এহসানুল হক, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ): ‘অভাবের সংসারে ছুডো (ছোট) বেলায় পড়ালেহা (লেখাপড়া) করার তেমন সুযোগ-সুবিধা পাইছি না বাবাজি। বিভিন্ন জায়গায় কাম-কাজ করেও সুবিধা করতাম (করতে) পারছি না। এ কারণে মূর্খ হয়ে অভাবের সংসারে হাল ধরতে শুরু করি ভাঙারির ব্যবসা।’
আরও পড়ুন: ভারতকে নিষিদ্ধ করল ফিফা
এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়নের কুমুড়িয়ারচর গ্রামের বাসিন্দা ভাঙারি ব্যবসায়ী নূর ইসলাম (৬০)।
নূর ইসলাম দীর্ঘ ২৫ বছর যাবৎ করছেন ভাঙারির ব্যবসা। প্রতিদিন সকালে ভ্যান নিয়ে বের হন। বিভিন্ন এলাকায় ভ্যান গাড়ি চালিয়ে ভাঙা প্লাস্টিকের জিনিসপত্র, পরিত্যক্ত লোহা, টিন ও পুরোনো বই-খাতা মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কেনেন। এসব জিনিসপত্র বিকেলে উপজেলার লক্ষীগঞ্জ বাজারে বিক্রি করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরেন। এর থেকে যা আয় করেন তা থেকে কিছু সংসারের জন্য খরচ করেন। সম্প্রতি জ্বালানি তেল, চাল–ভোজ্য তেল, ডিমের মতো কিছু নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিতে বেকায়দায় পড়েছেন নূর ইসলামের মতো এ পেশার স্বল্প আয়ের মানুষেরা।
আরও পড়ুন: স্ত্রীকে গুলি করে খুন, স্বামীর মৃত্যুদণ্ড
নূর ইসলামের সংসারে স্ত্রী, সাত ছেলে ও চার মেয়ে রয়েছে। তাদের মধ্যে তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। বড় ছেলে রানা বাবার পেশায় ভাঙারি বেচাকেনা জীবিকা নির্বাহ করেন। দুই ছেলে ও এক মেয়ে পড়ালেখা করেন স্থানীয় পিতাম্বর পাড়া মাদ্রাসায়। ভাঙারি বেচাকেনা করে দৈনিক ৩০০-৪০০ টাকা রোজগার করেন। দ্রব্য-মূল্যের ঊর্ধ্ব গতির কারণে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, নুন আনতে পান্তা ফুরায় বাবাজি। কোনমতে ঘষে-মেজে চলতাছি। কি করব বলেন? বাজারে সবকিছুর দাম বেশি। কামাইয়ের (আয়ের) সাথে খরচের (ব্যয়ের) কোন মিল নেই। আমাদের এ পেশার মানুষেরা খুব বেকায়দায় আছে বাজান। সকালে ঘুম থেকে ওঠে ভ্যান গাড়ি নিয়ে বের হই। সারাদিন ঘুরে কিছু ভাঙা জিনিসপত্র পাই, তাও আগের মতো এখন আর ভাঙাচোরা জিনিসপত্র বেশি পাওয়া যায় না।
আরও পড়ুন: অশ্লীল ছবি তুলে চাঁদাবাজি
আগে সব জায়গায় ঘুরতাম, ১৬-১৭ বছর ভাঙারির খাচা মাথায় নিয়ে ঘুরে ঘুরে এ ব্যবসা করেছি। এখন পাকা রাস্তা দিয়ে ভ্যান নিয়ে ঘুরতে হয়। কাঁচা রাস্তায় কাঁদা থাকায় গাড়ি নিয়ে ঢুকতে পারি না। বয়স হয়েছে, শরীরে আর কুলাই না। তবুও পেটের দায়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরি।
ঈশ্বরগঞ্জ ইউনিয়নের সরশি গ্রামের মোঃ জসিম উদ্দিন নামের একজন নূরুল ইসলামের কাছে ভাঙারি জিনিসপত্র বিক্রি করছেন ২০০ টাকায়। তিনি বলেন, বাড়ির কিছু পরিত্যক্ত পুরাতন লোহা, টিন ও প্লাস্টিকের জিনিস বিক্রি করে ২০০ টাকা পেলাম। এতে বাড়ির অকেজো জিনিসগুলো কাজে লাগলো। পাশাপাশি কিছু টাকাও পেলাম। এতে যেমন আমি উপকৃত হলাম, তেমনি যারা এ পেশার সাথে যুক্ত মানুষেরাও লাভবান হয়।
আরও পড়ুন: স্ত্রীর সাথে অভিমানে ফাঁস দিল স্বামী
রুমা আক্তার নামের এক গৃহিণী বলেন, এখন তো সবাই মজবুত ও আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর জিনিসপত্র কেনে, তাই নষ্ট কম হয়। যেগুলো নষ্ট হয় সেগুলো ভাঙারি হকারদের কাছে বিক্রি করে দিই। এতে বাড়ির আঙিনা পরিষ্কার থাকে। এরা (ভাঙারি হকারা) শুধু আমাদের উপকারই করে না, পরিবেশকেও ভালো রাখে।
মিতু নামের এক কলেজ ছাত্রী বলেন, আমার পরিত্যক্ত পুরোনো বই-খাতা মাঝে মধ্যে হকারদের কাছে বিক্রি করি। বিক্রি করে যে টাকা পাই তা দিয়ে আমার খাতা-কলমের খরচ যোগাতে সহায়তা হয়। এদিকে, দিয়ে এ পেশার মানুষেরা ছাত্র-ছাত্রীদেরও উপকার করে। তাই কোন পেশাই ছোট নয়, আমাদের সকল পেশার মানুষকে শ্রদ্ধা করা উচিৎ।
সান নিউজ/কেএমএল