আসাফুর রহমান কাজল:
মৌসুমটা শীতের হলেও সেদিন দুপুর ঠিক ২টা। মাথার উপর সুর্য, খরতাপে ছড়াচ্ছে চারদিকে। ২৫-২৬ বছরের এক যুবক রাস্তার পাশে বসে পানি খাচ্ছে।
ছোট্ট ছাউনির ভেতর বসার জায়গাটা পরিচ্ছন্ন, পানির মগের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে লম্বা শেকল। রয়েছে সুদৃশ্য পানির একটা ট্যাব। পানি খাওয়া শেষে মগটি রেখে চলেও যাচ্ছেন পেশায় সেন্টারিং মিস্ত্রি মো. মুন্না শেখ। তার মতো অনেকেই প্রতিদিন এখান থেকে পানি পান করেন।
খুলনা নগরীর বয়রা জলিল স্বরণীর (পিএমজি কলোনীর সামনে) পাশে তৃষ্ণানার্থদের এরকম সুপেয় পানি পানের বিশেষ ব্যবস্থা করে দিয়েছেন স্থানীয় এজাজ মোহাম্মাদ। পেশায় তিনি সরকারি চাকুরিজীবী।
মুন্না জানায়, পাশের বাড়ীতে সেন্টারিং এর কাজ করতিছি। আজ অনেক গরম। গলা বারবার শুকায় আসতিছে। তাই এইহেনতে থেকে পানি খাচ্ছি। এই পানি অনেক ভাল, নিরাপদও।
কিছুক্ষনের মধ্যে পাশের স্কুলও ছুটি হলো। দল বেঁধে ছুটে চলেছে ছেলে-মেয়েরা। তাদের অনেককে দেখা গেল পানির কলের কাছে এসে পানি খেতে। আবার কেউ কেউ বোতলে ভরেও পানি নিচ্ছে।
মিনিট পাঁচেক পর সেখানে আসে একদল যুবক। প্রত্যেকের কাঁধে ব্যাগ। কথা হয় সেই দলে থাকা মো. সাকিব হোসেন এর সঙ্গে। তিনি জানান, আমরা পাশের একটি কোচিংয়ে পড়তে আসি। অনেক গরম পড়ায় পানি পিপাসা লেগেছে প্রচুর। তাই পানি খাচ্ছি। অনেকদিন ধরে দেখছি এখানে কে যেন বিশুদ্ধ পানির কল বসিয়েছে। এখানকার পানি অনেক ভাল। বোতলে কেনা পানির মতো মনে হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় এজাজ মোহাম্মাদ এবং তার ভাই-বোনরা মিলে এই পানির কল বসিয়েছেন। রিভার্স অসমোসিস ওয়াটার পিউরিফাইয়ার স্থাপন করে তারা পথচারীদের জন্য সুপেয় এই পানির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
এর কারণ জানতে চাইলে এজাজ মোহাম্মাদ জানান, তৃষ্ণার্তকে পানি পান করানোর মতো ভাল কাজ আর হতে পারে না। আমার মা মারা গেছেন। তার আত্মার মাগফিরাত কামনায় এবং সদকায়ে যারিয়াহ হিসেবে আমরা ৯ভাই-বোন মিলে এই উদ্যোগ নিয়েছি। কতটা ভাল হয়েছে, তা জানি না। তবে যখন মানুষ এখানে এসে বসে পানি পান করে, তখন আনন্দে চোখে পানি চলে আসে। খুব ভাল লাগে। এ এক অন্যরকম অনুভূতি।
সবকিছু মিলিয়ে এটি স্থাপনে খরচ পড়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। নিজের বাড়ীর তৃতীয় তলার বারান্দায় স্থাপন করা হয়েছে সকল সরঞ্জামাদি। সেখান থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে নিচে রাস্তার পাশে পানির কলে সংযোগ দেয়া হয়েছে।
সবসময় রিজার্ভে ৪০ লিটার পানি মজুদ থাকে। মাঝে মাঝে মেশিনের কিছু সরঞ্জাম পরিবর্তন করতে হয়। এজাজ মোহাম্মাদ নিজেই এর রক্ষনাবেক্ষণ করেন।
তিনি জানান, মানুষের সেবায় এমন কাজ আমরা আরও করতে চাই। ছোট বেলা থেকে আমরা বেড়ে উঠেছি খালিশপুরে। সেখানে একটি মসজিদ আছে। এমন একটি পানির কল আমরা সেখানেও স্থাপন করবো খুব শিগগির।
জনস্বার্থে এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয়। দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় সুপেয় পানির অভাব রয়েছে ব্যাপক। এজাজ মোহাম্মাদদের মতো সমাজের বিত্তবানরা এভাবে এগিয়ে আসলে অনেকেই এমন সুপেয় ও নিরাপদ পানি পান করতে পারেন।
সান নিউজ/সালি