আমিরুল হক, নীলফামারী: কৃষি প্রধান জেলা উত্তরাঞ্চলের নীলফামারী। বৃটিশ আমলে নীলচাষে সমৃদ্ধ ছিল এ অঞ্চল। এই নীলচাষকে কেন্দ্র করে জেলা নামকরণ নীলফামারী। সে সময় থেকে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও কৃষি কাজে সমানতালে অংশ গ্রহণ করে আসছে।
বীজ রোপণ থেকে শুরু করে ফসল কাটা পর্যন্ত তারা সব কাজেই করে। কিন্তু পুরুষর তুলনায় নারীদের দেয়া হয় কম মজুরি। সমান কাজ করেও নারী শ্রমিকরা পান কম মজুরি। যেখানে পুরুষ ৩০০ টাকা মজুরি পেলে নারী শ্রমিক পায় ২০০ টাকা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, জেলার সদর উপজেলার কুন্দপুকুর, ইটখোলা, সৈয়দপুর উপজেলার বাঙ্গালীপুর, কাশিরাম বেলপুকুর, খাতামধুপুর, জলঢাকা উপজেলার মীরগঞ্জ, কৈমারি, শৌলামারির ও কিশোরগঞ্জ উপজেলার বাহাগিলি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ফসলের মাঠে নারী কৃষি শ্রমিকরা কাজ করছে।
এদের অধিকাংশ পরিত্যক্তা, বিধবা ও অসচ্ছল পরিবারের নারীরাই নিজের ও সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেয়া, চিকিৎসা ও পড়াশোনার খরচের যোগাতে কাজ করছেন। শ্রম বিক্রি করতে গেলে অভাবী এসব নারীদের ন্যায্য মজুরি না দিয়ে, স্বল্প মজুরিতেই কাজ করিয়ে নিচ্ছেন ভূমালিকরা। পুরুষ শ্রমিকের চেয়ে নারী শ্রমিকের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পেলেও বাড়ছে না তাদের মজুরি। ফলে বঞ্চিত হচ্ছেন এসব শ্রমজীবি নারীরা।
আরও পড়ুন: আসছে দোতলা ট্রেন
সৈয়দপুর উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের কৃষি শ্রমিক শেফালী রানী (৪০) স্কুলপড়ুয়া দুই ছেলের মা। বড় ছেলের বয়স ৫ বছর আর ছোট ছেলের বয়স যখন দেড় বছর তখনেই স্বামী ছেড়ে চলে গেছে। বিয়ে করেছে আরেক মহিলাকে। পুরো সংসারের হাল তার কাঁধেই। কোন উপায় না পেয়ে ক্ষেতে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
শেফালী রানী জানান, সকাল সাড়ে ৮টায় মাঠে চলে আসি। বেলা ৪টা পর্যন্ত আলু ক্ষেতে কাজ করি। মজুরি পাই ২০০ টাকা। পুরুষের সাথে একই জমিতে সমান কাজ করি। মজুরির বেলায় কম পাই। কিন্তু কিছু বলি না। সব নারী কম মজুরি পায়। কাজের সুযোগ পাচ্ছি, এটাই অনেক বড় ব্যাপার।
আরও পড়ুন: প্রিয়জনকে জড়িয়ে ধরার উপকারিতা
নীলফামারী সদর উপজেলার ইটাখোলা ইউনিয়নের ভূমালিক মো. ফিরোজ সরকার বলেন, পুরুষ কৃষি শ্রমিকের তুলনায় নারী শ্রমিক সস্তা। তাছাড়া পুরুষ শ্রমিকরা বিশেষ করে ধান কাটার সময় বেশি মজুরির লোভে দক্ষিনাঞ্চলে চলে যায়। ফসল ঘরে তোলার সময় এদের সহজে পাওয়াও যায় না। কিন্তু নারী কৃষি শ্রমিকরা তো বাহিরে যেতে পারে না। তাই নারীদের দিয়েই কাজ করাতে হচ্ছে।
নীলফামারী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, নারী শ্রমিকরা কৃষি কাজে পারদর্শী হয়ে উঠলেও এখনো তারা কম মজুরি পাচ্ছেন। অথচ নারী-পুরুষ সবাই সমান। নারী হিসেবে তাদের কম মজুরি দেওয়া এটা ঠিক নয়। যাতে কোনো নারী শ্রমিক মজুরি অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয় এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে।
সান নিউজ/এমকেএইচ