বনিক কুমার, গোপালগঞ্জ থেকে:
পদ্মকে জলজ ফুলের রানী বলা হয়। প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া এই পদ্ম ফুল সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে গোপালগঞ্জের অসংখ্য বিলের চিত্র। দূর থেকে মনে হয় যেন, ফুলের বিছানা পেতে রেখেছে কেউ। প্রতিদিনই এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসছেন দর্শনার্থীরা। বর্যাকালে কোনো কাজ না থাকায় পদ্ম ফুল তুলে বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন স্থানীয় দরিদ্র মানুষেরাও।
সদর উপজেলার বলাকইড় বিল। ১৯৮৮ সালে বন্যার পর থেকে বর্ষাকালে এ বিলের অধিকাংশ জমিতেই প্রাকৃতিকভাবে পদ্মফুল জন্মে থাকে। দু’চোখ যতো দূরে যায়, শুধু পদ্ম আর পদ্ম। আর এ কারণে এখন এ বিলটি পদ্মবিল নামেই পরিচিত হয়ে উঠেছে।
গোপালগঞ্জ জেলা শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরের এ পদ্মবিলের চারপাশে এখন শুধুই পদ্ম আর পদ্ম। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে গোলাপী ও সাদা রং এর পদ্ম দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। এমন অপরূপ দৃশ্য যেন ভ্রমণপিপাসুদের হাতছানি দিচ্ছে। এ বিলের সৌন্দর্য ও পদ্ম দেখতে প্রতিদিনই বন্ধু-বান্ধব ও পরিবার-পরিজন নিয়ে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। তারা নৌকায় ঘুরে সৌন্দর্য উপভোগ করছেন।
শুধু সৌন্দর্যই নয়, এ বিলে জন্ম নেওয়া পদ্ম ফুল দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে শত শত দরিদ্র পরিবার। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজায় পদ্ম ফুলের চাহিদা থাকায় ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত বিল থেকে পদ্ম ফুল তুলে বাজারে বিক্রি করছেন তারা। বিল এলাকায় মূল্য কম থাকলেও শহরে এক একটি ফুল ১০ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। এ বিলের পদ্ম ফুল ঢাকা, খুলনা, মাদারীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রির জন্য নিয়েও যাচ্ছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয়রা জানান, বর্যা মৌসুমে কোনো কাজ না থাকায় আয়েরও একটা পথ হয়েছে।
শুক্রবার (৬ আগস্ট) সকালে গোপালগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এস এস মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের (এসএসসি ৯৪ ব্যাচের ) একদল (বন্ধু) শিক্ষার্থী এই বিলে আসেন পদ্ম ফুল দেখতে। তারা সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত পুরো বিল ঘুরে দেখেন। স্থানীয়রাও ভ্রমণপিপাসু দলটিকে সার্বিক সহযোগিতা করেন।
পদ্মবিল আর ফুল দেখতে আসা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ব্যবসায়িক কারণে ঢাকা থাকি। করোনার কারনে এতোদিন ঢাকায় অনেকটা বন্দি অবস্থায় ছিলাম। এখন বর্ষাকাল, বলাকইড় বিলে পদ্ম ফুল ফুটেছে। তাই বন্ধুদের সঙ্গে এই বিলে এসেছি। খুব ভালো লাগলো এই সৌন্দর্য দেখে।’
দলের অন্য সদস্য পবিত্র কুমার বিশ্বাস, খালিদুল আমিন, শিমুল হক, মোহসিন উদ্দিন সিকদার, ইলতুত মিশ, মোহাম্মদ কাজী ফয়সাল, শেখ মাহাবুবুল ইসলাম, নয়ন বিশ্বাস, জিয়াউল কবির বিপ্লব, বাইনুল আলম সবুজ, সঞ্জয় ওঝা, ফিদা হাসান, লেলিনসহ বেশ কয়েকজন বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে এ বিলে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া পদ্ম ফুল বিলের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে । এই সৌন্দর্য দেখে আমরা মুগ্ধ । এই পদ্ম এলাকাটি সরকারের রক্ষণাবেক্ষণ করা উচিৎ। যেন ভ্রমণপিপাসুরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার মতো জায়গা খুঁজে পান এবং নতুন প্রজম্মকে প্রকৃতিপ্রেমী করে গড়ে তুলতে পারেন।’
সান নিউজ/ এআর