগবিশেষজ্ঞ অ্যান্টনি ফাউসি বলেছেন, নিরাপদ ও কার্যকর করোনাভাইরাস টিকার প্রথম ডোজ সম্ভবত ডিসেম্বরের শেষের দিকে বা জানুয়ারির শুরুতে কিছু উচ্চ-ঝুঁকিযুক্ত মার্কিনরা পাবেন।
গত এপ্রিলে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার গবেষকেরা টিকাটি প্রস্তুত করেন। এরপর থেকে টিকাটি নিয়ে পরীক্ষা চলছে। শিগগির এটি নিয়ন্ত্রকদের কাছ থেকে অনুমোদন পেতে পারে। অক্সফোর্ডের টিকাটির পাশাপাশি ফাইজার ও বায়ো এন টেকের টিকার ফলাফলও শিগগির জানা যাবে। টিকাগুলোও এ বছরের মধ্যেই নিয়ন্ত্রকদের অনুমোদন পেয়ে যাবে বলে আশা করছেন এর উৎপাদনকারীরা।
এর আগে ৩ নভেম্বর মার্কিন নির্বাচনের আগেই টিকা আনার কথা বলেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। চলতি মাসেই কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তাদের টিকার ফল জানাতে পারে। করোনার টিকা নিয়ে আরেকটি সুখবর দিচ্ছে জার্মান প্রতিষ্ঠান কিওরভ্যাক। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, কিওরভ্যাকের পরীক্ষামূলক টিকাটি মানুষের শরীরে প্রতিরোধী সক্ষমতা দেখিয়েছে। সোমবার (২ নভেম্বর) জার্মান প্রতিষ্ঠানটি এ তথ্য জানিয়েছে। এ বছরেই টিকাটির পরীক্ষা শুরু করতে যাচ্ছে কিওরভ্যাক।
জার্মানির জৈবপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী ফ্রানজ-ওয়ার্নার হ্যাস এক বিবৃতিতে বলেছেন, টিকা পরীক্ষার প্রথম ধাপের অন্তর্বর্তীকালীন ফলাফল আমাদের উৎসাহ জোগাচ্ছে। তারা এমআরএনএ ভিত্তিক যে টিকাটি তৈরি করছে তার নাম সিভিএনকোভ। চলতি বছর শেষ হওয়ার আগেই ৩০ হাজার মানুষের ওপর পরীক্ষার পরিকল্পনা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
কিওরভ্যাকের টিকাটি তৈরিতে সহায়তা করছেন বিনিয়োগকারী দিমিতার হপ। তার সঙ্গে রয়েছে গেটস ফাউন্ডেশন ও গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন। টিকাটির পরীক্ষায় অংশ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবকদের ক্ষেত্রে যে পরিমাণ নিউট্রিলাইজিং অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে, তা রোগটি থেকে সুস্থ হওয়া ব্যক্তিদের অ্যান্টিবডির সমান।
রাশিয়ার করোনার টিকা নিয়েও সুখবর পাওয়া গেছে। রয়টার্স জানিয়েছে, ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি মাস নাগাদ রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি টিকাটির এক কোটি ডোজ নিচ্ছে আর্জেন্টিনা। দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে সোমবার এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। লাতিন আমেরিকার দেশটিতে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে।
আর্জেন্টিনা সরকার বলছে, আগামী মাসের শুরুতেই দুই ডোজের টিকাটি দেশে আসবে। আর্জেন্টিনার জন্য পাঠানো টিকাটি তৈরি হচ্ছে ভারত, কোরিয়া ও চীনে। আর্জেন্টিনার পাশাপাশি ব্রাজিলেও টিকাটি দেওয়ার জন্য প্রাথমিক নথিপত্র জমা দিয়েছে টিকায় অর্থায়ন করা রাশিয়ান ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (আরডিআইএফ)।
সান নিউজ/এসএ