ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি: অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের মাধ্যমে ভালুকার গ্রীণ অরণ্য পার্ক সেজেছে নতুন রূপে।
আরও পড়ুন: মিশিগানে সড়কে বাংলাদেশির মৃত্যু
তীব্র রোদেও সাজানো গোছানো এই পার্কের ভেতরে হাঁটার রাস্তাগুলো থাকে ছায়ায় ঘেরা। হাঁটতে হাঁটতে আবার শোনা যায় পাখির ডাক, পাশ দিয়েই ভোঁ দৌড় দেয় কাঠবিড়ালী। ভেতরে হাঁটার রাস্তায় আধুনিক লাইটিংয়ের ব্যবস্থা সন্ধ্যায় আনে ভিন্ন এক রূপ।
পার্কটিতে শিশুদের খেলার যে জায়গা তৈরি হয়েছে, তাতে আছে দারুণ সব রাইড। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পার্কের ভেতরের এই ‘পার্কে’ থাকে শিশুদের মেলা। বাবা মার সাথে শিশুরা বারবার আসে সেখানে।
অবকাশ ও চিত্তবিনোদনের জন্য প্রতিদিন এলাকার ও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শত শত নানা বয়সী মানুষ ভীড় করছেন এ পার্কটিতে। বিশেষ করে সরকারি ছুটির দিনে পিকনিক পার্টি ও দর্শনার্থীদের ভিড় বেড়ে যায়।
আরও পড়ুন: সংরক্ষিত সংসদ সদস্যদের শপথ বিকালে
অন্যান্য দিনেও দর্শনার্থীদের আনাগোনা চোখে পরার মতো। চারিদিকে মনোমুগ্ধকর সবুজ প্রকৃতির মাঝখানে নিরাপদ প্রাচীর বেষ্টিত অবকাশ যাপনের সম্পূর্ণ পারিবারিক বিনোদনের এ পার্কটি নজর কেড়েছে সাধারণ জনগণ থেকে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্তাদের।
ভালুকার হবিরবাড়ী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে পাকা রাস্তা ধরে শাল গজারী বনের ভিতর দিয়ে ২ কিলোমিটার পূর্ব দিকে পৌঁছলেই নজরে আসবে পার্কের প্রধান ফটকের মাথায় দাঁত বের করে মুখ বাড়িয়ে আছে বিশাল আকৃতির ড্রাগন।
উঁচু-নিচু টেক টিলায় দর্শনার্থীরা ঘুরে ঘুরে পরিচিত হবেন নানা বিনোদনের সাথে। রাস্তার দুই পাশ সাজানো হয়েছে নানা রকম দেশী-বিদেশী ফল ফুলের গাছে।
আরও পড়ুন: আ’লীগ নেতার লাশ উদ্ধার
ঝুলন্ত ব্রিজ পাড় হলেই দ্বীপাকৃতির অবকাশ কেন্দ্র যেখানে রয়েছে, পাশাপাশি দূরত্বে লেকের ধারে মনোরম পরিবেশে সম্পূর্ণ আর্ন্তজাতিক মানসম্পন্ন ৩ রুম বিশিষ্ট ৭/৮ টি কটেজ আছে, যার চারিদিকে বারান্দা সামনে লেকের স্বচ্ছ পানি আর সুইমিং পুল। লেকের ধারে ২০০ লোক ধারণ সম্পন্ন একটি হলরুম যেখানে বিয়ে, জন্মদিনের অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠানাদির সুব্যবস্থা রয়েছে।
শিশুদের জন্য দোলনা, মিনিরেল, ফ্লায়িং রকেট, ইলেকট্রিক ট্রেন ও খেলাধুলার নানা সরঞ্জামসহ পার্কের বিভিন্ন অংশে নির্মল পানির লেকে শোভা পাচ্ছে প্যাডেল বোট। এক পাশে ফ্লায়িং রাইডার ও স্বয়ংক্রিয় ওয়াটার সাওয়ার।
আরও পড়ুন: যেসব এলাকায় গ্যাস বন্ধ আজ
পার্কের দক্ষিণ দিকে ১৫শ লোক ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন পার্টি সেন্টারের জন্য বিশালাকারের সুউচ্চ হল রুম তৈরির কাজ সমাপ্তির পথে। এছাড়া হরিণ, ঘোড়া, উটপাখি, ইমু পাখি, ময়ূর, ময়নাসহ বিভিন্ন পশুপাখি দর্শনার্থীদের মনোরঞ্জনের খোরাক জোগাচ্ছে। লেকের ধারে উঁচু টিলায় স্থাপিত হয়েছে উড়ন্ত বলাকার ঝাঁক।
পার্কের সাথেই লেকের ব্যবস্থা করা আছে, যেখানে দল বেধে বন্য বানরের দল বিভিন্ন সময় পানি পান করে। পড়ন্ত বিকেলে চারিদিক থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে সাদা বক, কানি বক ও অন্যান্য পাখিরা পার্কের গাছে বসতে শুরু করে রাত্রি যাপনের জন্য।
আরও পড়ুন: গাজীপুরে বিস্ফোরণে নিহত ১
পার্কের সত্বাধিকারী হাজী শহিদুল ইসলাম জানান, ভালুকার শতাধিক শিল্প কারখানার কর্মব্যস্ত স্বল্প আয়ের লাখ লাখ শ্রমিক যারা অর্থাভাবে বিনোদনের জন্য দূরের কোন পার্কে যেতে পারেন না, তাদের জন্য এবং এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ, স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রী, সমাজের সকল স্তরের মানুষের সুষ্ঠু ধারার বিনোদনের জন্য সাচ্ছন্দপূর্ণ নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে একটি বিনোদন পার্ক তৈরি করা তার বহুদিনের স্বপ্ন ছিল।
তিনি জাপানের একটি পার্ক দেখে এসেছেন, সেই আদলে সম্পূর্ণ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দর্শনার্থীদের মনোরঞ্জনের কথা ভেবে পার্কটির পরিবেশগত অবকাঠামো নির্মাণ করেছেন।
আরও পড়ুন: নসিমন-বাইক সংঘর্ষে নিহত ২
দর্শনার্থীদের জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও টয়লেট বাথরুমসহ বিশ্রামাগার ও সব রকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। বনভোজন দলের জন্য টিলায় টিলায় আলাদা রন্ধনশালা ও খাবার পরিবেশনের সুব্যবস্থা রয়েছে।
পার্কের প্রবেশদ্বারের বাহিরে নামাজের স্থান করা হয়েছে। এক পাশে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য জায়গা নির্দিষ্ট করা আছে। এক কথায় দেশের অন্যান্য পার্কের চেয়ে নিরাপদ ও সুন্দর পরিবেশ এখানে বিরাজ করছে। পারিবারিকভাবে সুষ্ঠধারার বিনোদনের জন্য এই পার্কটি মানুষের মনে ব্যাপক সারা জাগিয়েছে।
সান নিউজ/এনজে