শাহরিয়ার নাসের, নোবিপ্রবি: পুষ্টিবিদ মুরাদ পারভেজ। রাজশাহীর পবা থানার পাইকপাড়া গ্রামের মুন্তাজ আলী এবং রেণুফা বেগম দম্পতির তৃতীয় সন্তান। নওহাটা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে মাধ্যমিক এবং নওহাটা ডিগ্রী কলেজ থেকে একই বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ভর্তি হন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে(নোবিপ্রবি)।
শৈশব ও কৈশোরে অভাব কি জিনিস তা উপলব্ধি করেছেন হাড়েহাড়ে। চাকরির পেছনে না ছুটে নিজের জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তা দিয়ে অভাবকে জয় করে বড় উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এখন এগিয়ে চলছেন তিনি। গত ১৮ মাসে অনলাইনে ২ হাজার ৮০০ এর অধিক ক্রেতার নিকট ৫০ লাখ টাকার আম, মাটির তৈজসপত্র, গবাদি পশু আর খেজুরের গুড় বিক্রি করেছেন। তার ফেসবুক পেইজের নাম ‘ম্যাঙ্গো লাভার’।
২০২০ সালের ৮ই মার্চ দেশে যেদিন প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ঠিক সেদিনই প্রকাশ হয় মুরাদের স্নাতকের ফলাফল। এরপর দেশজুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ক্রমেই বাড়তে থাকে। সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আসে লকডাউনের ঘোষণা। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হয়ে গেলেও বসে থাকেননি স্নাতক শেষ করা মুরাদ।
পুষ্টিবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করায় তিনি স্বপ্ন দেখতে লাগলেন নিরাপদ খাদ্য নিয়ে কাজ করার। সেই স্বপ্ন পূরণ হয় ওই বছরের জুন মাসে এসে। বাগানের শতভাগ কেমিক্যালমুক্ত আম দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সুলভ মূল্যে সরবরাহ করা এবং সবাইকে অনলাইনে কেনাকাটার প্রতি আগ্রহী করে তোলার লক্ষ্যকে সামনে রেখে জুন মাসেই তিনি পুরোদমে কাজ শুরু করেন রাজশাহীর আম নিয়ে।
প্রথম বছরেই অনলাইনে ৬ হাজার কেজি আম বিক্রি করেন তিনি। অন্য আম ব্যবসায়ীদের মতো ক্রেতাদের থেকে অগ্রিম টাকা নেননি মুরাদ। আম হাতে পেয়েই ক্রেতারা তাকে টাকা দিতো। কোনো কারণে আম খারাপ হলে আবার নতুন করে আম পাঠাতেন তিনি। প্রথম বছরের আম বিক্রি হতে লাভের টাকা খরচ না করে মুরাদ দুটি গরু ক্রয় করেন। পাশাপাশি শুরু করেন মাটির তৈরি তৈজসপত্রের ব্যবসা। এরপর করেন অনলাইনে গবাদিপশু বিক্রির ব্যবসা। সবশেষে চলতি শীতে ভেজালমুক্ত খেজুরের গুড়ের ব্যবসা করছেন তিনি।
৫০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি
গত ১৮ মাসে অনলাইনে মোট ৫০ লাখ টাকার আম, মাটির তৈজসপত্র, গবাদিপশু এবং খেজুরের গুড় বিক্রি করেছেন পুষ্টিবিদ মুরাদ। এর মধ্যে আম ২৮ লাখ তেইশ হাজার টাকা, মাটির তৈজসপত্র ১২ লাখ, গবাদিপশু ২ লাখ এবং খেজুরের গুড় ৮ লাখ বিশ হাজার টাকা। এখনও পুরোদমে চলছে তার ব্যবসা।
এর আগে আম ব্যবসায়ের মাধ্যমে নিজের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি তিনি ১৩ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছেন। গাছ থেকে আম সংগ্রহ, পরিবহণ ও প্যাকেজিংয়ের কাজে নিযুক্ত করেন ওই শ্রমিকদের। এছাড়াও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ৪৩ জন শিক্ষার্থী ও এক পুলিশ সদস্য তার থেকে পণ্য কিনে পুনরায় বিক্রি করে উপার্জন করেছেন।
পরিবারে অবদান রাখছেন
মুরাদ এখন সফল ব্যবসায়ী। তার মেধা, বুদ্ধিমত্তা ও পরিশ্রমের ফল ভোগ করছে পরিবারও। পরিবারকেও পূর্ণ সাপোর্ট দিচ্ছেন তিনি। মুরাদ গর্ব করে বলেন, অনলাইনে পণ্য বিক্রি করে আমি আমার পরিবারে অবদান রাখছি এটাই আমার বড় পাওয়া। পরিবারের সাপোর্টও সবসময় ছিল। আমার বাবা অত্যন্ত মেধাবী হওয়া স্বত্বেও অভাবের কারণে মেট্রিক পরীক্ষা দিতে পারেননি। দারিদ্র্যতার মধ্যেও বাবা চেয়েছেন আমি বড় হই। আমার ব্যবসায়েও সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন তিনি।
বড় উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছে
চাকরি নয় ব্যবসার সঙ্গেই যুক্ত থাকতে হতে চান পুষ্টিবিদ মুরাদ। অনলাইন প্লাটফর্মকে কাজে লাগিয়ে হতে চান বড় উদ্যোক্তা। তিনি বলেন, চাকরি করার ইচ্ছে নেই আমার। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে সরকারি জব কিংবা বড় কোনো কোম্পানিতে চাকরি করতে হবে বিষয়টা এমন না। বিজনেস করেও, উদ্যোক্তা হয়েও সুন্দরভাবে পরিবারকে সাপোর্ট দেয়া যায়, নিজের বেকারত্ব দূর করা যায়। আমি স্বপ্ন দেখি বড় উদ্যোক্তা হওয়ার।
সান নিউজ/এমকেএইচ