এহসানুল হক, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ): ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার তৈরি কীভাবে করবেন? কোথায় যাবেন, কার কাছে যাবেন? সফল হতে পারবেন, নাকি উৎপাদন করতে গিয়ে সর্বস্ব হারাবেন। এমন অনেক প্রশ্ন মনের ভিতর নিয়ে ঘুরছিলেন কেঁচো চাষি মোজাম্মেল হক (৩৫)।
আরও পড়ুন: বাটলার ঝড়ে কোহলিদের বিদায়
এমন সময় তার পাশে দাঁড়ালেন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলী আখছার খান। শুরুতে মোজাম্মেল ভয়ে ছিল কেঁচো সার তৈরি লোকসান গুনতে হয় কি না এবং আর্থিক যোগানেও ছিল অসচ্ছলতা। সে কারণে সাহস পাচ্ছিলেন না মোজাম্মেল। ঠিক তখনই আলী আখছার খান তাকে বলেন, তুমি কেঁচো চাষ শুরু করো প্রয়োজনে আমি তোমাকে আর্থিক সহায়তাসহ প্রয়োজনীয় সকল বিষয়ে সহায়তা করবো, পরে তুমি কেঁচো সার তৈরি সফল হতে পারলে আমাকে টাকা দিয়ে দিও। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার এমন আশ্বাসে বুকে সাহস পায় মোজাম্মেল। শুরু করেন ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার তৈরি। প্রথমে দশটি রিং দিয়ে যাত্রা শুরু করেন মোজাম্মেল। এখন প্রায় একশতটি রিংয়ে কেঁচো সার উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন তিনি।
মোজাম্মেলের বাড়ি উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের পাইকুড়া গ্রামে। তিনি বাড়ির আঙিনায় তিন শতাংশ জায়গার উপর এ চাষ শুরু করেন। কেঁচো খামারে তার দুটি হাউজ রয়েছে।
খামারটি তৈরি করতে ও উৎপাদন বাবদ মোট খরচ হয় দেড় লক্ষ টাকা। ইতিমধ্যে তিনি আড়াই লক্ষ টাকা টাকার কেঁচো ও সার বিক্রি করেছেন। এক মাস পর পর প্রতি রিং থেকে মাসে ২০ কেজি করে কেঁচো সার উত্তোলন করে বিক্রি করতে পারেন বলে জানান মোজাম্মেল।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, ঈশ্বরগঞ্জে রাসায়নিক সারের ব্যবহার ছেড়ে ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সারের) দিকে ঝুঁকছেন কৃষকেরা। রাসায়নিক সারের ক্ষতিকারক দিক বিবেচনা করে উপজেলার কৃষকেরা এখন ব্যাপক হারে ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহার শুরু করেছেন। ফলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতেও শুরু হয়েছে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সারের উৎপাদন।
আরও পড়ুন: বিশ্বে করোনায় একদিনে মৃত্যু ১৩৩০
কৃষক মোজাম্মেল হক আরও জানান, এরই মধ্যে তাঁর প্রায় ১০০টি রিং আছে। পর্যায়ক্রমে আরও ৫০টি রিং স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে তার। তার উৎপাদিত কম্পোস্ট সার ১৩-১৫ টাকা দরে নিজের চাহিদা মিটিয়ে উপজেলার বিভিন্ন কৃষকদের কাছে বিক্রি করেন। এতে তিনি আর্থিকভাবে ব্যাপক লাভবান হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, কেঁচো সার ব্যবহারে মাটির জৈবশক্তি বৃদ্ধি পায় ও পিএইচ মান সঠিক মাত্রায় থাকে। এ ছাড়াও মাটির প্রকৃত গুণ রক্ষা করে, মাটির পানির ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে ফসলে পানি সেচ কম লাগে, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, মাটিকে ঝরঝরে করে ও বায়ু চলাচল বৃদ্ধি করে, উদ্ভিদেও শেকড়ের মাধ্যমে শোষণক্রিয়া স্বাভাবিক রাখে, বীজের অঙ্করোধগম শক্তি বৃদ্ধি করে ও গাছকে সুস্থ-সবল রাখে, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে এতে কৃষকের চাষ খরচ অনেক কম হয়, ফসলের ফলন বৃদ্ধি ও পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করে।
আরও পড়ুন: ঢাকা-উত্তরবঙ্গ ট্রেন চলাচল শুরু
উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলী আখছার খান বলেন, কৃষক মোজাম্মেল প্রথমে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদন করতে একটু ভয়ে ছিলেন। পরে আমি তাকে কেঁচো সার উৎপাদন করতে প্রয়োজনীয় সকল বিষয়ে সহযোগিতা করি। এখন সে ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) চাষ করে সফল হয়েছে। তার পরিবারে এসেছে আর্থিক স্বচ্ছতা।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ২০ জন কেঁচো চাষি রয়েছে। তার মধ্যে বড় আকারের ৮ জন উদ্যোক্তা কেঁচো চাষ করছেন। জৈব পদার্থ হলো মাটির প্রাণ। ক্রমেই মাটির প্রাণ হ্রাস পাচ্ছে। তাই আমরা জৈব সার প্রয়োগের উপরে জোর দিচ্ছি। কেঁচো সারে ফলন ভালো হয় এটা প্রমাণিত। একারণে কেঁচো চাষে অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
সান নিউজ/কেএমএল