এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট: বাগেরহাটের চিতলমারীতে চলতি বর্ষা মৌসুমে নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন নৌকার কারিগররা। গ্রামে গেলেই শোনা যায় ঠুকঠাক শব্দ। চলছে নৌকা তৈরির ধুম।
আরও পড়ুন: অস্তিত্ব সংকটে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য, বিলুপ্তির পথে বাঘ
বর্ষাকাল এলেই এলাকার মানুষের প্রয়োজন হয় নৌকার। জীবিকার তাগিদে উপজেলার বড়বাড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে শত শত মানুষ কাজ করছে এ পেশায়।
ঝরছে ঝিরঝির বৃষ্টি, বইছে সুবাতাস। নদী, খাল-বিল, হাওড়-বাওড়ে বাড়ছে পানি। তাই নৌকা তৈরির কাজে কারিগররা পার করছেন ব্যস্ত সময়। সরেজমিনে জানা গেছে, দিনরাত হাতুড়ি-বাটালের ঠুকঠুকানিতে মুখর বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার নৌকার কারিগররা।
আরও পড়ুন: পানগুছি বলেশ্বরের ইলিশের স্বাদ-গন্ধে জুড়ি নেই
নদীমাতৃক এ দেশে বর্ষা মৌসুমে নিম্নাঞ্চলের মানুষের বাহন হিসেবে নৌকার প্রচলন আবহামান কালের ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে জড়িত। বন্যাকবলিত এ এলাকায় মানুষের পারাপারে নৌকাই তাদের ভরসা। বর্ষাকালে মৎস্যজীবীরা মাছ ধরার কাজে ব্যবহারসহ নিচু এলাকার মানুষের নৌকার প্রচলন অতি গুরুত্বপূর্ণ।
বাগেরহাটের চিতলমারীর উপজেলার নালুয়া বাজারের নৌকার ব্যবসায়ী রমজান শেখ ও জাহাঙ্গীর শেখ জানান, বর্ষা মৌসুমে তারা প্রতিনিয়ত নৌকা তৈরীর কাজে ব্যস্ত থাকেন। এখান থেকে পাইকারি এবং খুচরা হিসাবে নৌকাগুলো বিক্রি করা হয়।
আরও পড়ুন: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আখচাষির মুখে হাসির ঝিলিক
নৌকার কারিগর নেয়ামত শেখসহ অন্যরা জানান, তারা চুক্তিভিত্তিক মালিকদের কাজ করেন। দৈনন্দিন যে মুজুরী পান, তাতে তাদের পরিবার স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারে।
জানা গেছে, দুর-দুরন্তের হাট বাজারের ব্যাপারিরা এখান থেকে পাইকারি দামে নৌকা কিনে বিবিধ যানবাহনে নিয়ে যান। ৮-১০ হাত দৈর্ঘ্যের নৌকা চার থেকে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নৌকা বড় হলে দামও বাড়ে। সেগুলোর মূল্যচুক্তি মোতাবেক, ১৩ থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে তৈরি করে দেয়া হয়।
আরও পড়ুন: ফসলের মাঠে কৃষকের প্রকৃত বন্ধু সাইদুল ইসলাম
সাবোখালী গ্রামের পংকজ রাজবংশী ও কাঙাল রাজবংশীসহ অনেকে জানান, বর্ষার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এলাকার অধিকাংশ জেলে নৌকা দিয়ে মাছ শিকার করেন। নিম্নাঞ্চলের কৃষকেরা বছরজুড়ে তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য বিপনণের জন্য নৌকা ব্যবহার করে থাকেন। চিংড়ি ও সাদা মাছের ঘেরেও বিপুল পরিমাণ নৌকা ব্যবহার হয়।
নৌকা তৈরির কারিগর (মিস্ত্রি) মোঃ হাসান শেখ ও মো. রুহুল আমিন ও মোঃ হাবিল রহমান বলেন, ছোটবেলা থেকে বর্ষার সময় নৌকা তৈরি করি। বড় নৌকার চেয়ে ছোট ডিঙ্গি ও কোশা নৌকার চাহিদা বেশি। এতে প্রতিটি ১২ হাতের নৌকা বানাতে ৫-৬ হাজার টাকা খরচ হয়। বিক্রি করা যায় ৭-৮ হাজার টাকায়।
আরও পড়ুন: পাখিরাও পরকীয়ায় জড়াচ্ছে
নালুয়া এলাকার স্মিল মিস্ত্রি ও নৌকা তৈরির কারিগর মোঃ জাহাঙ্গীর বলেন, বর্ষা মৌসুম এলে নৌকা তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকি। এ সময় নৌকার চাহিদা বেড়ে যায়। আমরাও অতিরিক্ত কিছু আয় করতে পারি। একটি ছোট নৌকা তৈরি করতে ৪০০০ টাকার কাঠ লাগে। একটি নৌকা বানাতে দুইজন মিস্ত্রী ২ দিন সময় লাগে।
তাদের মজুরী দিতে হয় ২০০০ টাকা। তবে কাঠের দাম ও হেলপারদের মজুরী বেড়ে যাওয়ায় লাভ তুলনামূলক কম হয়। বাণিজ্যিকভাবে বড় আকারের ৫০ হাতের একটি কাঠের নৌকা তৈরি করতে প্রায় চার লাখ টাকা খরচ হয়।
আরও পড়ুন: ভালুকায় ঋতুরাজ বসন্তে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে শিমুল-পলাশ
নৌকা কিনতে আসা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, বর্ষা মৌসুম এলেই নিচু এলাকাতে নৌকার প্রয়োজন দেখা দেয়। নিচু এলাকা হওয়ায় বন্যার পানিতে রাস্তা তলিয়ে যায়। তখন নৌকা ছাড়া চলাচলের কোনো উপায় থাকে না। তখন নৌকাই যাতায়াতের একমাত্র ভরসা। এছাড়া অনেকেই পুরাতন নৌকা মেরামত করে নিচ্ছেন ব্যবহারের উপযোগী করে তোলার জন্য।
সান নিউজ/এনজে