গাইবান্ধা প্রতিনিধি: শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। সেই শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমগুলোর মধ্য একটি হলো বিদ্যালয়। একটি এলাকার সেই বিদ্যালয়ের কথাই বলছি। তবে একটি, দুটি কিংবা নয়, মাত্র দুই কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে গড়ে উঠেছে ১৩ টি বিদ্যালয়।
আরও পড়ুন: বই থেকে শরীফার গল্প বাদ দিতে নোটিশ
সবগুলো প্রতিষ্ঠানেই প্রয়োজনীয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী রয়েছে। পাবলিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফলও করছে। এত কম দূরত্বে এত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় এলাকায় ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা যেমন কমেছে, তেমনি বেড়েছে উচ্চশিক্ষার হার। ওই এলাকার নাম ফকিরহাট।
এ নামের সঙ্গে মিল রেখে স্থানীয়ভাবে এলাকাটি শিক্ষার হাট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এটি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার পবনাপুর ইউনিয়নের বালাবামুনিয়া গ্রামের পড়েছে।
পবনাপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহিনুর বেগম বলেন, এ ইউনিয়নে সরকারি-বেসরকারি ৪০ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ২৩ টি প্রাথমিক, ৫ টি মাধ্যমিক ও ৩ টি কলেজসহ বেশ কিছু মাদ্রাসা রয়েছে।
আরও পড়ুন: নতুন উপ-উপাচার্য ড. সীতেশ চন্দ্র
এসব প্রতিষ্ঠানের ১৩ টিই ফকিরহাট এলাকায়। পলাশবাড়ী উপজেলা শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে বালাবামুনিয়া গ্রাম। এ গ্রামেরই প্রাণকেন্দ্র ফকিরহাট।
এখানে একটি বাজার, ঈদগাহ ও ডাকঘর রয়েছে। ফকিরহাট বাজার ঘেঁষে সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা ফকিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ফকিরহাট দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়।
ফকিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিলীপ কুমার সরকার বলেন, বিদ্যালয়টি ১৯৪৩ সালে প্রতিষ্ঠিত। বিদ্যালয়ে ১৩৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ২০১৯ সালের মেধাবৃত্তিতে ২ জন ও সর্বশেষ একজন বৃত্তি পায়।
আরও পড়ুন: ‘শরীফার গল্প’ পর্যালোচনায় কমিটি গঠন
১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ফকিরহাট দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম সরকার বলেন, শিক্ষার্থী সংখ্যা ৫৬৩। এর মধ্যে ছাত্রী ২০০ জন এবং ছাত্র ৩৬৩ জন। সর্বশেষ পাবলিক পরীক্ষার ফল বেশ ভালো। পাসের হার ৭৯.৩৪। শিক্ষক রয়েছে ১৫ জন ও কর্মচারী ৬ জন।
এলাকাবাসী বলেন, এ গ্রামে প্রথমে মরহুম মোতাহার আলী খন্দকার ও হবিবর রহমান খন্দকারের সার্বিক সহযোগিতায় ১৯৩৮ সালে ফকিরহাট দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় গড়ে ওঠে। ১৯৬৭ সালে এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন ফজলুল হক খন্দকার।
সে সময় বিদ্যালয়ে ৭ জন শিক্ষক ও ১৬০ জন শিক্ষার্থী ছিল। বিদ্যালয়টি ধীরে ধীরে ভালো ফলাফল করতে থাকে। আশপাশের গ্রামের অভিভাবকেরাও বিদ্যালয়টিতে সন্তানদের পড়াতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। বিদ্যালয়টি থেকে ১৯৬৯ সালে এসএসসিতে শতভাগ পাস করে। বর্তমান ১৪ জন শিক্ষক ও ৫৬৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।
আরও পড়ুন: পাঠ্যবইয়ে বিভ্রান্তি থাকলে সংশোধন হবে
ফজলুল হকের প্রচেষ্টায় আরও কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে। তার অনেক ছাত্র সচিব, জেলা প্রশাসক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী ও শিক্ষক হয়েছেন।
অবসরপ্রাপ্ত ফজলুল হক বলেন, সে সময় আমি বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার খোঁজখবর নিয়েছি। দুর্বল শিক্ষার্থীদের বাড়তি পাঠদান, অর্থ, বই খাতা দিয়ে সহায়তা করেছি। বিদ্যালয় দুটি থেকে বের হয়ে একশত গজ পূর্বে এলেই হাতের বামপাশে প্রাচীরঘেরা ফকিরহাট শহীদ স্মৃতি ডিগ্রি কলেজের ক্যাম্পাস।
কলেজটির শিক্ষার্থী নুরী আকতার বলেন, তিনি এখান থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করে এখন স্নাতকে পড়ছেন। কষ্ট করে দূরে কোথাও না
গিয়ে বাড়িতে থেকেই উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়েছেন। এতে বাড়ির কাজে সাহায্য করতে পেরেছেন, তেমনি পড়াশোনার খরচও বেঁচেছে।
আরও পড়ুন: বাকশাল ব্যবস্থার প্রবর্তন
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল আলিম খন্দকার বলেন, কলেজে প্রায় ৭০০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। সর্বশেষ পাসের হার ৬৩.৬৯। কলেজটি ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ফকিরহাট বাজার থেকে ৪০০ গজ দক্ষিণে ফকিরহাট আল্লার দরগা দাখিল মাদ্রাসা অবস্থিত।
৪১০ গজ পূর্বেই শহীদ খায়রুল আলম বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। মাদ্রাসাটি ১৯৯৪ সালে ও বালিকা বিদ্যালয়টি ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত। বাজার থেকে ৬৫০ গজ দূরে ২০০৫ সালে ফকিরহাট মদিনাতুল উলুম কওমি হাফিজিয়া মাদ্রাসা গড়ে ওঠে।
বাজার থেকে ৫৫০ গজ দূরে ১৯৮৪ সালে বালাবামুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ৬৫০ গজ দূরে ১৯৯০ সালে বালাবামুনিয়া বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৬০০ গজ দূরে ১৯৯৫ সালে বালাবামুনিয়া ফকিরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুন: পাটুরিয়ায় ডুবে যাওয়া ফেরি উদ্ধার
দুই কিলোমিটার দূরে ১৯৮৫ সালে বালাবামুনিয়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২০০ গজ দূরে ২০০০ সালে স্থাপিত ফকিরহাট মহিলা কলেজ।
দেড় কিলোমিটার দূরে ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বালাবামুনিয়া পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৬০০ গজ দূরে ১৯৮৫ সালে স্থাপিত সমিতিরহাট বালাবামুনিয়া উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল হাই বলেন, কাছাকাছি এতগুলো বিদ্যালয় থাকলেও সবগুলোতেই পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী রয়েছে। এত বেশি বিদ্যালয়
থাকায় এলাকাটিতে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীও নেই বললেই চলে।
আরও পড়ুন: বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা
ফকিরহাট এলাকার এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পাস করে অনেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন।
ফকিরহাট উচ্চবিদ্যালয় থেকে পাস করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক (মাধ্যমিক-২) পদ থেকে অবসরে গেছেন খন্দকার রেজাউল করিম। তিনি বলেন, তার বাড়ি পাশের কুমারগাড়ী গ্রামে। বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় এলাকাটির নাম শিক্ষার হাট বেশ যুতসই হয়েছে।
সান নিউজ/এনজে