ফিচার ডেস্ক : ভূতুড়ে গ্রাম নামে পরিচিত বগুড়া জেলার শাহজাহানপুরের পিচুলগাড়ি। একসময় গ্রামটিতে মানুষের আনাগোনা ও বসবাস থাকলেও প্রায় ৪৫ বছর ধরে গ্রামটি জনমানব শূন্য। গ্রামের বাসিন্দারা নিজেদের বসতভিটা জায়গা-জমি ত্যাগ করেছে বহুদিন আগে।
প্রবীনদের থেকে জানা যায়, ৪৫ বছর পূর্বে অন্য গ্রামগুলোর মত এখানেও মানুষ স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করতো। তবে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর গ্রামটিতে চুরি ডাকাতির পরিমাণ বেড়ে যায়। ক্রমশ সেটি চরম আকার ধারণ করতে থাকে।
গ্রামের বাসিন্দারা জানান চোর-ডাকাতের পরিমাণ এত বেড়ে যায় যে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন পর্যন্ত গ্রামে ডাকাতি হতো। ডাকাতের ভয়ে গ্রামে কেউ কোন কিছু রাখতে পারতো না। ডাকাতদল গবাদি পশু -পাখি, গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি নিয়ে যেত।
বিশেষ করে ১৯৮১ সালে ডাকাতদল গ্রামের সবথেকে ধনাঢ্য গৃহস্থ মফিজ উদ্দিন মন্ডল-কে খুন করে। এরপর থেকেই গ্রামের বাসিন্দারা তাদের সহায়সম্বল রেখে অন্য গ্রামের চলে যান। জঙ্গলে আবৃত এবং ভগ্নদশা বসতভিটা গুলো দেখে গ্রামটিকে বেশ ভূতুরে লাগে।
গ্রামের বাসিন্দারা গ্রামে বসবাস না করলেও শুক্রবার জুম্মার নামাজ আদায় করার জন্য গ্রামের প্রাচীন মসজিদ এসে থাকেন। এছাড়া গ্রামের বাসিন্দারা তাদের গোরস্থান হিসেবেও গ্রামের একটি নির্দিষ্ট অংশকে ব্যবহার করে আসছে।
গ্রামটি সম্পূর্ণরূপে অন্য গ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন। এর যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে যে রাস্তাটি ছিল, সেই রাস্তাটি এখন সম্পূর্ণ বিলীন। তাই গ্রামে প্রবেশ করার একমাত্র পথ হচ্ছে ক্ষেতের আইল।
বহুদিন থেকে অব্যবহৃত গ্রামটি সম্পর্কে গ্রামীণ জনজীবনে নানারূপ অলৌকিক কাহিনী প্রচলিত হয়ে আসছে। তাদের অনেকেই মনে করেন গ্রামের কোনো জিনিস অন্য কোনো গ্রামে নিয়ে যাওয়া হলে বা ব্যবহার করলে ব্যক্তিবিশেষ এবং পরিবারের ক্ষতি হয়। তাই গ্রাম থেকে কোনো প্রকার জিনিস অন্য গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয় না। এমনকি গ্রামের গাছগুলোতে যে ফল-ফলাদির ধরে থাকে সেগুলোও কেউ খায় না।
তবে বর্তমান প্রজন্মের বাসিন্দারা মনে করেন, এখন যেহেতু ডাকাতের আর কোন ভয় নেই তাই যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করলে সহজেই তারা গ্রামে প্রবেশ করতে পারবে।
সান নিউজ/ এমএইচআর