শফিক স্বপন, মাদারীপুর: শকুনি লেকটি মাদারীপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত মানবসৃষ্ট একটি দীঘি। লেকটিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে মাদারীপুর শহর। ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শেষ হওয়ায় জেলার ঐতিহ্যবাহী শকুনী লেকটি হয়ে উঠছে জেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রে। আর করোনার নিষেধাজ্ঞা শিথিল হওয়ায় সৌন্দর্য পিপাসু দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভীড়। শুধু মাদারীপুর নয় দূর-দূরান্ত থেকে দর্শানার্থীরা ভীড় করেন লেকটির সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। শকুনী লেকটিকে ঘিরে পরিবর্তন হয়েছে মাদারীপুরের আর্থ-সামাজিক অবস্থার।
আরও পড়ুন: বিএনপির ভরাডুবি, আ’লীগের জয়জয়কার
শকুনি লেকটি মাদারীপুর পৌর এলাকায় শহরের প্রাণকেন্দ্রে ১১১নং শকুনি মৌজায় ১৯ দশমিক ৪৫ একর জমির উপর উপস্থিত। লেকটির দৈর্ঘ্য ৪৮৬ মিটার ও প্রস্থ ১৯৮ মিটার। ঐতিহাসিকদের মতে, পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙ্গন রক্ষায় ১৯৪৩ সালে লেকটি খনন করে এর চারপাশে নতুন শহর স্থাপন করা হয়।
চল্লিশের দশকে এ অঞ্চলে মাটিকাটা শ্রমিকের অভাব থাকায় ২০ একর আয়তনের এই লেক খনন করার জন্য তৎকালীন ব্রিটিশ প্রশাসন ভারতের বিহার ও উড়িষ্যা অঞ্চল থেকে প্রায় ২ হাজার শ্রমিক ভাড়া করে আনে। ৯ মাসে এর খনন কাজ সম্পন্ন হয়। এটি এ অঞ্চলের দীর্ঘতম লেক হিসেবে পরিচিত।
মাদারীপুর টুরিষ্ট ক্লাব এর আহবায়ক সাংবাদিক ফায়জুল শরীফ বলেন, সৌন্দর্য বর্ধণের পর লেকটিকে ঘিরে রয়েছে স্থানীয় ও দূর-দূরান্ত মানুষের উৎসাহ। প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শণার্থী আসেন লেকটি দেখতে। মাদারীপুর শতায়ু ব্যায়াম সংগঠনের কর্মকর্তা ও জেলা শহরের প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ী গোলাম আযম ইরাদ জানান, শুধু সৌন্দর্য দেখার জন্য নয়, মনোমুগ্ধকর পরিবেশ থাকায় সকালে শরীরচর্চা করার জন্য ভীড় করেন শত শত স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ। মাদারীপুর পৌরসভা ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে শকুনী লেকের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করে।
আরও পড়ুন: না পালিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন জেলেনস্কি
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে লেকটির পাশে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল, শহীদ কানন, শিশু পার্ক, স্বাধীনতা অঙ্গন, শান্তি ঘাটলা, সোজন বাদিয়ার ঘাট, পানাহারসহ মাদারীপুর ঘড়ি নামে একটি ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে। এছাড়া লেকের পাশেই গড়ে উঠেছে একটি শিশু পার্ক, যা লেকের সৌন্দর্যকে আরো অনেক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। নতুন করে তৈরি হচ্ছে পলাশী থেকে ধানমন্ডি মনুমেন্ট।
মাদারীপুর পৌরসভার মেয়র মো. খালিদ হোসেন ইয়াদ বলেন, লেকের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে মাদারীপুরসহ দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসছে লেকটি দেখতে। দিন দিন পর্যটন বৃদ্ধির ফলে মাদারীপুরের অর্থনীতিতেও গতি সঞ্চার হচ্ছে। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত আছে।
আরও পড়ুন: গুজব ছড়িয়েই ৫ জনকে কুপিয়ে হত্যা
তিনি আরও বলেন, মাদারীপুর জেলার একমাত্র পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ইতিমধ্যে পরিচিতি লাভ করেছে ঐতিহ্যবাহী শকুনী লেক। লেকটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করে আরো নতুন নতুন পরিকল্পনার গ্রহণ করবে সরকার এমনটাই দাবি মাদারীপুরবাসীর।
সান নিউজ/এমকেএইচ