ফিচার ডেস্ক: মানবজাতি পেয়েছে সভ্যতার ছোঁয়া। তাও বহুকাল আগেই। সেখান থেকে পরিবর্তন হয়েছে জীবনধারার। সেই শুরু থেকেই সব অপরাধের জন্য নির্দিষ্ট শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অপরাধের সংজ্ঞা এবং শাস্তির নিয়মে নানা পরিবর্তন এসেছে।
তবে অপরাধ করলে শাস্তির হাত থেকে নিস্তার পাননি কোনো যুগেই। স্থান, কাল, সংস্কৃতি ভেদে এর কমবেশি হয়েছে। এখনো অনেক দেশে রয়েছে অপরাধীদের জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অপরাধের শাস্তির ভিন্নতা রয়েছে। একেক দেশ বা জাতি তাদের নীতি মেনে অপরাধীর শাস্তির ব্যবস্থা করে। একেক অপরাধের জন্য একেক রকম শাস্তি।
শরীরে মধু মাখিয়ে পোকামাকড় দিয়ে মারা হত অপরাধীকে
তবে অনেক শাস্তির বিবরণ শুনলে হয়তো আপনার গায়ে কাটা দিয়ে উঠবে। ভাবছেন এতো কঠিন আর নির্মম শাস্তি জেনেও কেন সেখানকার মানুষ অপরাধে জড়ায়? আসলে অপরাধ মানুষ নানা কারণেই করে থাকে। যাই হোক আজকের লেখায় থাকছে তেমনই এক ভয়াবহ শাস্তির কথা।
যদিও এটি এখনকার দিনের নয়। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীর কাছাকাছি সময়ে পার্সিয়ান সাম্রাজ্যে ভয়াবহ সব শাস্তি দিয়ে অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হত।
এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য যে শাস্তিগুলো ছিল তা শুনলে শরীরে কাটা দেবে আপনার। অপরাধীর শরীরে মধু মাখিয়ে গাছে বেঁধে রাখা হত। এক সময় নানান ধরনের পোকামাকড় মধুর জন্য অপরাধীর শরীরে কামড়াতে থাকত। একসময় মধু খেতে খেতে অপরাধীর শরীরের মাংস খেতে শুরু করত পোকামাকড়।
এভাবে একসময় মারা যেত সেই ব্যক্তি। এরপরের দৃশ্য আরো নিষ্ঠুর। মারা গেলেও নিস্তার ছিল না। মৃতদেহ পচে যাওয়ার পর তা খেয়ে ফেলত শকুন, শিয়ালের দল।
এমনই এক নৌকায় অপরাধীকে ভাসানো হত
আরো একটি শাস্তি ছিল অপরাধীকে কাঠের তৈরি নৌকায় অপরাধীকে তুলে শাস্তি দেয়া। যতদিন পর্যন্ত তার মৃত্যু না হত ততক্ষণ বা ততদিন তাকে সেখানেই বেঁধে রাখা হত। ভাবছেন এ তো খুব সাধারণ ব্যাপার। তবে না এখনো বলতে বাকি আছে, শুধু যে ছোট্ট একটি নৌকায় বেঁধে পানিতে ভাসিয়ে দিত, তাই নয়।
তাদের মাথা, হাত এবং পা থাকত নৌকার বাইরে। যাতে পানিতে থাকা কুমির তাদের কামড়ে খেয়ে ফেলতে পারে। এছাড়াও একটি গাছ মাঝ থেকে চিরে তার ভেতর অপরাধীকে বেঁধে ঢুকিয়ে দেয়া হত। কতটা নৃশংস এবার তবে ভেবে দেখুন!
এসময় তাদের খাওয়ানো হত দুধ আর মধুর মিশ্রণের একটি পানীয়। অতিরিক্ত এই পানীয় খাওয়ার ফলে তাদের ডায়রিয়া আর বমি হত। ওইভাবে নৌকায় বাধা অবস্থায় তারা বমিও করত আবার পায়খানাও করত। প্রচণ্ড গন্ধ পেয়ে বুনো ইঁদুরের দল এই বমির জন্য তাদের কাছে চলে আসত। আর মল-মূত্রের সঙ্গে তাদের শরীর থেকে মাংস খেয়ে ফেলত। এভাবেই ধীরে ধীরে মারা যেত অপরাধীরা।
ইয়োলোস্টোন ন্যাশানাল পার্কেই রয়েছে ‘জোন অব ডেথ’
তবে যদি বলা হয় এমন একটি জায়গা এখনো সভ্য পৃথিবীতে রয়েছে, যেখানে অপরাধের কোনো শাস্তি নেই। আপনি যেকোনো অপরাধ করে আইনের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন। এমনকি খুনেরও কোনো শাস্তি নেই সেখানে? ভাবছেন কোনো আদিম জাতি ও কোনো জনমানবহীন দ্বীপের কথা বলছি? একেবারেই তা নয়। বরং খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বুকেই রয়েছে এমন জায়গা। অবাক হচ্ছেন নিশ্চই!
আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে আইন যেমন বিচিত্র, আইনের ফাঁকও তেমনই বিস্তর। তবে অপরাধের কোনো শাস্তির ব্যবস্থাই নেই, এটা মেনে নেয়া সত্যিই অসম্ভব। আসলে মার্কিন সংবিধানের ষষ্ঠ সংশোধনী থেকেই সমস্ত সমস্যার সূত্রপাত।
তবে মূল প্রশ্ন অবশ্যই, কোথায় আছে এমন জায়গা? ইয়োলোস্টোন ন্যাশানাল পার্কের মধ্যে ছোট্ট ৫০ বর্গমাইল এই এলাকা। আর তার নামই হয়ে উঠেছে ‘জোন অব ডেথ’। ইয়োলোস্টোন ন্যাশানাল পার্ক তিনটি স্টেটের মধ্যে অবস্থিত। উয়োমিং, মনটানা এবং ইডাহো। এই ইডাহো স্টেটের মধ্যে থাকা ইয়োলোস্টোন ন্যাশানাল পার্কেই রয়েছে ‘জোন অব ডেথ’।
অনেকেই ঘুরতে যান এই গ্রামটিতে
এবার আসা যাক মার্কিন সংবিধানের ষষ্ঠ সংশোধনী প্রসঙ্গে। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে এমন বেশ কিছু জায়গা আছে, যা কয়েকটি স্টেটের সীমান্তে অবস্থিত। সেখানে নির্দিষ্ট কোনো স্টেটের আইন খাটে না। আগে অবশ্য ফেডারাল আইনেই শাস্তির ব্যবস্থা ছিল। তবে ষষ্ঠ সংশোধনীতে স্থির হয়, ফেডারাল আইনে বিচারের পাশাপাশি জুরি বোর্ডে সংশ্লিষ্ট এলাকার অন্তত ১২ জন সদস্যকে থাকতে হবে।
ইয়োলোস্টোন ন্যাশানাল পার্কের মধ্যে ঘটে যাওয়া কোনো অপরাধের বিচারও হবে একইভাবে। সেই মতোই উয়োমিং-এর ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে বিচারের সমস্ত বন্দোবস্ত করা হয়ে। আর মনটানা বা ইডাহো স্টেটের ঘটনা হলে এখানকার প্রতিনিধিরা থাকেন জুরি বোর্ডে। তবে মনটানা স্টেটের প্রতিনিধিরা থাকলেও ইডাহো স্টেটের কোনো প্রতিনিধি থাকেন না।
ভাবছেন কোনো অন্তর্দ্বন্দ্বের বিষয়? না, বিষয়টা একেবারেই তেমন নয়। আসলে ইয়োলোস্টোনের মধ্যবর্তী ইডাহো স্টেটে কোনো নাগরিক বাস করেন না। অতএব কোনো জুরি থাকাও সম্ভব নয়। ফলে এখানে যেকোনো অপরাধের পর বিচারব্যবস্থাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই বেরিয়ে যাওয়া যায়। তবে এইটুকু শুনে মনে হতে পারে, এই এলাকায় বুঝি বহু অপরাধের ঘটনা ঘটে। আসলে, ২০০৫ সালের আগে আইনের এই ফাঁকটি কেউ লক্ষই করেননি।
এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি স্টেটে অবস্থিত
মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ব্রায়ান কাল্ট তার গবেষণামূলক বই ‘দ্য পারফেক্ট ক্রাইম’-এ বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন। আর সেই বছরই ঘটে যায় প্রথম অপরাধ। তবে মানুষ খুন নয়। হত্যা করা হয় ইয়েক প্রজাতির একটি হরিণকে। আর যথারীতি কোনো শাস্তির ব্যবস্থা করা যায়নি।
তবে এই ১৫ বছরে আইনি ব্যবস্থায় আর কোনো পরিবর্তন আসেনি। যদিও আর কোনো অপরাধের ঘটনাও ঘটেনি। কিন্তু বিশ্বের প্রাচীনতম সংবিধানের দেশে এমন একটা আইনি ফাঁক সত্যিই অবাক করে।
সাননিউজ/এএসএম