নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে কিনা তা নজরদারি করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটির। কিন্তু করোনা মহামারীর এই ক্রান্তিকালে একদমই নির্বিকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
দেশের এ সময়েই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি জবাবদিহি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখার কথা ছিল এই কমিটির। দেশে গত মার্চে করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে সর্বত্র আলোচনা-সমালোচনা চললেও সংসদীয় কমিটির নীরব থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
করোনা সংক্রমণের ৭ মাসে মাত্র একটি বৈঠক করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। সেটিও হয়েছে মার্চে। এরপর এখন পর্যন্ত আর কোনো বৈঠক হয়নি। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় মাস্ক, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী, চিকিৎসা সামগ্রী কেনাকাটায় দুর্নীতি ও অনিয়ম; করোনার পরীক্ষায় অনিয়মের একাধিক ঘটনা গণমাধ্যমে এসেছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ ধরনের অভিযোগে দুটি মামলা করেছে। আরও দুটি মামলা করার প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু স্বাস্থ্যের সংসদীয় কমিটিতে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করার সুযোগও তৈরি হয়নি। কারণ, কোনো বৈঠকই হয়নি।
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, গত ২৪ মার্চ সর্বশেষ বৈঠক করেছিল স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। ওই বৈঠকে করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী (পিপিই)আইসোলেশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা এবং হাসপাতালগুলোতে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) সুবিধা কতটা রয়েছে, তা দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল। করোনাকালে এটুকুই ছিল এ কমিটির ভূমিকা।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।এর নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান সান নিউজকে বলেন, এ বছর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি। সংসদীয় কমিটি কি যারা দুর্নীতি করছে তাদের সুরক্ষা দিতে চায়, নাকি কিছু করার সাহস পাচ্ছে না। নাকি এখানে নিজেদের (সংসদীয় কমিটি) স্বার্থ জড়িত?
করোনাকালে ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত সরকারি ছুটি থাকলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ বন্ধ ছিল না। চলতি বছরের ৯ মাসে মোট দুটি বৈঠক করেছে এ কমিটি। আগের বছরে করেছিল (১০ মাসে) মাত্র চারটি বৈঠক। এ কমিটির সভাপতি সাংসদ শেখ ফজলুল করিম সেলিম।
কার্যপ্রণালিবিধি অনুযায়ী, কমিটির বৈঠকের সময় ও তারিখ নির্ধারণ করেন কমিটির সভাপতি। কেন দীর্ঘদিন সভা করা হচ্ছে না, তা জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করেও শেখ ফজলুল করিমের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে কমিটির সদস্য মুহিবুর রহমান বলেন, ২৪ মার্চের বৈঠকে তাঁরা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে বেশ কিছু নির্দেশনা ও সুপারিশ করেছিলেন।
এর আগেও কয়েকটি বৈঠকে এ সংক্রান্ত আলোচনা হয়েছিল। মার্চের পর করোনার কারণে বৈঠক করা যায়নি। তবে জুন থেকে নিয়মিত বৈঠক করতে পারলে ভালো হতো। তিনি মনে করেন, বৈঠক করা গেলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে কিছু সহায়তা করা যেত। এই কঠিন সময়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে উপদেশ, পরামর্শ দিয়ে যে ভূমিকা পালন করার ছিল, তা তাঁরা করতে পারেননি বলে তিনি স্বীকার করেন।
সান নিউজ/এসকে