এহসানুল হক, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ): ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় কৃষাণ-কৃষাণীরা এখন পাট কাটা, পানিতে ডোবানো,পাটের আশঁ ছাড়ানো ও পাট ধোয়ার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষাণ-কৃষাণীরা খাল-বিল,রাস্তা-ঘাট, মাঠ ও বাড়ির আঙিনায় পাটের আঁশ ছাড়ানোর কাজ করছে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত।
আরও পড়ুন: গণতন্ত্র থাকলে দেশের উন্নতি হয়
উপজেলার ১ নং ঈশ্বরগঞ্জ, রাজিবপুর, জাটিয়া, মাইজবাগ, উচাখিলা, আঠারবাড়ি, তারুন্দিয়া, মগটুলা, সরিষা, সোহাগি ও বড়হিত ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাস্তার দুই পাশে পাটের আঁশ ছাড়াতে ব্যস্ত অনেকেই। তবে এ কাজে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদেরও ব্যস্ত দেখা গেছে।
রাজিবপুর ইউনিয়নের বাটিচর নও পাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, সাফিয়া খাতুন, মালেহা খাতুন ও ঝুলেকা নামের তিনজন বৃদ্ধা মহিলা বিলের পাড়ে বসে পাটের আঁশ ছাড়ানোয় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: মিয়ানমারে বাড়ছে জরুরি অবস্থা
তাদের মধ্যে সাফিয়া খাতুন বলেন, আমরা এইহানো (এখানে) কাজ করতাছি পাটখড়ির লাইগ্গা (জন্য)। নাইল্লা (পাট) ছাড়িয়ে দেওয়ার বিনিময়ে সব
পাটখড়ি আমরা নিয়ামগা (নিয়ে যাব)। দিনে ৪০ থেকে ৫০ আঁটি পাটের আঁশ ছাড়াতে পারলে খড়ি আমরা নিয়া যাইয়াম, আর বাকি পাট মালিকের। এতে মালিকও লাভবান, আমরাও লাভবান।
বয়সের ভারে নুয়ে পড়া মালেহা খাতুন(৮০) বলেন, বুড়াটা(স্বামী) মইরা যাইবার পরে পুলাপাইনও (ছেলে-মেয়েরা) বেশি দেহে না। আর দেখবোই কিবা (কীভাবে)? হেরারেই তো (ছেলে-মেয়েদের) দিন চলে না। বেহেই (সবাই) যার যার সংসার লইয়া (নিয়ে) ব্যস্ত। পেটের দায়ে এহক সময় (বিভিন্ন সময়) এহক কাজ (ভিন্ন ভিন্ন কাজ) করি। তাই অহন (এখন) টাডাহরা রইদের মধ্যেও (প্রখর রোদেও) নাইল্লা (পাট) লইতাছি।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতি ৭.৫৬ শতাংশ
এদিকে, বড়হিত ইউনিয়নের বৃ-পাচাশী গ্রামের পাট চাষি আক্তারুজ্জামান ও মাসুদ মিয়া বলেন, এইবার পাটের ভালো ফলন অইছে। শুনেছি পাটের দাম দাম ভালো। দাম ঠিক থাকলে আগামীতে পাটের চাষ আরো বাড়বো।
অপরদিকে, রাজিবপুর ইউনিয়নের বৃ- দেবস্তান গ্রামের পাট চাষি আসাদুল্লাহ বলেন, এইবার অল্প জমিতে পাট করেছি। গতবছর পাটের ফলন ও দাম কম হওয়ায় লোকসান হয়েছিল। কিন্তু এবার শুনলাম দাম মোটামুটি ভালোই। আমাদের এদিকে পাট মোটামুটি হয়েছে, তারপরও যেটুকু হয়েছে ভালোই। পাটের দাম ভালো থাকায় খরচের টাকা উঠে আসবে। তবে কেউ কেউ বলছেন, বাজারে শুরুতে পাটের দাম ভালো পাওয়া যায়, পরে শেষ দিকে দাম অনেক কমে যায়।
আরও পড়ুন: ২৫ বছর পর রায়, সব আসামি খালাস
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নুসরাত জামান বলেন, উপজেলায় এ বছর ৬২৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। তার মধ্যে দেশি পাট ৩১৫ হেক্টর, তোষা ১৬০ হেক্টর, কেনাফ-১৪০ হেক্টর, মেস্তা পাট ১০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় বেশি। ফলন ভালো থাকার কারণে কৃষকদের পাট চাষে আগ্রহ বাড়ছে। উপজলো কৃষি অফিস থেকে চাষিদের নানাভাবে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সান নিউজ/কেএমএল