এহসানুল হক, ঈশ্বরগঞ্জ: ছোট ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল থেকে বাড়ি, বাড়ি থেকে হাসপাতালে ঘোরাঘুরি করে ক্লান্ত বড় ভাই ফরহাদ। ছোট ভাই রেদোয়ান মরণব্যাধি ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে অবুঝ শিশু রেদোয়ান।
আরও পড়ুন: হঠাৎ অস্থির চালের বাজার
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার দত্তপাড়া গ্রামের মুজিবুর রহমানের ছেলে রেদোয়ান। রেদোয়ানের ক্যান্সার শনাক্তের পর থেকে পরিবারের সবার মুখের হাসি ম্লান হয়ে গেছে,নেমে এসেছে অমানিশার কালো ছায়া। ছোট্ট ফুটফুটে রেদোয়ানের বয়স সবে মাত্র ৬ বছর।
এসময় তার গুটি গুটি পায়ে স্কুলে যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস স্কুলের আঙ্গিনায় পা ছোঁয়ার আগেই হাসপাতালের ফ্লোরে জায়গা হয়েছে তার। বর্তমান সময়ের দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে রেদোয়ানের পরিবার সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছে। সেখানে চিকিৎসার টাকা মিলানো সম্ভবই হচ্ছিল না। ব্যয়বহুল পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ডাক্তার খরচ দিনে এনে দিন খাওয়া রেদোয়ানের পরিবারের জন্য অনেক কষ্টের হয়ে পড়েছিল। এসময় পাশে দাড়িয়েছে 'জনতার ঈশ্বরগঞ্জ' নামক ফেইসবুক গ্রুপ।
গত (৩১ মার্চ) বৃহস্পতিবার ও (২ এপ্রিল ) শনিবার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্যান্সারে আক্রান্ত রেদোয়ানকে দেখতে গিয়ে ২ ধাপে প্রায় ১০ হাজার টাকা প্রদান করেছে জনতার ঈশ্বরগঞ্জ গ্রুপ কতৃপক্ষ।
এ বিষয়ে জনতার ঈশ্বরগঞ্জ গ্রুপের এডমিন তরিকুল্লাহ,এল.কে নাহার ও মডারেটর মাহবুব হোসেন রাজু,বায়জিদ হাসান বলেন, আমরা রেদোয়ানের চিকিৎসার জন্য ৮ হাজার টাকা দিয়েছি। আমরা আরও আর্থিক যোগানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধু’র নামে সংগঠন খুলে তামাশা করা চলবে না
এদিকে আরেক দুঃখিনী আমেনা খাতুন। বৃদ্ধার বয়স ৯০ ছুঁই ছুঁই। তার স্বামী মারা গেছেন বহু আগে। সন্তানাদি বলতে দু'টি মেয়ে ছিল তার। এক মেয়ে মারা গেছে,বর্তমানে লাইলী বেগম নামে এক মেয়ে আছে। লাইলী বেগমের বয়সও ৬০ বছর। লাইলীরও স্বামী মারা গেছে ১ যুগের অনেক আগে। একটা দুর্ঘটনায় লাইলীরও পা ভেঙে যায়। এরপর থেকে লাইলী তার এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে বৃদ্ধ মা আমেনা খাতুনের এখানে আশ্রয় নেন। মাথা গুজার জমি টুকুও রেখে যাননি আমেনা খাতুনের স্বামী। বর্তমানে বড় মেয়ের এক নাতির বাসায় আশ্রয় নিয়েছে মা-মেয়ে। বয়সের ভাড়ে নুইয়ে পড়েছেন তিনি। একদিকে ঘরে থাকা প্রতিবন্ধী মেয়ের চিকিৎসার খরচ জোগাতে, অন্যদিকে দু'বেলা দু'মুঠো ভাতের জন্য প্রতিনিয়ত ভিক্ষা করতে বেরোতে হচ্ছে আমেনা খাতুনকে
ভিক্ষাকরে যে টাকা পান, সেটা দিয়ে মেয়ের জন্য ওষুধপাতি কিনেন এবং বাকিটা নাতির সংসারে দিচ্ছেন। এ'ভাবেই দুঃখ দুর্দশা নিয়ে দিনানিপাত করছেন আমেনা খাতুন।
বর্তমানে তারা উপজেলার কাকনহাটি গ্রামের ভোটার। জানা যায়, বর্তমান সরকারের এতো এতো গরীব-দুঃখী মানুষের জন্য অনুদানের পরও এই বয়সে এসে এখনও কোন বয়স্কভাতা কিংবা বিধবাভাতার কার্ড পাননি আমেনা খাতুন ও তার মেয়ে। পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে আমেনার খাতুনের চোখে মুখে চিন্তার ভাজ পড়েছে। রোজা থেকে কীভাবে করবে ভিক্ষা,আর কীভাবে চালাবেন সংসার।
আরও পড়ুন: রাজধানীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে তরুণের মৃত্যু
এমন দুরবস্থায় তাদের সাময়িক দুঃখ কিছুটা লাঘব করতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে 'জনতার ঈশ্বরগঞ্জ' ফেইসবুক গ্রুপ। শনিবার (২ এপ্রিল) 'জনতার ঈশ্বরগঞ্জ' গ্রুপের এডমিন ও মডারেটরদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মাহে রমজান উপলক্ষে আমেনা খাতুনকে ১ কেজি তেল,২ কেজি ছোলা বুট,৫ কেজি মুড়ি,২ কেজি ডাল,৫ কেজি পেঁয়াজ, ১ কেজি রসুনসহ মোট ১৬ কেজি পণ্য সামগ্রী কিনে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। এ-সময় 'জনতার ঈশ্বরগঞ্জ' ফেইসবুক গ্রুপ ক্রিয়েটর ও এডমিন এহসানুল হক, ইলিয়াস উদ্দিন সম্রাট, ও মডারেটরগণ উপস্থিত ছিলেন।
সাননিউজ/এমআরএস