নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ শরৎ ঋতুর শেষ দিন। বাংলা বর্ষপঞ্জির হিসাবে আগামীকাল পয়লা কার্তিক, হেমন্তের প্রথম দিন। কার্তিক হচ্ছে ঋতু হেমন্তের প্রথম মাস। বাংলাদেশের ষড়ঋতুর হিসেবে কার্তিক ও অগ্রহায়ণ হেমন্তের মাস।
আরও পড়ুন: বিশ্ব খাদ্য দিবস
এ ঋতুর প্রকৃতি মিষ্টি সোনা রোদ মাখা, আকাশ অখণ্ড নীল। হেমন্ত শরৎ থেকে পৃথক নয়, আবার শীত থেকেও বিচ্ছিন্ন নয়। এটি শীত ও শরতের মাখামাখি একটি সুন্দর ঋতু। হেমন্তের শিশির ভেজা ঘাস দেখলে মনে হয় যেন মুক্তার মেলা।
ইতিমধ্যে বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে হিমেল আবহ, গাঁয়ের মেঠো পথে এসেছে শীতের আগমনী বার্তা। এখন সন্ধ্যার প্রকৃতি ঢেকে যায় কুয়াশার হালকা চাদরে, ভোরে শিশিরে ঢেকে যায় পথঘাট।
আরও পড়ুন: আজও বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা
কার্তিকের এ সময় বাংলাদেশের প্রকৃতিতে যেমন প্রগাঢ় সবুজ পাওয়া যায়, তেমনি পাওয়া যায় শীতের মিষ্টি আমেজ। বছরের যে সময়ে গ্রীষ্মের দাবদাহ নেই, নেই বর্ষার অঝোর ধারায় ভিজে যাওয়া বা কাঁদা, আবার হাড় কাঁপানো শীতও নেই, এমন ঋতুই হলো কার্তিক।
কার্তিক নিয়ে কবি জীবনানন্দ লিখেছেন, আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে এ বাংলায় / হয়তো মানুষ নয় হয়তোবা শাঁখচিল শালিকের বেশে,/ হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে/ কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব কাঁঠাল ছায়ায়।
আরও পড়ুন: জলবায়ু সমস্যায় একযোগে কাজ করার আহ্বান
হেমন্তকে নিয়ে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, আজি হেমন্তের শান্তি ব্যাপ্ত চরাচরে/ জনশূন্য ক্ষেত্র মাঝে দীপ্ত দ্বিপ্রহরে/ শব্দহীন গতিহীন স্তব্ধতা উদার/ রয়েছে পড়িয়া শ্রান্ত দিগন্ত প্রসার/ স্বর্ণশ্যাম ডানা মেলি।
এছাড়া জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ভাষায়-,উত্তরীয় লুটায় আমার/ ধানের খেতে হিমেল হাওয়ায়।/ আমার চাওয়া জড়িয়ে আছে/ নীল আকাশের সুনীল চাওয়ায়।/ ভাঁড়ির শীর্ণা নদীর কূলে/ আমার রবি-ফসল দুলে, /নবান্নেরই সুঘ্রাণে মোর/ চাষির মুখে টপ্পা গাওয়ায়।
আরও পড়ুন: দুর্যোগ হ্রাসে সমতা ভিত্তিক প্রবেশাধিকার জরুরি
অনেক আগে বাংলায় বছর শুরু হতো হেমন্ত দিয়ে। অগ্রহায়ণ মাসকে বছরের প্রথম মাস বা খাজনা তোলার মাস ঘোষণা দিয়েছিলেন সম্রাট আকবর। কারণ হেমন্ত ধান উৎপাদনের ঋতু।
কার্তিক মাসে ধানে পাক ধরে। এ মাসের শেষ দিকে গ্রামের মাঠে মাঠে ধান কাটার ধুম পড়ে, চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধ।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা লেগেছে বাংলাদেশের ষড়ঋতুতে। ফলে ঋতুর উপস্থিতিতে ঘটছে তারতম্য। তারপরও কমেনি হেমন্তের আবেদন! এখনো হেমন্ত আমাদের হৃদয় ছুঁয়ে যাচ্ছে! নবান্নের উৎসবে ছুঁয়ে যাক সব প্রাণ। নতুন এ ঋতুকে স্বাগত।
সান নিউজ/এনজে