সাজ্জাদুল আলম খান, ভালুকা (ময়মনসিংহ): প্যারোট পোকা হাঁস-মুরগি ও মাছের প্রাকৃতিক খাবার। এই পোকা প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হচ্ছে ‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’ থেকে। অল্প খরচে এই পোকা উৎপাদন করে হাঁস-মুরগি ও মাছের খাবারের চাহিদা মেটানো সম্ভব এতে খামারিদের বেশি দামে বাজার থেকে ফিড কিনতে হবে না। তারা নিজেরাই পোকা উৎপাদন করতে পারবেন। ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার সদর ইউনিয়নের মেহেরাবাড়ি নামক স্থানে বানিজ্যিক ভাবে চাষ হচ্ছে ব্ল্যাক সোলজার। স্থানীয় আমিন খান জনি নিজ উদ্যেগে এই ব্ল্যাক সোলজার চাষ করছেন।
আরও পড়ুন: নির্বাচন যেন অংশীদারিত্বমূলক হয়
ভালুকা ইন্ডাস্ট্রিয়াল শিল্প অঞ্চল হলেও ভালুকায় রয়েছে কৃষি শিল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মৎস্য শিল্প, পাশাপাশি ভালুকায় রয়েছে পোল্ট্রি শিল্প ও বিভিন্ন দেশীয় ছোট বড় হাঁস মুরগি কবুতরসহ অনেক ধরনের গবাদিপশু-পাখির খামার। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রাণি শ্রেণির খাদ্য চাহিদার যোগানে বৃহৎ পরিমাণে হলেও ক্ষুদ্র অংশে অন্যতম ভূমিকা পালন করছে।
ভালুকায় মৎস্য চাষের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে, রয়েছে ব্যাপক সফলতা অর্জনের জায়গা। তাই ভালুকার মৎস্য শিল্পে মৎস্য খাদ্যের নতুন সম্ভাবনার দোয়ার উন্মোচন করতেই এই বিকল্প চিন্তা। শতভাগ সফলতা অর্জন চিন্তাকে মাথায় রেখেই আগামীর প্রজন্মকে খাদ্য পরিপূরক যাত্রায় নির্ভেজাল প্রাকৃতিক খাদ্যের যোগানে উৎসাহ ও উদ্দীপিত করতেই এই উদ্যোগ।
বর্তমানে স্বল্প সংখ্যায় উৎপাদিত হচ্ছে এই পোকা। তবে দিনদিন এর পরিধি বাড়ছে। ‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’ থেকে প্যরোট পোকা উৎপাদন বৃহৎ আকার ধারণ করলে এটি এক দিকে যেমন অনেক মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে অন্যদিকে হাঁস-মুরগি ও মাছের খাদ্য চাহিদা পূরণ হবে।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনজুড়ে বিমান হামলা
এখান থেকে প্রস্তুত হবে বিপুল পরিমাণে জৈব সার। ময়লা-আবর্জনা, তরকারির অবশিষ্টাংশ, মুরগির বিষ্ঠা ও খৈলের সংমিশ্রণে দুর্গন্ধযুক্ত খাদ্যে তৈরি হয় ‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’। প্রত্যেক ফ্লাই ৯০০ থেকে ১ হাজার পিউপা দিয়ে মারা যায়। এসব পিউপা একটি পাত্রে নিয়ে দুর্গন্ধযুক্ত খাবারে রাখা হয়। ১৪-১৬ দিনের মধ্যে এসব পিউপা থেকে জন্ম নেয় প্যারোট পোকা।
‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’ থেকে প্যারোট পোকা উৎপন্ন করতে দরকার মশারি নেট, কয়েকটি পাতিল ও কয়েকটি কাঠের টুকরো। একজন খামারি বড় পরিসরে এই পোকা চাষ করলে প্রতিদিন ১০০ থেকে ৫০০ কেজি পর্যন্ত পোকা উৎপন্ন করে লাভবান হতে পারবেন।
আরও পড়ুন: তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রীর মন্তব্য হাস্যকর
জনি বলেন, অর্থনৈতিক ভাবে এই পোকাটির গুরুত্ব অনেক বেশি পশুপাখি বা মৎস্য চাষে ব্যবহার করলে নিজ উদ্যোগের অংশে সাশ্রয়ী হয়ে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে লাভবান হওয়া সম্ভব। বর্তমান বাংলাদেশের জীবন যাত্রায় ব্যাপকভাবে প্রোটিনের চাহিদা পূরনে কৃষি শিল্পের একাধিক অংশের জন্য বানিজ্যিক ভাবে এই মাছি হতে লার্ভার চাষ বা উৎপাদন করে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব।
বর্তমান বাজার দর সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন বর্তমানে বাংলাদেশে এর নির্দিষ্ট কোনো বাজার দর নেই। তবে বাংলাদেশের অনেক জায়গায় এটা চাষাবাদ হচ্ছে এবং অল্প পরিসরে বিক্রিও হচ্ছে। যতটুকু জানা গেছে ক্রেতা বিক্রেতার আলোচনা সাপেক্ষে বিভিন্ন দরে প্রতি কেজি বিক্রি হয়।
আরও পড়ুন: মজুতদার নেতা হলেও ছাড় দেয়া হবে না
ভালুকা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জেসমিন জাহান বলেন, ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই থেকে প্যারোট পোকা উৎপাদন করার পর বর্জ্যের যে অংশ অবশিষ্ট থাকে তা দিয়ে তৈরি হচ্ছে উৎকৃষ্টমানের জৈব সার। পোকার খামারের সঙ্গে অনেকে যুক্ত হচ্ছেন। ধীরে ধীরে এর পরিধি বাড়ছে।
সান নিউজ/এমকেএইচ