সান নিউজ ডেস্ক: আহসানউল্লাহ্ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন তরুণ শিক্ষার্থী সৈয়দ ওয়াসিম উল হুদা ও ফারজানা আলম শাকিলা। শিক্ষার্থীদেরকে আর্থিক চাপ থেকে মুক্তি দিতে পরিকল্পনা অনুযায়ী শুরু করেন একাডেমিক বইয়ের একটি রেন্টাল সার্ভিস। “বই প্রকৌশলী”।
বাংলাদেশে একজন শিক্ষার্থী যখনই উচ্চ মাধ্যমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মুখী হন তখনই নির্দিষ্ট সিলেভাস অনুযায়ী তাকে নতুন বই কিনে নিতে হয়। সবগুলি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব লাইব্রেরী খুব বেশি সমৃদ্ধ ও বিস্তৃতও নয়। পাশাপাশি পর্যাপ্ত জায়গার সংকুলনের সুযোগ না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের তাদের প্রয়োজনীয় বই কিনে নিতে হয়। এই বইগুলির বেশিরভাগই বিদেশি লেখকদের লেখা এবং বিক্রয় মূল্যও বেশ চড়া।
বই কেনাই এই গল্পের শেষ নয়। একবার বই কিনলে বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা গ্রহণের বিষয়ভেদে সেটি পড়ানো হয় চার থেকে ছয় মাসের জন্য। শিক্ষার্থী কৃতকার্য হয়ে চলে যায় নতুন সেমিস্টারে। ফলে তাকে নতুন সেমিস্টারের জন্য আবার বই কিনতে হয়। বছরে দুইটি থেকে তিনটি সেমিস্টার থাকে বলে এভাবে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে দুই থেকে তিনবার নতুন বই কিনতে হয়।
এদিকে বাংলাদেশে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়-পড়ুয়া শিক্ষার্থী আসেন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে। তাই বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর জন্য অল্প বিরতিতে বারবার বই কেনা বেশ আর্থিক চাপের ব্যাপার।
আহসানউল্লাহ্ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন তরুণ শিক্ষার্থী, সৈয়দ ওয়াসিম উল হুদা ও ফারজানা আলম শাকিলা শিক্ষাত্থীদের কে এই আর্থিক চাপ থেকে মুক্তি দিতে পরিকল্পনা অনুযায়ী শুরু করেন একাডেমিক বইয়ের একটি রেন্টাল সার্ভিস। উদ্যোগটির নাম “বই প্রকৌশলী”।
একাডেমিক বইয়ের পাশাপাশি বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্যের প্রায় সকল ধরনের বই-ই পাওয়া যায় “বই প্রকৌশলী” তে। শিক্ষার্থীদের জন্য সাশ্রয়ী, উপযুক্ত ও অনলাইন ভিত্তিক 'বুক-রেন্টাল সার্ভিস’ প্রদান করাই তাদের মৌলিক ও প্রধান উদ্দেশ্য।
শিক্ষার্থীরা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী বই “বই প্রকৌশলী” তে অনলাইনে অর্ডার দিয়ে খুব সহজেই, স্বল্পমূল্যে, নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিজেদের কাছে নিয়ে রেখে সেমিস্টার শেষে তা ফেরত দিতে পারেন।
পরিচ্ছন্ন এই পদ্ধতির কারণে শিক্ষার্থীদের সময় ও অর্থ, দুই-ই বাঁচছে। পাশাপাশি “বই প্রকৌশলী” তে বেশ কিছু শিক্ষার্থী পেয়েছেন খন্ডকালীন কাজের সুযোগও।
“বই প্রকৌশলী” সহ-প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ ওয়াসিম উল হুদা বলেন, “ আমাদের এই আয়োজন সবচেয়ে বেশি কাজে লাগছে এই কভিড পরিস্থিতিতে। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও অনলাইনে পড়াশোনা চলছে। তাই শিক্ষার্থীদের শিক্ষাক্রম চালিয়ে যেতে বই কিনতে হচ্ছেই। দেশে মাঝে মাঝেই লকডাউন দেয়া হচ্ছে। ফলে বইয়ের দোকান বন্ধ থাকছে, আবার শিক্ষার্থীরা বাইরেও যেতে পারছে না বই সংগ্রহ করতে বা কিনতে। এই পরিস্থিতিতে “বই প্রকৌশলী” কাছ থেকে সেবা পেয়ে উপকৃত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।”
“বই প্রকৌশলী” এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফারজানা আলম শাকিলা বলেন, “আমাদের এই উদ্যোগের কারণে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনের ব্যয়ভার কমছে। শিক্ষার্থীরা উপকৃত হচ্ছেন, এটাই আমাদের সফলতা।”
“বই প্রকৌশলী” এর বিজনেস ডিভালপমেন্ট এক্সিকিউটিভ আদিবা হাসান বলেন, আমাদের টিমের সবাই তরুণ। তরুণদের মেধা বিকাশ ও নতুন নতুন আইডিয়া উদ্ভাবন এর মাধ্যমে আমরা ছড়িয়ে যাচ্ছি। আপনারা খুশি হবেন এটা জেনে যে, আমরা প্রায়ই নতুন নতুন অফার ও বৈচিত্র আনছি আমাদের সার্ভিসে।"
ইঞ্জিনিয়ারিং-পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের বই এর পাশাপাশি ব্যবসা ও মানবিক বিভাগের বই, মেডিকেল, IELTS, SAT, GRE, GMAT, বিসিএস বা অন্যান্য চাকরির প্রস্তুতিমূলক বই- সবই রয়েছে “বই প্রকৌশলী” এর সংগ্রহে। সামনে আরও বিস্তৃত পরিসরে এই আয়োজন ছড়িয়ে দেবার স্বপ্ন দেখেন “বই প্রকৌশলী” এর দুই তরুণ প্রতিষ্ঠাতা।
সান নিউজ/এমএম