বনিক কুমার, গোপালগঞ্জ থেকে:
দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে গোপালগঞ্জ, নড়াইল, খুলনা, যশোর, বেনাপোলসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের প্রাণের কালনা সেতুর নির্মাণকাজ। গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার কালনায় মধুমতি নদীতে হচ্ছে দেশের প্রথম ছয়লেনের এই সেতু। ইতোমধ্যে ৩৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে, ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে সেতুর মূল অবকাঠামো।
কালনা সেতুর সহকারী প্রকল্প পরিচালক, সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সৈয়দ গিয়াস উদ্দিন জানান, ৬৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ২৭ দশমিক ১ মিটার প্রস্থের ছয়লেনের এ সেতু হবে এশিয়ান হাইওয়ের অংশ। চারটি মূল লেনে দ্রুতগতির এবং দুটি লেনে কমগতির যানবাহন চলাচল করবে। উভয় পাশের অ্যাপ্রোচ সড়ক হবে ৪ দশমিক ৩০ কিলোমিটার। সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৯৬০ কোটি টাকা। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন এজেন্সির (জাইকা) সহায়তায় দেশি অর্থায়নে জাপানের টেককেন কর্পোরেশন, ওয়াইবিসি ও বাংলাদেশের আব্দুল মোনেম লিমিটেড যৌথভাবে এই সেতুর নির্মাণকাজ করছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি এই সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও আর ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। আগামী ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
এটির নির্মাণ সম্পন্ন হলে বেনাপোল-ঢাকা মহাসড়কটি দিয়ে বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে ঢাকার দূরত্ব কমে আসবে। বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে বেনাপোল-ঢাকা মহাসড়ক পথে আমদানি-রপ্তানি পণ্য সরাসরি পদ্মাসেতু হয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অল্প খরচে পরিবহনের সুবিধা পাবেন ব্যবসায়ীরা। যাত্রীরাও কোনো ভোগান্তি ছাড়াই যাতায়াত করতে পারবেন। ফলে পাল্টে যাবে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনমান। সেতুটির মাধ্যমে তাই মানুষের দীর্ঘ বছরের স্বপ্নপূরণ হতে চলেছে।
এই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দুঃখ-দুর্দশা দূর করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি পূরণের আরো এক ধাপও এই সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। আর তাইতো এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে।
শুধু কালনাতেই নয়, এ ব্রিজের স্টিল ফ্রেমের কাজ চলছে সুদুর ভিয়েতনামে। প্রতিদিন তিন শতাধিক শ্রমিকসহ অসংখ্য প্রকৌশলী নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
কালনা ফেরি পার হওয়া ট্রাকচালক কামাল মোল্লা ও খোকন ফলিয়া বলেন, ‘কালনা ফেরিঘাট এ এলাকার গুরুত্বপূর্ণ ঘাট। বেনাপোল, যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাতায়াতের শটকার্ট রাস্তা এটি। এই পথ দিয়ে প্রায়ই আমাদের যাতায়াত করতে হয়। এই ঘাটে ফেরির অবস্থা তেমন একটা ভালো নয়। পারাপারের সময় ভিড় লেগেই থাকে। প্রায়ই ঘাটে এসে বসে থাকতে হয়। এখানে সরকার ব্রিজ তৈরি করছে, তাতে আমরা খুবই খুশি।’
শংকরপাশা গ্রামের ব্যবসায়ী মশিউর রহমান, মুকসুদপুর উপজেলার সরদার মুজিবুর রহমান ও লক্ষীপাশা গ্রামের শেফালী বেগম বলেন, ‘কালনা ঘাটে এসে কখনো নৌকা আবার কখনো ফেরিতে পারাপার হতে হয়। তাতে অনেক সময় লাগে। ব্রিজ হলে ঘাটে এসে আর বসে থাকতে হবে না। আমরা চাই, শিগগিরই এটি তৈরি শেষ হোক।’
শংকরপাশা গ্রামের মঞ্জুরুল আলম, আঞ্জুরুল ইসলাম, মো. খবির উদ্দিন শেখ, মাসুদ রানা, আলামীন শেখ, মো. নাসির মোল্লা ও আসাদ শেখ, রাতইল গ্রামের আক্কাস মুন্সী, খানজাহান আলী পরিবহনের চালক ইদ্রিস আলীসহ বেশ কয়েকজন বলেন, ‘কালনা সেতু আমাদের স্বপ্নের সেতু। নির্মাণকাজ শুরু হওয়ায় আমরা আনন্দিত। এজন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। ব্রিজটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই নির্মাণে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
কাশিয়ানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেন, সেতুটি নির্মিত হলে গোপালগঞ্জ, নড়াইল, খুলনা ও যশোর অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ বছরের স্বপ্ন পূরণ হবে। এই রাস্তায় চলাচলকারী লাখ লাখ যাত্রীর ঢাকায় যাতায়াত সহজ হবে। সেই সঙ্গে দীর্ঘ বছরের অসহনীয় দুঃখ-দুর্দশা থেকে রেহাই পাবেন এই ঘাট দিয়ে চলাচলকারীরা। তাদের আর ঘন্টার পর ঘন্টা ফেরিঘাটে বসে থাকতে হবে না।
কালনা ফেরিঘাটের ইজারাদার মঞ্জুর হাসান মোবাইল ফোনে বলেন, আর বেশিদিন যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হবে না। খুব তাড়াতাড়ি তারা এই সেতু পার হয়ে এবং পদ্মাসেতু দিয়ে রাজধানীতে স্বল্প সময়ের মধ্যে যেতে পারবেন।
সান নিউজ/ এআর