দেবু মল্লিক, যশোর থেকে:
কেশবপুর উপজেলার কড়িয়াখালী গ্রামের কবির হোসেন একজন ক্ষুদ্র পোল্ট্রি খামারি। করোনাকালের শুরুতে তার খামারে ৫০০ মুরগি ছিল। পরিবহন সংকট আর ‘গুজবে’ ১১০ টাকায় উৎপাদিত মুরগি ৪০ টাকা কেজিদরে বিক্রি করতে বাধ্য হন তিনি। ফলে এক চালানেই তার ক্ষতি হয় ৮০ হাজার টাকা। এখন মূলধন হারিয়ে রীতিমতো সর্বশান্ত।
শুধু কড়িয়াখালীর কবির হোসেনই নন, যশোর জেলার অন্তত চার হাজার ছোট পোল্ট্রি খামারির একই অবস্থা।
তবে এখন পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতিতে নতুন করে ব্যবসা শুরুর চেষ্টা করছেন তারা। ক্ষুদ্র খামারিদের পাশে আছে সরকারও। তাদের জন্য ব্যাংকঋণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
জেলার ভারপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শফিউল আলম বলেন, ‘করোনার শুরুতে পরিবহন সংকটে পোল্ট্রি পরিবহনে বেশ সমস্যা তৈরি হয়। আমরা সরকারি নির্দেশনা অনুসারে খামারিদের পাশে ছিলাম। তবে এখন পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। খামারিরা ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন। আমরা তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি।’
তবে ক্ষুদ্র খামারিরা বলছেন, ‘মুরগির বাচ্চার সিন্ডিকেট’ভেঙে দিয়ে ও ব্যাংকঋণ পেতে নানা জটিলতা দূর করা গেলে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন তারা।
ছয়মাস আগেও যশোরে ছোট-বড় ছয় হাজারের মতো পোল্ট্রি খামার ছিল। কিন্তু করোনার কারণে এখন তার অধিকাংশই বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে হাজার হাজার যুবক যেমন বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন, তেমনি মাংস ও ডিমের উৎপাদনও গেছে কমে।
মণিরামপুর উপজেলার চালুয়াহাটী গ্রামের ইসরাফিল হোসেন বলেন, ‘আমার খামারে তিন হাজার মুরগি ছিল। কিন্তু পোল্ট্রি মুরগি খেলে করোনা হবে ‘গুজবে’ দাম কমে যায়। আমার প্রতি কেজিতে উৎপাদন খরচ ছিল ১২০ টাকা। কিন্তু সেই মুরগি বাধ্য হয়ে ৪০ টাকা কেজিদরে বিক্রি করে দেই। ফলে আমার ক্ষতি হয় চার লাখ ২০ হাজার টাকার মতো। বাকিতে মুরগির বাচ্চা ও খাবার কিনেছিলাম। সেই টাকাও এখন পরিশোধ করতে পারছি না। দেনার দায়ে এখন পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে।’
একই গ্রামের মাহফুজুর রহমানও জানান, পোল্ট্রির ব্যবসা করতে গিয়ে তিনি বেশ ধরা খেয়েছেন।
তবে বর্তমানে পোল্ট্রি মুরগির মাংসের চাহিদা ও দাম বেড়েছে। যশোরের বাজারে ১২০ টাকার পোল্ট্রি মুরগি ১৭০ টাকায় এবং ১৫০ টাকার সোনালী মুরগি এখন পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকায়। এজন্য মূলধন হারানো ছোট ছোট খামারিরা আবারও ব্যবসা শুরু করতে চাইলেও যোগানের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই।
ক্ষুদ্র খামারিরা বলছেন, নতুন করে ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘বাচ্চা মুরগির সিন্ডিকেট’। মাংসের দাম বেড়ে যাওয়ায় বড় বড় কয়েকটি হ্যাচারির মালিক সিন্ডিকেট করে বাচ্চার দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। বিশেষ করে আফিল হ্যাচারি, কাজী ফার্মসসহ কয়েকটি হ্যাচারি মিলে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। হঠাৎ করেই বাচ্চাপ্রতি ২০ থেকে ২৫ টাকা বাড়িয়ে আগের ২৫ থেকে ৩০ টাকার বাচ্চা ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করছে। এছাড়া সরকারিভাবে ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও ব্যাংকারদের প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতার কারণে ঋণ পাচ্ছেন না তারা।
কড়িয়াখালীর কবির হোসেন বলেন, ‘খামারের আয় দিয়ে আমার সংসার চলে। তাই ক্ষতি হলেও আবারও খামারে মুরগি উঠাতে চাইছি। কিন্তু বাচ্চার দামে সমস্যা হচ্ছে। সরকার আমাদের কোনো প্রণোদনা দেয়নি। তবে ঋণ পাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই ঋণ পেতেও ব্যাংক কর্মকর্তারা নানাভাবে হয়রানি করছেন। তাই এখন কী করবো বুঝতে পারছি না।’
সরকারের কাছে এই সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য দূর ও সহজ শর্তে ব্যাংকঋণের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন ক্ষুদ্র খামারিরা।
সান নিউজ/ এআর