সৈয়দ মেহেদী হাসান, ঝালকাঠি থেকে ফিরে:
ছোটবেলায় ফুটবলের নেশায় পেয়ে বসে। ফুটবল খেলে কিছু হতে হবে সেজন্য নয়, শুধুই ভালোবাসা থেকে চর্চা শুরু। শুরুতে ঘরের সামনের মাঠে ফুটবল খেলে কাটতো অবসর। ধীরে ধীরে পরিণত হয় তা অভ্যাসে। আর এখন ফুটবল ছাড়া চলতেই পারেন না। পরিবারের চার ছেলের মধ্যে সবার ছোট আশিকুর রহমান জুবায়ের। তার ফুটবল প্রেম বিশেষ গুরুত্বও পায়নি পরিবারে। কথাগুলো বলছিলেন জুবায়ের। আবেগ ও উৎসাহে নিজেকে ধরে রাখতে পারছিলেন না তিনি।
আর গত ৩০ জুলাই দুপুরের পর থেকে জুবায়ের ফুটবল প্রেম আলোচিত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। কারণ, ওইদিন নদী বেষ্টিত ঝালকাঠি জেলা শহরের মসজিদ বাড়ি রােডের বাসিন্দা ঠিকাদার জালাল আহম্মেদের বাড়িতে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস থেকে চিঠি আসে। সেখানে জালাল আহম্মেদের ছেলে আশিকুর রহমান জুবায়েরের বিশ্বজয়ের স্বীকৃতিপত্র।
চিঠিতে লেখা, নেক থ্রো অ্যান্ড ক্যাচেস ক্যাটাগরিতে মিনিটে ৬৫ বার বল নিক্ষেপ ও ধরে ফেলে বিশ্ব রেকর্ড ভেঙেছেন বাংলাদেশের জুবায়ের। তারপর থেকেই অভিনন্দন বার্তায় ভাসছেন তিনি।
বুধবার (৫ আগস্ট) দুপুরে ঝালকাঠি অফিসার্স অ্যান্ড এলিট ক্লাব মাঠে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করছিলেন জুবায়ের। দক্ষিণাঞ্চলের অক্সফোর্ডখ্যাত সরকারি ব্রজমোহন কলেজের ম্যানেজমেন্ট বিভাগে অনার্স চতুর্থ বর্ষের ছাত্র তিনি। স্বপ্ন দেখেন, আরও বিশ্ব রেকর্ড গড়ার।
‘ফুটবল খেলা ও ফুটবল নিয়ে কসরত আলাদা বিষয়। তার ফুটবল তারকা বা অনুপ্রেরণা হলেন ফুটবল ওয়াল্ডের সুপারস্টার রোনালদিনহো। তার খেলা দেখে ফুটবলের প্রেমে পড়েন। তবে পুরোপুরি নিমজ্জিত হয়েছেন ফুটবলের ফ্রি স্টাইল কসরতে। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৫ নভেম্বর জার্মানির মার্কেল গুর্ক (Marcel Gurk) যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে নেক থ্রো অ্যান্ড ক্যাচেস ক্যাটাগরিতে মিনিটে ৬২ বার বল নিক্ষেপ ও ধরে ফেলে বিশ্ব রেকর্ড গড়েন। তার রেকর্ড আমি ভেঙে ফেলি এ বছর’- বলছিলেন আশিকুর রহমান জুবায়ের।
তিনি আরও বলেন, আমি মিনিটে ৬৫ বার নেক থ্রো অ্যান্ড ক্যাচেসে সফল হই।
গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস চেষ্টাসাধ্য কঠিন বিষয়। এজন্য নিয়মিত পরিশ্রম ও একনিষ্ঠ মনোযোগ দরকার। নিরাশ হলে সম্ভব না। তিনি আশা করেন, নতুন নতুন ইভেন্টে বাংলাদেশের মানুষ বিশ্ব রেকর্ড গড়বেন। তাতে শুধু ব্যক্তি সুনাম নয়, দেশের নাম ছড়িয়ে পড়বে সারা বিশ্বে।
জুবায়ের বলেন, ‘আমি চাই আমার রেকর্ডটি নতুন কেউ ভাঙুক। তাতে করে দেশের ফুটবল সর্ম্পকে মানুষের আগ্রহ বাড়বে।’
ঝালকাঠি শহরের সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম জুবায়ের লেখাপড়ায়ও সমান পরদর্শী। ২০১৪ সালে তিনি সরকারি ঝালকাঠি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ব্যবসা শিক্ষা শাখায় জিপিএ-৫ পেয়ে মাধ্যমিক স্তর পর করেন। এরপর ভর্তি হন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে। সেখান থেকে ২০১৬ সালে ৪.২৫ জিপিএ পেয়ে এইসএসসি পাস করেন। তারপর ভর্তি হন সরকারি ব্রজমোহন কলেজে।
জীবনের লক্ষ্য হিসেবে এখনো কোথাও থিতু হওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। তবে ভাবছেন, বহুজাতিক কােম্পানিতে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তুলবেন।
সান নিউজ/ এআর