নিউজ ডেস্ক: পরিবেশ দূষণের জন্য প্লাস্টিকের যথেচ্ছ ব্যবহার অনেকাংশেই দায়ী। প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে স্থাপত্য সৃষ্টি করে সে বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন এক চেক শিল্পী। প্লাস্টিকের এমন বিকল্প ব্যবহারও পরিবেশের জন্য উপকারী।
অতীতের জঞ্জাল ভবিষ্যতের শিল্পকীর্তি হয়ে উঠছে। ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের বোতল রিসাইক্লিংয়ের দৌলতে ভাস্কর্যে পরিণত হচ্ছে। এই উদ্যোগের পেছনে রয়েছেন চেক প্রজাতন্ত্রের শিল্পী ভেরোনিকা রিশত্রোভা। ২০০৪ সাল থেকে তিনি এমন সৃষ্টি করে চলেছেন।
ভেরোনিকা প্রাগের কাছে বুশটিয়েরাট শহরে বাস করেন। প্রাগ ও প্যারিসে তিনি শিল্পকলা, স্থাপত্য ও ডিজাইন নিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন। ফ্রান্সে তিনি মূলত পুরানো ধাতু নিয়ে কাজ করেছেন। স্থাপত্যের উপকরণ হিসেবে প্লাস্টিক ব্যবহারের কোনো পরিকল্পনা ছিল না।
ভেরোনিকা বলেন, ‘‘সেটা ছিল কাকতালীয় ঘটনা৷ জানি না, কাকতালীয় ছিল না উপর থেকে যেন আমার কাছে নির্দেশ এসেছিল। একবার গরম বাতাস নিয়ে কাজ করছিলাম এবং পানীয় শেষ করার পর বোতলটি গরম করছিলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে স্থাপত্যের জন্য এই উপকরণ ব্যবহারের আইডিয়া এসেছিল। সবাই বলেছিলো, তুমি কি পাগল! এ তো জঞ্জাল!''
পলিইথিলিন টেরেফথালেট দিয়ে পেট বোতল তৈরি করা হয়। পেট্রোলিয়াম দিয়ে তৈরি বলে প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। প্লাস্টিকের ক্ষয় হতে দীর্ঘ সময় লাগে।
তথাকথিত ‘পেট আর্ট'-এর মাধ্যমে ভেরোনিকা উপাদান হিসেবে প্লাস্টিকের প্রতি এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং সৃজনশীল রিসাইক্লিংয়ের বিস্ময়কর সম্ভাবনা তুলে ধরছেন।
বর্তমানে তিনি এক ঝাড়লণ্ঠন তৈরির কাজে ব্যস্ত। ভেরোনিকা জানান, ‘‘কাজ শুরু করার সময় একটা আইডিয়া থাকে৷ প্রায়ই দেখি, সেই আইডিয়া কাজ করছে না। তখন হয় অন্য কৌশল প্রয়োগ করতে হয় অথবা অন্য বোতলের খোঁজ করতে হয়৷ কাজ করতে করতে বুঝতে পারি, কীভাবে সেটি করা সম্ভব৷''
এই চেক শিল্পী প্লাস্টিক জঞ্জাল থেকে শিল্পসৃষ্টি করতে নানা কৌশল আবিষ্কার করেছেন৷ প্লাস্টিকের বোতল গরম করে, গলিয়ে, কেটে এবং জোড়া দিয়ে ভেরোনিকা নানা ধরনের বস্তুর রূপ দিচ্ছেন। তার মতে, কীভাবে ধরতে হয়, কোন তাপমাত্রায় কতক্ষণ গরম করতে হয়, সেসব জানতে হবে। অভিজ্ঞতাই আসল কথা৷
রাদেন রোরো হেনদারতি প্রতি সপ্তাহান্তে তার তিন চাকার গাড়ি নিয়ে ছুটে যান মুনতাগ গ্রামে। তাকে দেখে ছুটে আসে শিশুরা। আসে বই পড়তে। তারা কুড়িয়ে আনা প্লাস্টিক তুলে দেয় রাদেনের হাতে, তার বিনিময়ে পায় মজার মজার বই। তিন চাকার গাড়ি নিয়ে লাইব্রেরিয়ান রাদেন যখন বাড়ি ফেরেন, মন জুড়ে থাকে শিশুদের বই পড়তে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি তাদের মাঝে পরিবেশ-সচেতনতাও বাড়াতে পারার আনন্দ!
তার বাগানবাড়ি ও ছোট চালা ঘর নানা রং ও আকার-আকৃতির হাজার হাজার পেট-বোতলের গুদাম হয়ে উঠেছে। নিজের উদ্যোগ সম্পর্কে ভেরোনিকা বলেন, ‘‘আমার শিল্পের মাধ্যমে পৃথিবী বাঁচাতে পারবো বলে মনে করি না। তবে জিনিসপত্রের যে পুনর্ব্যবহার করা যায়, বিশ্বকে আমি সেটা দেখাতে চাই। কোনো কিছু সৃষ্টির পর প্রায়ই কিছু প্লাস্টিকের বোতল পড়ে থাকে। যেমন এটি এক মাছির শরীর হয়ে উঠবে৷ তারপরেও যা উদ্বৃত্ত থাকবে, সেটি দিয়েও গাছ বা অন্য কিছু তৈরি হবে। সেটা থেকে প্রেরণা পাই। কখনো তা শেষ হয় না।''
অর্ডার অনুযায়ী এই শিল্পকর্ম তৈরি করেছেন ভেরোনিক। ৮০০ ইউরো মূল্যে সেটি বিক্রিও হয়ে গেছে। এই কাজে তিনি ৪০টি বোতল পুনর্ব্যবহার করেছেন। ভেরোনিকার প্লাস্টিক শিল্প একইসঙ্গে সৃজনশীল ও পরিবেশবান্ধব।
সান নিউজ/ডি