এহসানুল হক, ঈশ্বরগঞ্জ, ময়মনসিংহ: সংসারের অভাব-অনটন থেকে রেহাই পেতে সাগর কলা চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার চাষি আবুল হাশেম। প্রথমে ৪ কাঠা জমি চুক্তি ভিত্তিক ভাড়া নিয়ে সাগর কলার চাষ শুরু করেন তিনি।
আরও পড়ুন: জাপান-যুক্তরাষ্ট্রে মহামারি
এ সময়ের মধ্যে কঠোর পরিশ্রম, সততা আর মেধা কাজে লাগিয়ে স্বাবলম্বী হন হাশেম। পরে তিনি আরও ৬ কাঠা জমিতে সবরিকলা চাষ শুরু করেন। এখন তিনি মোট ১০ কাঠা জমিতে কলা চাষ করেছেন।
হাশেমের আর্থিক সচ্ছলতা দেখে তাকে অনুসরণ করে আশে-পাশের গ্রামের আরও বেশ কয়েকজন কৃষক কলা চাষে ঝুঁকেছেন। কেউ কেউ ইতোমধ্যে আলোর মুখও দেখছে কলা চাষে। অন্য যে কোনো ফসলের চেয়ে কলাচাষে দ্রুত লাভবান হওয়ায় ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় কলার চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের।
আরও পড়ুন: সরকারের কোনো দরদ নেই
কলা চাষিরা বলছেন, দুই থেকে তিন ফুট লম্বা কলা গাছের চারা লাগানোর অল্প দিনেই ফল পাওয়া যায়। সাগর কলার চারা একবার রোপণ করলে পুনরায় তা আর রোপণ করতে হয় না। গাছের কলা এক বার পূর্ণাঙ্গ বয়স হলে কেটে ফেলার কিছুদিন পর ওই গাছের গোড়া থেকে নতুন চারা জন্মায়।
কলা চাষি আবুল হাশেম বলেন, যে জমিতে বৃষ্টির পানি আটকে থাকে না এমন জমি কলা চাষের জন্য উপযোগী। আমি প্রথমে ৪ কাঠা জমিতে প্রায় ৪শ থেকে ৫শ কলার চারা রোপণ করি। এতে কলা চাষে খরচ হয় ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা। চারা রোপণের কয়েক মাস পর প্রায় এক থেকে দেড় লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছি।
আরও পড়ুন: আমার পরিবহন আমি দেখছি
তিনি আরও জানান, পরে আবার ৬ কাঠা জমিতে সবরি কলার চাষ করেন। সেখানে ৭ থেকে ৮শ চারা রয়েছে। তাতে উৎপাদন খরচ হয় ২৩ থেকে ২৫ হাজার টাকা। সেখান থেকে ৪ লক্ষ টাকার কলা বিক্রির আশা করেছেন কলা চাষি হাশেম।
আবুল হাশেম বলেন, সাগর কলা বিক্রি করে যা আয় হয় তা আমার সংসারের ব্যয় ও ছেলে-মেয়ের পড়ালেখার পেছনে খরচ করি। আমার কলা চাষ করা দেখে আশে পাশের অনেকেই কলা চাষে ঝুঁকেছেন বলেও জানান চাষি আবুল হাশেম।
আরও পড়ুন: সরকারের কোনো দরদ নেই
অপর কলা চাষি লিয়াকত বলেন, হাশেম ভাইকে অনুসরণ করে আমিও কিছু জমিতে সাগর কলাসহ কয়েকটি জাতের কলার চাষ করেছি। অন্য ফসল বিক্রিতে কিছু ঝামেলা থাকে। কিন্তু কলা বিক্রিতে কোনো ঝামেলা নেই। খুচরা পাইকাররা জমি থেকেই কলা কেটে নিয়ে যান। সবরি কলার কাঁদি ৪০০-৫০০ টাকা, সাগর কলার কাঁদি পাইকারি বিক্রি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা বিক্রি হয়।
স্থানীয় এক পাইকার বলেন, আমাদের উপজেলার মাটি কলা উৎপাদনের জন্য ভালো। সারাদেশে সাগর কলা, সবরি কলা কদর রয়েছে। এলাকার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাইকাররা কলার চারি নিয়ে যায়।
আরও পড়ুন: পাটের গুদামে অগ্নিকাণ্ড
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নুসরাত জামান বলেন, স্বল্প খরচে কলা চাষ লাভজনক হওয়ায় চাষিরা কলা চাষ করছেন। আমরা মাঝে-মধ্যে ফল চাষিদের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। এছাড়া আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কলা চাষিদের খোঁজ-খবর রাখছেন। তারা বিভিন্ন সময় চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছে বলেও জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।
সান নিউজ/কেএমএল