সাধারনত অপরাধীরা থাকেন কারাগারে। বিচারে দোষী প্রমাণিত হলে তাদের সংশোধনের জন্য পাঠানো হয়। কারাগারে সাধারন বন্দিদের জীবন হয় একদম সাধাসিধে। নুন্যতম খাবার আর থাকার জায়গা ছাড়া তেমন কোন সুযোগ সুবিধা পাননা তারা। আর সশ্রম কারাদন্ড হলে নিয়মিত কাজেও যেতে হয়।
কিন্তু ইউরোপের দেশ স্পেনের জেলখানাগুলো একদমই ভিন্ন। ইউরোপের সবচেয়ে কম অপরাধ সংগঠিত হওয়া দেশের মধ্যে তৃতীয় এ দেশটির মোট কারাগারের সংখ্যা ৯৮টি। আর মোট বন্দির সংখ্যা ৬১হাজার ৫৬৮জন যা দেশটির জনসংখ্যার হিসেবে প্রতি লাখে ১৩৩জন। এদের মধ্যে ৮হাজার ৬৯৯জন বিদেশী বন্দি। আর মোট বন্দির ৯২ভাগ পুরুষ এবং ৮ভাগ নারী।
সুযোগ সুবিধার ভিত্তিতে কারগারগুলোকে তিন, চার ও পাঁচ তারকা দিয়ে বিভক্ত করা হয়। দেশটির একটি বিশেষ কারাগারের নাম ‘অ্যারনজুয়েজ কারাগার’। স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদ থেকে ৪২ কিলোমিটার দক্ষিণে অ্যারনজুয়েজ শহরে অবস্থিত এই কারাগার। এটি বিশ্বের একমাত্র কারাগার, যেখানে কারাবন্দিরা তার পরিবারের সঙ্গে থাকতে পারে। এই বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হয় কারাবন্দিদের শিশুদের কথা ভেবে। শিশুরা যাতে তার বাবা কিংবা মায়ের অভাববোধ না করে তাই তাদের কারাগারেই থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।
পরিবার নিয়ে থাকার জন্য আরানজুয়েজ কারাগারে ৩৬টি সেল রয়েছে, যেগুলো পাঁচ তারকা সেল হিসেবে পরিচিত। সেগুলোর মধ্যে বর্তমানে ১৬টি সেলে কারাবন্দিরা সপরিবারে বাস করছে। শিশুদের শিক্ষা অর্জনের জন্য কারাগারে একটি নার্সারি স্কুলও রয়েছে। পরিবারের সেলগুলোর দেয়ালে কাকড়া, ডিজনির বিভিন্ন কার্টুন চরিত্রের ছবি রয়েছে শিশুদের বিনোদনের জন্য। এছাড়া শিশুদের লেখাধুলার জন্য আছে মাঠ। তাদের বয়স তিন বছর হলে তাদের কারাগার ত্যাগ করে আত্মীয়স্বজনদের কাছে থাকতে হয়।
অ্যারনজুয়েজ জেলের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এটি বিশ্বের একমাত্র জেল যেখানে পরিবারের জন্য আলাদা সেল রয়েছে। প্রশস্ত পাঁচ তারকা সেলগুলির দেয়াল কাকড়া ও ডিজনির বিভিন্ন কার্টুন চরিতত্রের মাধ্যমে সাজানো এবং প্রিজন খেলার মাঠের ব্যবস্থা রয়েছে।’
সেখানে প্রতিদিন সকালে কারারক্ষিরা তাদের রোল কলের জন্য জাগিয়ে তোলেন। দিনে নিয়মিত তিন বেলা সবার রোল কল করা হয়। সারাদিনের নিয়মিত কার্যক্রমের পর দিনশেষে রাত ৯টায় পরিবারগুলোকে তালাবদ্ধ রুমে পাঠানো হয়।
ভিক্টর লোজনো নামের একজন বন্দীর স্ত্রী বলেন, ‘তারা আমাদের ভালো যত্ন নেয়। সন্তান ও স্বামীর সঙ্গে থাকতে পারায় এটি আমাকে খুবই আনন্দিত করে তোলে। তবে সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য এটি খুব ভালো জায়গা নয়, কারণ বাচ্চারা কিছুদিনের জন্য হলেও কারাবন্দী হয়ে থাকছে।’
পরিবারের সেলের রুমগুলো একেকটি দেড়শ বর্গফুটের। সেখানে ডাবল বিছানা এবং একটি খেলনা ভর্তি ঝুড়ি থাকে। এছাড়া ছোট একটি বাথরুম এবং বাইরের দিকে জানালা রয়েছে।
রোমানা মনটোয়া নামের এক বন্ধী বলেন, ‘এখানকার সবকিছু শিশুবান্ধব। এটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, তারা আপনাকে শিশুর জন্য সর্বোত্তম দুধ দেবে, সপ্তাহে দুবার ডাক্তার আসে এবং ঘরগুলি সুন্দর হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘কেবলমাত্র যে বিষয়টি আমাকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে আমি কারাগারে আছি তা হল দিনে তিনবার রোল কল।’
লন্ডন ভিত্তিক হাওয়ার্ড লিগের পেনাল রিফর্মের পরিচালক ফ্রান্সেস ক্রুক বলেছেন, ‘এটা মোটেই ভালো সুযোগ নয়, জেলখানা শিশুদের জন্য সঠিক স্থান নয়।’
তিনি আরো যোগ করেন, ‘অনেক প্রমাণ রয়েছে যা দেখায় যে তারা দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তারা প্রাণী দেখে না, গাছ দেখে না, সুস্থ শিশু হিসাবে বেড়ে ওঠার জন্য যে উদ্দীপনা প্রয়োজন।’
পরিবারের সেলগুলি সফল হয়েছে জানিয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, যেকোন শিশু তার বাবা-মা থেকে আলাদা হয়ে গেলে সংবেদনশীলভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। আপাতত প্রোগ্রামটি সম্প্রসারণের কোন পরিকল্পনা নেই তাদের।