এহসানুল হক, ঈশ্বরগঞ্জ : সফলতা অর্জন করার জন্য প্রথমত প্রয়োজন কাজের প্রতি উৎসাহ ও আগ্রহ থাকা। কাজের প্রতি জ্ঞান রেখে কঠোর পরিশ্রম ও সৃজনশীলতার সাথে একাগ্রতা থাকা। এসব দিকে খেয়াল রাখলে সফলতা অর্জন করাটা খুবই সহজ হয়ে যায়। আর তেমনি নিজের আগ্রহ ও পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে কেঁচো সার (ভার্মি কম্পোস্ট) উৎপাদন করে ভাগ্য বদল হয়েছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মো. মনির উদ্দিনের। কেঁচো সার (ভির্মি কম্পোস্ট ) উৎপাদন করে তিনি এখন স্বাবলম্বী। এ সারকে ভার্মি কম্পোস্ট বলা হয়।
আরও পড়ুন: আমার সঙ্গে সঠিক আচরণ করা হয়নি
জানা যায়,ঈশ্বরগঞ্জে রাসায়নিক সারের ব্যবহার ছেড়ে ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সারের) দিকে ঝুঁকছেন কৃষকেরা। রাসায়নিক সারের ক্ষতিকারক দিক বিবেচনা করে উপজেলার কৃষকেরা এখন ব্যাপক হারে ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহার শুরু করেছেন। ফলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতেও শুরু হয়েছে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সারের উৎপাদন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার শিমরাইল গ্রামের ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো) সার তৈরির উদ্যোক্তা কৃষক মো. মনির উদ্দিন (৩৩) নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় ছায়াযুক্ত স্থানে ১ টি রিং স্থাপন করে যাত্রা শুরু করেন।এখন ১৫০টি রিং স্থাপন করেছেন তিনি। এতে পুরোনো গোবর আর রেড বেঙ্গল কেঁচো দিয়ে রিংগুলো ঢেকে রেখেছেন। প্রতিটি রিংয়ে দুই থেকে আড়াই হাজার কেঁচো রয়েছে। কেঁচো গুলো রিংয়ের গোবর খেয়ে মলত্যাগ করে। এই মল চা পাতার মতো হালকা আর ঝুর ঝুর হয়ে রিংয়ের ওপর দিকে উঠতে থাকে। প্রথম একমাস পর রিংগুলো থেকে প্রায় ৩০ মণ ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরি হয়। পরে প্রতি ১০ দিন পর পর ১৫০ টি রিং থেকে পর্যায়ক্রমে ১০ মণ সার উত্তোলন করা যায়।
কৃষক মো. মনির উদ্দিন জানান, এরই মধ্যে তার ১৫০টি রিং আছে। পর্যায়ক্রমে আরও ১০০টি রিং স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে তার। তার উৎপাদিত কম্পোস্ট সার ১৩-১৫ টাকা দরে নিজের চাহিদা মিটিয়ে উপজেলার বিভিন্ন কৃষকদের কাছে বিক্রি করেন। এতে তিনি আর্থিকভাবে ব্যাপক লাভবান হচ্ছেন। তাই এই কেঁচো সার বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করেছেন অনেকেই। তিনি আরও জানান, উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর থেকে আমাকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন কৃষি কর্মকর্তা সাধন কুমার গুহ মজুমদার।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, কেঁচো সার ব্যবহারে মাটির জৈবশক্তি বৃদ্ধি পায় ও পিএইচ মান সঠিক মাত্রায় থাকে। এ ছাড়াও মাটির প্রকৃত গুণ রক্ষা করে, মাটির পানির ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে ফসলে পানি সেচ কম লাগে, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, মাটিকে ঝরঝরে করে ও বায়ু চলাচল বৃদ্ধি করে, উদ্ভিদের শেকড়ের মাধ্যমে শোষণক্রিয়া স্বাভাবিক রাখে, বীজের অঙ্করোধগম শক্তি বৃদ্ধি করে ও গাছকে সুস্থ-সবল রাখে, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে এতে কৃষকের চাষ খরচ অনেক কম হয়, ফসলের ফলন বৃদ্ধি ও পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করে।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাধন কুমার গুহ মজুমদার বলেন, 'কৃষক মনিরকে অনুসরণ করে এখন অনেকেই ভার্মি কম্পোস্ট চাষে আগ্রহী হয়েছে।
আরও পড়ুন: মাদকবিরোধী অভিযানে আটক ৩৬
বর্তমানে উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ২০ জন কেঁচো চাষি রয়েছে। তার মধ্যে বড় আকারের ৮ জন উদ্যোক্তা কেঁচো চাষ করছেন। জৈব পদার্থ হলো মাটির প্রাণ। ক্রমেই মাটির প্রাণ হ্রাস পাচ্ছে। তাই আমরা জৈব সার প্রয়োগের উপরে জোর দিচ্ছি। কেঁচো সারে ফলন ভালো হয় এটা প্রমাণিত। একারণে আমরা চাষিদের সবজি খেতে ও ফলের বাগানে ভার্মি কম্পোস্ট সার প্রয়োগ করতে বলি। কৃষি অফিসের পরামর্শক্রমে এরই মধ্যে উপজেলার আটজন কৃষক ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার তৈরিতে উদ্যোক্তা হয়েছেন। তাদের এমন সফলতা দেখে আরও অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
সাননিউজ/এমআরএস