ফিচার প্রতিবেদক:
দিনাজপুরের বিরল উপজেলার মোঙ্গলপুর ইউনিয়নের রুদ্রপুর গ্রামে অবস্থিত ‘দীপশিখা মেটি স্কুল’। একেবারে অজপাড়াগাঁয়ের এই স্কুল কেবলই একটা সাধারণ স্কুল হিসেবেই মনে করার কারণ নেই।
এর প্রথম ও প্রধান বৈশিষ্ট্যই হলো এটি পুরোটা মাটি ও বাঁশের তৈরি।
স্কুলটি এখানেই থেমে নেই, স্কুলটির ভিন্নধর্মী নির্মাণশৈলীর কারণে এর নাম ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে। এই নান্দনিক শিল্পের জন্য আগা খান আর্কিটেকচার অ্যাওয়ার্ডও অর্জণ করেছে স্কুলটি।
তবে শুধু স্থাপত্যেই স্বাক্ষর রেখে থেমে থাকেনি স্কুলটি, এর পাশাপাশি শিক্ষাতেও ছাপ রেখে চলেছে।
‘দীপশিখা’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করে। এর নাম দেয়া হয় ‘দীপশিখা মেটি স্কুল’।
আনন্দের মাধ্যমে শিক্ষাদান, শিক্ষার প্রতি স্থায়ী ও ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি, যুক্তিযুক্ত চিন্তার বিকাশ ও দলীয়ভাবে শিক্ষাগ্রহণ এসবই স্কুলটির প্রধান উদ্দেশ্য।
দ্বিতল এ স্কুলের বৈশিষ্ট্য হলো, কক্ষে শিক্ষার্থীরা গরম-শীতের অনুভূতি তীব্রভাবে অনুভব করে না। আলো-বাতাসের আগমনে স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। কক্ষগুলোও পরিবেশবান্ধব।
১৯৯৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর রুদ্রাপুর গ্রামের ছোট্ট পরিসরে ‘মেটি স্কুল’ গড়ে তোলে। তবে আলোচিত এই স্থাপনাটির নির্মাণ শুরু হয় ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে।
এই স্কুলটি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে মাটি, খড়, বালু ও বাঁশ, দড়ি, খড়, কাঠ, টিন, রড, ইট ও সিমেন্ট। মাটি ও খড় মেশানো কাদা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এর দেয়াল।
দেয়ালের ভিতের ওপর দেয়া হয়েছে আর্দ্রতারোধক। দেয়ালের প্লাস্টারে ব্যবহার করা হয়েছে মাটি ও বালু। মেঝের প্লাস্টারে পামওয়েল ও সাবানের পেস্ট ব্যবহার করা হয়েছে, যা সাধারণভাবে ওয়াটারপ্রুফ।
৯ ফুট উচ্চতার ওপরে প্রথম তলায় ছাদ হিসেবে বাঁশ বিছিয়ে ও বাঁশের চাটাই দিয়ে মাটির আবরণ দেয়া হয়েছে। ওপরে বৃষ্টির পানির জন্য দেয়া হয়েছে টিন।
মেটি স্কুল ছয় কক্ষ বিশিষ্ট মাটির তৈরি একটি দোতলা ভবন। এর আয়তন ৮ হাজার বর্গফুট। ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৭ লাখ টাকা।
অথচ ইট-সিমেন্টের এমন একটি বিল্ডিং তৈরিতে ব্যয় হবে ৯০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা।
জার্মানির ‘শান্তি’ দাতা-সংস্থার অনুদানে এই স্কুল নির্মিত হয়। অস্ট্রিয়ার লিজ ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা এ স্কুল নির্মাণে অবদান রাখেন।
সহযোগিতা করেন দীপশিখা প্রকল্পের কর্মীরা। জার্মান আর্কিটেক্ট আন্না হিয়ারিংগার ও আইকে রোওয়ার্গ এর তত্ত্বাবধান করেন।
২০০৭ সালে বিশ্বের ১৩টি স্থাপত্যের সঙ্গে মেটি স্কুলকে আগা খান অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করা হয়। পুরস্কার হিসেবে দীপশিখাকে ১৩ হাজার ৭০০ মার্কিন ডলার প্রদান করা হয়। এছাড়া আর্কিটেক্ট আন্না হিয়ারিংগারকে ১৬ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার ও আর্কিটেক্ট আইকে রোজওয়ার্গকে ৮ হাজার ২০০ ডলার দেয়া হয়।
এতসবের পরও দেশের অন্যসব স্কুলের মধ্যে এটাই একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেটি কিনা ভিন্ন আঙ্গীকে সবার নজর কেড়েছে।
আরও কিছু ছবি...
আনন্দের পাঠ দান
শিক্ষায় শিশুরা
ক্লাসের অবসরে
পুরো স্কুল ভবন
নির্মাণের সময়
সান নিউজ/সালি