আমিরুল হক, নীলফামারী: নীলফামারীর সৈয়দপুরে মহাসড়কের পাশে একটি ইটভাটায় দেখা যায় প্রায় সমবয়সী তিন শিশু। সবচেয়ে বড় যে, তার বয়স হবে ১১ বছর। অন্য দুজনের আট থেকে দশ বছর। তাদের গায়ের বর্ণ এখনি তামাটে।
পৌষের শীতে তাদের গা দিয়ে দর দর করে ঘাম ঝরছে। পুরোদস্তুরে শ্রমিক। কাঁচা মাটি দিয়ে ইট উল্টানোর কাজ করছে তারা। রোদে শুকানোর জন্য ইটের দুই পাশ ঘুরিয়ে দিতে হয়। ১০০ ইট ঘুরিয়ে দিলে মাত্র পাঁচ টাকা পারিশ্রমিক পায় ওরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, সৈয়দপুর উপজেলার কয়কটি ইটভাটায় ভাটাশ্রমিকের সঙ্গে শিশুরাও কাজ করছে। ওদের বয়স ৭ থেকে ১২ বছরের মধ্যে। এসব শিশুর কেউ কেউ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণিতে পড়ছে। আবার কেউ কেউ এখন আর বিদ্যালয়ে যায় না। কেউ নিজে থেকেই, আবার কেউ মা-বাবার সঙ্গে ইটভাটার কাজে এসেছে। কাঁচা ইট রোদে শুকানো, ইট তৈরি, ট্রলিতে করে ইট টেনে ভাটাস্থলে পৌঁছানো, মাটি বহন করাসহ সব কাজেই নিয়োজিত এসব শিশু।
স্থানীয়দের অভিযোগ, জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই ফসলি জমি ও আবাসিক এলাকায় একের পর এক ভাটা গড়ে উঠছে। আর নিয়মনীতি না মেনে গড়ে ওঠা এসব ভাটার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে শিশুদের। এসব ভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ ও টায়ার। ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ফসল আবাদে ফেলছে বিরূপ প্রভাব। এতে ফসল উৎপাদনে বেগ পেতে হচ্ছে। তাদের উর্বর জমিতে বছরের বিভিন্ন সময়ে নানা ফসল আবাদ হলেও বর্তমানে ভাটার কালো ধোঁয়া আর তাপের কারণে অনুর্বর হয়ে পড়ছে জমি। জ্বলে যাচ্ছে ফসলাদি।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ সৈয়দপুর সাংগঠনিক জেলা শাখার সভাপতি ডা. শেখ নজরুল ইসলাম বলেন, ইটভাটায় কর্মরত শিশুরা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। ভাটায় দীর্ঘ সময় কাজ করার ফলে বিষাক্ত ধোঁয়া ও ধুলাবালিতে শিশুদের ত্বক ও নখ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি রক্তস্বল্পতা, এজমা, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম হুসাইন বলেন, যে সব ইটভাটায় শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিযুক্ত করছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সান নিউজ/এমকেএইচ