এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সুপারির জন্য বিখ্যাত উপকূলীয় বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা। এ উপজেলার লোকজনের সারা বছরের আয়ের বড় অংশ আসে সুপারি বিক্রি থেকে।
আরও পড়ুন: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অর্থনৈতিকভাবে এখন স্বাবলম্বী চাষিরা
প্রতিবছরই এখান থেকে প্রচুর পরিমাণে সুপারি সারা দেশে ছড়িয়ে যায়। এ বছর সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে এ বছর ১৫ কোটি টাকার সুপারি উৎপাদন হয়েছে। এ উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সুপারির ফলন ভালো হয়।
তবে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে সুপারির বাজারদর কম থাকায় হতাশ মোরেলগঞ্জের কৃষক, গৃহস্থ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
আরও পড়ুন: ব্যস্ত সময় পার করছেন নৌকার কারিগররা
কালের বিবর্তনে ধান, পান হারিয়ে গেলেও লাভজনক কৃষিপণ্য হিসেবে স্থান পেয়েছে সুপারি। মোরেলগঞ্জ উপজেলায় ব্যাপক হারে সুপারির চাষ হয়ে আসছে। এখনকার সুপারি মানে ভালো বলে এর বাণিজ্যিক বাজার গড়ে উঠেছে।
স্থানীয় সুপারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জানা যায়, মোরেলগঞ্জ পৌরসভা ও উপজেলার ১৬ টি ইউনিয়নের সবকটিতেই উৎপাদন হয় সুপারি। এক সময় সারা দেশে সরবরাহ করা হতো মোরেলগঞ্জর সুপারি।
আরও পড়ুন: অস্তিত্ব সংকটে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য, বিলুপ্তির পথে বাঘ
তবে সেই অবস্থা না থাকলেও এখনো প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে সুপারি মোরেলগঞ্জ থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। তবে এ বছর সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, সুপারি একটি অর্থকরী ফসল। আপদকালীন সময়ে সুপারি বিক্রি করে সংসারের চাহিদা মিটছে অনেক কৃষকের। সুপারির চাষ লাভজনক হওয়ায় অনেকেই এখন সুপারি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকার পাকা ও শুকনো সুপারি কেনাবেচা হয় মোরেলগঞ্জে। ফলে এখানে গড়ে উঠেছে সুপারির বাণিজ্যিক বাজার।
আরও পড়ুন: পানগুছি বলেশ্বরের ইলিশের স্বাদ-গন্ধে জুড়ি নেই
উপকূলে সুপারির সবচেয়ে বড় মোকাম মোরেলগঞ্জ। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৬ টি ইউনিয়নের থেকে ব্যবসায়ীরা সুপারি নিয়ে বিক্রির জন্য মোরেলগঞ্জ শহরে গড়ে উঠা সুপারির হাটে আসেন। এখানে প্রতি সপ্তাহের সোমবার ও শুক্রবার দুই দিন সুপারির হাট বসে।
তবে শুকনো সুপারির পিক মৌসুম ফাল্গুন থেকে আষাঢ় পর্যন্ত এবং কাঁচা সুপারির পিক মৌসুম শ্রাবণ থেকে পৌষ পর্যন্ত। এ সময় বেশির ভাগ সুপারি ক্রয়-বিক্রয় হয়।
আরও পড়ুন: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আখচাষির মুখে হাসির ঝিলিক
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সুপারি কিনে ভারতসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠান। আবার দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরাও এখানে আসেন সুপারি কিনতে। তারা মোরেলগঞ্জ থেকে নিয়মিত সুপারি সংগ্রহ করেন। এখান থেকে প্রায় প্রতিদিন ট্রলার ও ট্রাক বোঝাই করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায় সুপারি।
মোরেলগঞ্জ বাজারের সুপারি ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের ফরাজী, আব্দুল হালিম ফরাজী, বাদশা মিয়া ও সোহরাব হোসেন মোহন বলেন, মোরেলগঞ্জে প্রতি হাটে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার পাকা ও শুকনো সুপারির কেনাবেচা হয়।
আরও পড়ুন: পাখিরাও পরকীয়ায় জড়াচ্ছে
প্রতিবছর এ মৌসুমে বিভিন্ন হাট থেকে সুপারি কিনে মজুদ করা থাকে এবং শুকিয়ে ও পানিতে ভিজিয়ে সুপারি সংরক্ষণ করা হয়। পরে তা দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়। এ সুপারি এলসির মাধ্যমে ভারতে যাচ্ছে।
তারা আরও জানান, গত মৌসুমে সুপারির দাম অনেক ভালো ছিল। তবে এবার সুপারির দাম বাড়তির দিকে। বর্তমান মৌসুমে ২১ ঘা (২১০ টি) এক কুড়ি কাঁচা সুপারির মূল্য শ্রেণীভেদে ৪৬০-৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা গত মৌসুমের তুলনায় অনেক বেশি।
আরও পড়ুন: ফসলের মাঠে কৃষকের প্রকৃত বন্ধু সাইদুল ইসলাম
মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকাশ বৈরাগী বলেন, মাটি এবং আবহাওয়া সুপারি চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এ কারণে এখানকার সুপারি আকারে অনেক বড় এবং সুস্বাদু হয়।
তিনি আরও বলেন, বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে সুপারি গাছে ফুল আসে এবং ফুল থেকে সুপারি হয়।
এ বছর উপজেলার সুপারি বাগানের মালিকরা সঠিক সময়ে সঠিক পরিচর্যা করায় সুপারির এমন ফলন হয়েছে। এ উপজেলায় ৫০০-৬০০ টন সুপারি উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর বাজারমূল্য ১৫ কোটি টাকার বেশি হবে।
আরও পড়ুন: সারাদেশে ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা
বাজারে কাঁচা-পাকা সুপারির দাম না থাকায় গৃহস্থ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা হতাশায় ভুগছেন। তবে আশ্বিন-কার্তিক মাসে চাষি ও গৃহস্থরা দাম বেশি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এই সুপারি কিনে ৬০ শতাংশ পানি ভর্তি পাত্রে ভিজিয়ে রাখেন। ৪০ শতাংশ সুপারি দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ ও রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। এ বছর কাঁচা-পাকা সুপারির দাম কম হওয়ায় হতাশ কৃষক, গৃহস্থ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
সান নিউজ/এনজে