আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
সারা বিশ্বের অত্যাধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান ও বিলিয়ন ডলার রিসার্চ, কোন কিছুতেই যেন রাস টেনে ধরা যাচ্ছে না প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের। সারা বিশ্বে ক্রমশই বেড়ে চলেছে এর তাণ্ডব। চীনে প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে বিশ্বজুড়ে করোনায় প্রাণহানির সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে মৃত্যু ১০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে ফরাসী বার্তাসংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
করোনাভাইরাসের বিস্তারের গতি ধীর করতে গত এপ্রিলে মানবজাতির অর্ধেক অর্থাৎ প্রায় ৪০০ কোটি মানুষ লকডাউনের বেড়াজালে আটকা পড়েন। লকডাউনের বিধি-নিষেধ শিথিল কিংবা প্রত্যাহার করে নেয়ার পর বিশ্বজুড়ে আবারও এই ভাইরাসের প্রকোপ বেড়েছে, বেড়েছে প্রাণহানিও।
সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ফরাসী বার্তাসংস্থা এএফপির এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, রোববার আন্তর্জাতিক সময় রাত সাড়ে ১০টায় বিশ্বজুড়ে করোনায় প্রাণহানির সংখ্যা ১০ লাখ ৯ জনে পৌঁছায়। এছাড়া এই সময়ে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩ কোটি ৩০ লাখ ১৮ হাজার ৮৭৭ জনে দাঁড়ায়।
বিশ্বে এখন পর্যন্ত করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ যুক্তরাষ্ট্র; দেশটিতে করোনার সংক্রমণ দ্রুতগতিতে আবারও বাড়তে শুরু করেছে। রোববার জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৭০ লাখ ৭৮ হাজার ছাড়িয়েছে। এতে মারা গেছেন ২ লাখ ৯ হাজারের বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের পর করোনায় প্রাণহানির শীর্ষে আছে ব্রাজিল (১ লাখ ৪১ হাজার ৭৭৬ জন), ভারত (৯৫ হাজার ৫৭৪ জন), মেক্সিকো (৭৬ হাজার ৪৩০ জন) ও ব্রিটেন (৪৬ হাজার ৭০৬ জন)।
করোনাভাইরাসের তাণ্ডব বিশ্বজুড়ে অব্যাহত থাকলেও বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত এর কোনও ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে পারেননি। জীবন-জীবিকার মাঝে ভারসাম্য আনতে বিশ্বজুড়ে বিধি-নিষেধে শিথিলতা আনতে বাধ্য হচ্ছে সরকার।
করোনার প্রথম ধাক্কায় বিপর্যস্ত ইউরোপে দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে শুরু করেছে। করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্যারিস, লন্ডন ও মাদ্রিদের মতো বেশ কিছু শহরে নতুন করে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। যেভাবে এসব শহরে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে তাতে হাসপাতালে চিকিৎসাব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে বলেও সতর্ক করে দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ের দিকে বিশ্বজুড়ে করোনার রেকর্ড সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ঐক্যবদ্ধভাবে মহামারি মোকাবিলার কৌশল না নেয়া হলে বিশ্বজুড়ে ভ্যাকসিন আসার আগেই প্রাণহানির সংখ্যা ২০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথমবারের মতো সার্স-কোভ-২ ভাইরাস শনাক্ত হয়। প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রস্থল উহান থেকে বিশ্বের দুই শতাধিক দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। তবে এর উৎপত্তি নিয়ে এখনও অস্পষ্টতা থাকলেও অনেক বিজ্ঞানী বলছেন, বাদুড়ের শরীর থেকে অন্য কোনও স্তন্যপায়ী প্রাণী হয়ে মানুষের দেহে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে।
উহানে এই ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর জানুয়ারিতে কঠোর লকডাউন জারি করা হয়। গত ১১ মার্চ বিশ্বের শতাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়ার পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাস মহামারি ঘোষণা করে।
সান নিউজ/ বিএম