রংপুর ব্যুরো: গ্রাম বাংলার মনোরম পরিবেশ। মাঝখানে পানি। দলবেঁধে বিলের পানিতে হাঁসের ছুটোছুটি। ফুলের বাহারে হাসছে হরেক রকম গাছ। শোভাবর্ধনকারী গাছগাছালিতে সজ্জিত বিলের চারপাশ। সবুজের সমারোহে পাখির কলকাকলিতে উড়ে বেড়াচ্ছে রঙিন প্রজাপতি।
আরও পড়ুন: দুর্গোৎসবের ২য় দিন, আজ সপ্তমী
ছাউনিতে বসে আড্ডা, নয়তো বিলে নৌকা ভ্রমণ। এমনই প্রাকৃতিক পরিবেশ নিয়ে সাজানো হয়েছে খারুভাজ উপজেলা প্রশাসন পার্ক। যেখানে প্রাণ-প্রকৃতির মেলায় রয়েছে আনন্দ উপভোগের মনোরম পরিবেশ।
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘন্টা ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী খারুভাজ বিলে নির্মাণ করা হয়েছে ইকোপার্ক।
উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নির্মিত এ পার্কে নগরের ব্যস্ততা ফেলে স্বস্তির খোঁজে প্রতিদিন ছুটে আসে বিনোদনপ্রেমী মানুষ। পার্কে রয়েছে দিনের তীব্র রোদে খড়ের ছাউনির ছায়ায় নিজেকে জিরিয়ে নেওয়ার পরিবেশ।
আরও পড়ুন: বায়ুদূষণে আজ ঢাকা চতুর্থ
সকালে পার্কের বিলে উড়ে আসে পাতি সরালি, সাদা বকের মতো অনেক পাখি। যেন নতুন জীবনধারা গড়ে উঠেছে খারুভাজ পার্কজুড়ে।
গঙ্গাচড়া উপজেলা প্রশাসন বলেন, চলতি বছরের গত ১৫ জুলাই খারুভাজ পার্কের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীন।
উপজেলার বড় জলমহালগুলোর মধ্যে খারুভাজ বিলটি অন্যতম। এর আয়তন ১৮.৯৮ একর। বিলে শুধু মৎস্য চাষই করতেন স্থানীয় মৎস্যজীবীরা। তবে তদারকির অভাবে বিলের কিছু জায়গা স্থানীয়দের দখলে চলে যায়।
আরও পড়ুন: আজ রাষ্ট্রীয় শোক পালন করছে দেশ
প্রাণ-প্রকৃতি সংরক্ষণে সরকার ইকোপার্ক নির্মাণের ওপর গুরুত্বারোপ করলে উপজেলা প্রশাসন খারুভাজ বিল নিয়ে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করে।
বিলের জমি দখলমুক্ত করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহযোগিতায় বিলটির সংস্কার, পাড় মেরামত, বসার বেঞ্চ নির্মাণ, গোলঘর, বিশ্রামের জন্য খড়ের ছাউনি তৈরি করা হয়েছে।
খারুভাজ পার্কটিকে পুরো দেশে পরিচিত করতে ঢালাই করা ‘আই লাভ গঙ্গাচড়া’ লেখা বাক্য সম্বলিত একটি দৃষ্টিনন্দন ফলক নির্মাণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: কাল দেশের সব জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ
সেই সঙ্গে রাতের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য বিলের চারপাশে লাইট পোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন খারুভাজ পার্কের সম্মুখে খড়-বাঁশ দিয়ে তৈরি করেছে একটি দৃষ্টিনন্দন ফটক।
পার্কে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে নানা রং ও শোভাবর্ধনকারী গাছে সজ্জিত করা একটি দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা। ফোয়ারার নিচে থাকা এ্যাকুরিয়ামে রঙিন মাছ ছোটাছুটি করছে।
খারুভাজ বিলে রাখা শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে নৌভ্রমণ উপভোগ করার ব্যবস্থা রয়েছে। পার্কের ভেতরে বিলের পাড়ে রয়েছে কৃষ্ণচূড়া, জারুল, শিউলি, বকুল, আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুল, ফল ও ঔষধি গাছের সমারোহ।
আরও পড়ুন: সোমবার থেকে বৃষ্টির সম্ভাবনা
পাশাপাশি বিভিন্ন দুর্লভ প্রজাতির গাছের মধ্যে গোল্ডেন সাওয়ার, ফরচুন, লিন্টেলা, নাইট কুইন, ইফোরবিয়া, কাঁটামুকুটের চারা রোপণ করা হয়েছে।
গজঘন্টা বাজার এলাকার শিক্ষার্থী জান্নাতি আক্তার বলেন, অনেক প্রজাতির পাখি, গাছগাছালি আর বিলের পানিতে সূর্যের লুকোচুরি খেলা বেশ উপভোগ্য। বন্ধুদের নিয়ে নৌকায় চড়ে বিল ভ্রমণ করা হয়েছে।
পার্কে পাখিদের অভয়ারণ্য তৈরি করা হয়েছে। সকালে বিলের কোলজুড়ে পানকৌড়ি, পাতিসরালী, মাছরাঙা, বকসহ চেনা-অচেনা অনেক পাখিও দেখা যায়।
এছাড়া দিনের ঘুঘু, শালিক, চড়ই, দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকে পার্কের সবুজ পরিবেশ।
খারুভাজ বিল মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি বকুল বলেন, এক সময় বিলে দিনের বেলাতেও কোন মানুষ দেখা যেত না। পার্ক হওয়ার পর সব সময় মানুষের আনাগোনা দেখা যায়।
আরও পড়ুন: রংপুরে তিন চাকার বাহনে যানজট
সহকারী কমিশনার (ভূমি) নয়ন কুমার সাহা বলেন, উপজেলার সবচেয়ে বড় জলমহাল খারুভাজের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ঘিরে খারুভাজ উপজেলা প্রশাসন পার্কটি নির্মাণ করেছে, মানুষ যেন নগরজীবনের ক্লান্তি দূর করতে পারে।
জীববৈচিত্র রক্ষার ওপর বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে শীতের অতিথি পাখি এখানে আসতে শুরু করেছে।
গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ তামান্না বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে পার্ক নির্মাণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খারুভাজে একটি ইকোপার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ইকোপার্ক এসডিজির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত।
সান নিউজ/এনজে