নিজস্ব প্রতিনিধি:
মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী শেরপুর জেলার সেই ‘ভিক্ষুক’কে পুরস্কৃত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নির্দেশে ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিনকে সরকারের পক্ষ থেকে জমি দেওয়া হয়েছে এবং সেই জমিতে বাড়ি করেও দেওয়া হয়েছে। আজ রবিবার (১৬ আগস্ট) তিনি নতুন বাড়িতে উঠবেন।
হতদরিদ্র ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিন তার ভাঙা ঘর ঠিক করার জন্য একটু একটু করে টাকা জমিয়েছিলেন। আশা ছিল বৃষ্টি এলেই ঘরের যেসব ফুটো দিয়ে পানি পড়ে সেগুলো অন্তত সারিয়ে তুলবেন। জমতে জমতে সেই টাকা দশ হাজার হয়ে যায়। কিন্তু দেশে আসলো করোনা। সাধারণ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়তে শুরু করলো। কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকে খাবারের কষ্টেও পড়লো। সরকার ত্রাণসহ নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা শুরু করে। মানুষের এহেন কষ্ট দেখে জমানো ১০ হাজার টাকা সরকারের ত্রাণ তহবিলে দান করে দেন নাজিম উদ্দিন।
সরকারের ত্রাণ তহবিলে হতদরিদ্র ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিনের দানের খবরটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আসে। তিনি ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিনের উদারতায় খুশি হয়ে নিজের তহবিল থেকে উপহার হিসেবে জমি, ঘর এবং দোকান করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। যা ইতোমধ্যে প্রস্তুত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের আধুনিক পাকা বাড়িতে উঠবেন তিনি। নতুন ঘরের চাবি তুলে দেওয়া হবে তার হাতে।
নাজিম উদ্দিন যে ঘরটিতে এতদিন ছিলেন সেটি মূলত সরকারের খাস জমিতে ছিল। এটি ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিনও জানতেন না। সরকারের এই খাস জমিটিও ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিনের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নাজিম উদ্দিন যে ঘরে থাকতেন সেই জমি কিছুটা সম্প্রসারণ করে ১৫ শতাংশ জমি তার নামে বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।
পাশাপাশি নাজিম উদ্দিনকে যাতে আর কখনও ভিক্ষা করতে না হয় সেজন্য তাকে একটি দোকানও করে দিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় হতদরিদ্র ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিনের চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে এবং ইতোমধ্যে তার অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসাও করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার উপহার পেয়ে খুশি শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গান্ধীগাঁও গ্রামের মৃত ইয়ার উদ্দিনের ছেলে নাজিম উদ্দিন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘নতুন ঘর রেডি হইছে। জেলা প্রশাসক এসে ঘরে তুলে দেবেন।’ ঘর পছন্দ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘খুশি লাগছে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু ও মঙ্গল কামনা করে তিনি বলেন, ‘এ রকম প্রধানমন্ত্রী আমার ৮২ বছর বয়সে আর কহনো দেহি নাইকা। মনে করেন আমি তো করোনার জন্য ট্যাহাডা দিছি। সেখানে খুশি হইয়া প্রধানমন্ত্রী আমাকে যে উপহার দিছে, খুব আমি খুশি হইছি। ঘরবাড়ি সব দিলো। আমি আর কোনও কিছু চাই না। আমি দোয়া করি আল্লাহ তারে (প্রধানমন্ত্রী) দীর্ঘদিন বাঁচায়ে রাখুক। যতদিন বেঁচে থাকে ততদিন আল্লাহ তারে আজত্ব (দেশ শাসন) করার সুযোগ দিক।’ নাজিম উদ্দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সামনে থেকে দেখার ইচ্ছাও প্রকাশ করেন।
শেরপুর জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব বলেন, প্রধানমন্ত্রী খুশি হয়ে তাকে (ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিন) একটা বাড়ি উপহার দিয়েছেন। বাসার চাবি আমরা হস্তান্তর করবো আজ। ওনাকে আমরা নতুন ঘরে তুলে দেবো।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার একাধিক বক্তব্যে নাজিম উদ্দিনের দানের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তার প্রশংসা করেন।