মো. মনির হোসেন, স্টাফ রিপোর্টার: ময়মনসিংহের ত্রিশালে মাত্র ২০ টাকায় সৌন্দর্য উপভোগের শর্তে একটি সূর্যমুখী ফুলের বাগান দেখতে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভীড় লক্ষ করা গেছে।
আরও পড়ুন: নবরূপে ভালুকার গ্রীণ অরণ্য পার্ক
শুক্রবার (১ মার্চ) বিকেলে উপজেলার সদর ইউনিয়নের সতের পাড়া এলাকার একটি সূর্যমুখী ফুলের বাগানে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়।
বাগানের পাশেই বড় করে একটি সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে, ‘অনুমতি ছাড়া প্রবেশ নিষেধ, প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা’। প্রবেশমুখের অপর একটি সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে "ফুল ছিঁড়লে ৫০০ টাকা জরিমানা"।
বাগান মালিক বাগানে প্রবেশের পথ আটকিয়ে জনপ্রতি ২০ টাকা প্রবেশমূল্য নিয়ে ঢুকতে দিচ্ছেন দর্শনার্থীদের। শুক্রবার একদিনেই ৫ শতাধিক দর্শনার্থীর আগমন ঘটে বলে নিশ্চিত করেছে বাগান মালিক রাজিব।
আরও পড়ুন: ইছামতীর তীরে সাধুসঙ্গ
তবে সৌন্দর্য উপভোগে টাকা এবং সময় নির্ধারিত থাকলেও দর্শনার্থীদের মধ্যে তেমন কোন ক্ষোভ ছিল না। তারা ফুলের অপরূপ সৌন্দর্যে বিমোহিত ও আপ্লুত হয়েছেন।
জানা যায়, স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে উন্নত জাতের বীজ নিয়ে তাদের সহায়তায় ২০ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেন স্থানীয় দাখিল পরীক্ষার্থী রাজিব হাসান ও তার ছোট ভাই রেজাউল করিম। এখন বেশিরভাগ গাছে ফুল ফুটেছে।
সামাজিক মাধ্যমে জেনে বিপুল সংখ্যক সৌন্দর্য পিপাসু মানুষ বিগত এক সপ্তাহ ধরে ভীড় জমাচ্ছে এই বাগানটিতে। লোকজনকে সামাল দিতে প্রতিদিন ৪-৭ জন লোক এখানে নিয়মিত সময় দিচ্ছেন।
আরও পড়ুন: পুকুরে মিলল ৬০০ গ্রামের ইলিশ
ত্রিশাল উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সরিষা ও গমের চাষাবাদের পাশাপাশি বিকল্প ফসল হিসেবে সূর্যমুখী চাষের দিকে ঝুঁকছেন ত্রিশাল উপজেলার কৃষকেরা।
কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে উপজেলায় সূর্যমুখীর বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয়েছে। এ বছর কৃষি পুনর্বাসন প্রণোদনার আওতায় উপজেলায় কৃষকের মধ্যে বিনামূল্যে এক কেজি করে আরডিএস জাতের সূর্যমুখীর বীজ বিতরণ করা হয়েছে।
ত্রিশাল উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে ৭ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে।
দর্শনার্থী স্বপ্নীল সানি বলেন, সামাজিক মাধ্যম ফেইসবুক থেকে জেনে কয়েকজন বন্ধু মিলে দেখতে এসেছি। এখানে এসে অনেক ভালো লাগছে। জীবন্ত ফুলগুলো যেন হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকছে, সে এক অন্যরকম ভালো লাগা।
আরও পড়ুন: রংপুরে আলো ছড়াচ্ছে বেসরকারি গ্রন্থাগার
মা, স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ঘুরতে আসা তানজিম আকন্দ নামে একজন বলেন, ফুলগুলো দেখে অসাধারণ ভালো লাগা কাজ করছে। কাজের ব্যস্ততার কারণে পরিবার নিয়ে দূরে বেড়াতে যাওয়ার তেমন সুযোগ হয় না। হাতের কাছে এমন দৃষ্টিনন্দন সূর্যমুখী ফুলে বাগান দেখে সবারই অনেক ভালো লেগেছে, সবাই অনেক খুশি।
সূর্যমুখী ফুল চাষি রাজীব হাসান বলেন, আমি দাখিল পরীক্ষা দেয়ার পর বেশ কিছুদিন সময় পেয়েছিলাম। তখন কৃষি অফিসের সহায়তায় আমি ও আমার ছোটভাই মিলে ২০ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ শুরু করি। ফলন অনেক ভালো হয়েছে। ন্যায্য মূল্য পেলে আমাদের পরিশ্রম সফল হবে ও আমাদের মতো আরও অনেকেই সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হবেন।
উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিশাত মাহবুবা রহমান জানান, আগে কৃষকেরা সূর্যমুখী চাষে তেমন আগ্রহী ছিলেন না। আমি নিজ চেষ্টায় তাদের সূর্যমুখী চাষে উদ্বুদ্ধ করেছি। তাদের সরকারিভাবে বিনামূল্যে বীজ দেয়া থেকে শুরু করে চাষাবাদে সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে।
সান নিউজ/এনজে