মেহেদী হাসান : সারা পৃথিবীতে চলছে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে এর ভ্যাকসিন আবিস্কারের তোড়জোড়। দেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এই ভ্যাকসিন আবিস্কারে কাজ করলেও উন্নত বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যেই তাদের পূর্ণাঙ্গ ট্রায়াল শেষ করেছে। বাংলাদেশ সরকার সেই সকল দেশের সাথে ইতিমধ্যেই সেই ভ্যাকসিন আমদানি নিয়ে কথা বলছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশে কারা আগে পাবে এই ভ্যাকসিন?
সারাদেশে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সামনে থেকে প্রধান ভূমিকা পালন করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। জাতির এই ক্রান্তিকালে বীর যোদ্ধারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন যেন পুরো জাতি নিরাপদে থাকতে পারে। তাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারসহ বিভিন্ন সংস্থা নিয়মিত সাহায্য করে যাচ্ছে। তাদের এই মহান আত্মত্যাগের কথা চিন্তা করেই বাংলাদেশে করোনার ভ্যাকসিন এলে সবার আগে স্বাস্থ্যকর্মীদের তা দেয়া হতে পারে। এরপর পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ যারা জনগনের সেবায় সরাসরি সম্পৃক্ত তাদের দেয়া হবে।
এ বিষয়ে সরকারের কাছে একটি নীতিমালা দাখিল করেছে করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটি, জানিয়েছেন কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। নীতিমালায় করোনার ভ্যাকসিন সংরক্ষণ, পরিবহণ ও বিতরণ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বিস্তারিত পরামর্শ দেয়া হয়েছে৷
তিনি বলেন, ‘‘ভ্যাকসিন আনলেই হবে না, এর ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ কাদের প্রথম দেয়া হবে, কারা দিবেন, সংরক্ষণ ও পরিবহন কীভাবে করা হবে সেগুলো পরিকল্পনায় থাকা জরুরি৷’’
টেকনিক্যাল কমিটির দেয়া পরামর্শ অনুযায়ী, সবার আগে ভ্যাকসিন পাবেন করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিতরা। তারপর পাবেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সরকারি কর্মকর্তা যারা মানুষের সরাসরি সংস্পর্শে কাজ করেন। এরপর যেসব শিশু দীর্ঘ সময় বাড়িতে আছে তাদের দেয়া হবে। তারপর অগ্রাধিকার পাবেন ৬৫ বছরের উপরে যাদের বয়স সে-সমস্ত নাগরিক। পর্যায়ক্রমে বাকিরাও টিকার আওতায় আসবেন।
সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বাংলাদেশের ৮০ ভাগ মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে হবে। সেই হিসেবে দেশে ১২-১৩ কোটি ভ্যাকসিন লাগবে। তবে এক সাথে এত ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে না বলে আশংকা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে জানা গেছে ইতিমধ্যেই ভ্যাকসিনের জন্য এক হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল এরইমধ্যে সরকার গঠন করেছে। ভ্যাকসিন কিনতে খরচ হতে পারে আট হাজার কোটি টাকা। করোনার জন্য বাজেটে ১০ হাজার কোটি টাকার একটি ফান্ড আলাদা রাখা হয়েছে।প্রয়োজনে সেখান থেকেও টাকা কাজে লাগানো হবে। সেই সঙ্গে মোট জনসংখ্যার ২০ শতাশের জন্য ভ্যাকসিন বিনামূল্যে পাওয়া যাবে বলেও আশা করছে সরকার।
উল্লেখ্য, গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২১৫টি দেশে ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে কোভিড-১৯। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত ৮ মার্চ, তা সাড়ে তিন লাখ পেরিয়ে যায় ২১ সেপ্টেম্বর। এর মধ্যে গত ২ জুলাই ৪ হাজার ১৯ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়, যা এক দিনের সর্বোচ্চ শনাক্ত।
সান নিউজ/বিএম/এস