নিজস্ব প্রতিবেদক : আগামী বছরের জন্য টিকার অপেক্ষা না করে, ডিসেম্বরের মধ্যেই করোনা ভাইরাসের যে সফল টিকা পাওয়া যাবে, সে টিকার সম্ভাবনা সামনে রেখেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফের সহায়তায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংরক্ষণ, পরিবহন ও অগ্রাধিকার নির্ধারণ, ক্রয়পদ্ধতি, টিকা প্রয়োগের কর্মী ও তাদের প্রশিক্ষণের জন্য বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গাইডলাইন তৈরির কাজ চলছে।
হঠাৎ করে টিকা ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রিক তৎপরতা বেড়ে গেছে সরকারের। মোট ৯টি দলে ভাগ হয়ে চলছে গাইডলাইন তৈরি ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনার কাজ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টিকাকেন্দ্রিক গাইডলাইন ধরেই এগোচ্ছে এই কার্যক্রম। নভেম্বর মাসের মধ্যেই সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি বা ইপিআই) ডা. সামসুল হক বলেন,‘এখন আর আমরা দেরিতে টিকা আসার বিষয়টি মাথায় রাখছি না। ডিসেম্বরে আসতে পারে, সেদিকে নজর রেখে নভেম্বরের মধ্যে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি শেষ করতে চাই। এ জন্য কাজ করা কমিটিগুলো তাদের পরামর্শ ও দিকনির্দেশনাগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। সেখান থেকে যাবে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে। যারা মাঠ পর্যায়ে টিকা প্রয়োগে কাজ করবেন তাদের করোনা টিকা প্রয়োগের দক্ষতামূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে কাজ চলছে বলে তিনি জানান।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গঠিত টিকা সমন্বয় উদ্যোগ বা কোভ্যাকসের শর্ত ও নীতিমালা অনুসারে, বাংলাদেশ মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ টিকা কোভ্যাকস থেকে পাবে। সেই হিসাবে ৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষের জন্য টিকা আসবে বাংলাদেশে। দুই ডোজের টিকা হলে লাগবে ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ। পুরোটা একবারেই আসবে না, আসবে কিস্তিতে কিস্তিতে। কোভ্যাকসের নির্ধারিত দাম অনুসারে প্রতি ডোজ টিকার জন্য দিতে হবে ১.৬ ডলার থেকে ২ ডলার পর্যন্ত।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, বিদেশ থেকে দুই প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই টিকা কেনার চিন্তা করছে সরকার। প্রচলিত সাধারণ ক্রয় প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে যেহেতু হাতে পেতে প্রায় তিন মাস চলে যায়, তাই প্রয়োজনে জরুরি বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা নিয়ে সরাসরি টিকা কেনার সুযোগ রাখা হচ্ছে। অন্যদিকে, সরকার নিজ উদ্যোগে সরাসরি দেশের বাইরের কোনো কোম্পানী থেকেও টিকা সংগ্রহ করতে পারবে। স্থানীয় কোনো কোম্পানী যদি টিকা এনে সরকারকে সরবরাহ করে, সেটারও পথ খোলা রাখা আছে।
টিকাকেন্দ্রিক প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই গতকাল শনিবার ( ৩১ অক্টোবর) সাভারের জিরাবোতে ইনসেপ্টা ভ্যাকসিন লিমিটেডের উৎপাদনকেন্দ্র পরিদর্শন করেন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান। এ সময় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. সালাউদ্দিন, ইনসেপ্টার চিফ অপারেটিং অফিসার মাহবুবুল করীম, ইনসেপ্টার সাইট হেড সেলিম বারামী ও ডিজিএম (প্রশাসন) জাহিদুল আলমসহ অন্যরা তাঁর সঙ্গে ছিলেন।
এ সময় মহাপরিচালক বলেন, ‘প্রতিবছর ১৮০ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে ইনসেপ্টার। এটি আমাদের সবার জন্য বড় সুখবর। সারাবিশ্বে যখন করোনা ভ্যাকসিনের বিপুল চাহিদা তৈরি হবে, তখন ওয়ার্ল্ড কমিউনিটি এই ফ্যাসিলিটিজ ব্যবহার করবে বলে আমরা আশাবাদী।’
উল্লেখ্য, ইনসেপ্টার সঙ্গে এরই মধ্যে চীনের সিনোভ্যাক কোম্পানীর সমঝোতা হয়েছে বাংলাদেশে তাদের টিকা উৎপাদনের জন্য।
সান নিউজ/এসএ