ফিচার ডেস্ক: জীবন মানেই সংগ্রাম। আর আমাদের এ সংগ্রামটা সমাজে ভালোভাবে বাঁচার জন্য। জীবনের সঙ্গে এমনই এক যুদ্ধ করে চলছেন দিনাজপুর কাহারোল উপজেলার জাহানারা খাতুন। শত কষ্টের মাঝেও হার মানেননি জীবনের কাছে। তিনি গর্ব করে বলতে পারেন চা দোকানির ছেলে দিনাজপুর পলিটেকনিক্যালে পড়ছে।
জন্ম হয় অভাবি বাবার সংসারে। অভাবের কারণে যেখানে দু’বেলা ভাত জোটেনা সেখানে আবার পড়াশোনা! চার বোন দুই ভাইয়ের মধ্যে জাহানারা খাতুন বড়। তাই অল্প বয়সেই বাবা বিয়ে দিয়ে দেন দিনাজপুর কাহারোল উপজেলার কান্তনগর আসামপাড়া এলাকার দিন মজুর হবিবর রহমানের সঙ্গে।
বিয়ের পর স্বামীর সংসারেও অভাব ও কষ্ট লেগেই থাকতো। দিনমজুর স্বামীর উপার্জনে দু’বেলা খেয়ে না খেয়ে কোনো রকম বেঁচে থাকাটাই বড় কষ্টের।
এরই মধ্যে সংসারে একে একে তিন সন্তান জন্ম নেয়। সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে স্বামীর পাশাপাশি নিজেও কৃষি জমিতে শ্রমিকের কাজ শুরু করেন। কৃষি জমিতে শ্রমিকের কাজে অত্যন্ত পরিশ্রম। তাই কান্তজিউ মন্দির প্রাঙ্গণে ছোট পরিসরে একটি চায়ের দোকান দেন তিনি। বর্তমানে এ চায়ের দোকানের বয়স প্রায় ত্রিশ বছর।
রোববার (২২ অক্টোবর) জাহানারা খাতুন এভাবেই কাছে মেলে ধরেন নিজের সংগ্রামী জীবনের গল্প।
তিনি বলেন, তার দোকানে চায়ের পাশাপাশি বিস্কুট, ভাজা-পোড়া খাবার, পাউরুটিসহ বিভিন্ন খাবার পাওয়া যায়। দূরদুরান্ত থেকে কান্তজিউ মন্দির দেখতে আসা ভক্ত ও পর্যটকরা তার দোকানের খাবার খেয়ে সুনাম করেন। জাহানারার চা অত্র এলাকায় বেশ সুনাম অর্জন করেছে। প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ২৫ কেজি গরু দুধের চা বিক্রি করেন তিনি।
জাহানারা খাতুন বলেন, বর্তমানে স্বামী অসুস্থ। সন্তানরা সবাই বিয়ে করে তারা তাদের মতো নিজেদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত। এ চায়ের দোকান দিয়েই চলে তার সংসার ও অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসা খরচ। হোটেল থেকে প্রতিদিন সব খরচ বাদ দিয়ে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার-চিকিৎসা খরচ হয়েও অবশিষ্ট টাকা সঞ্চয় করেন। যা আগে সন্তানদের পেছনে খরচ করতেন।
স্থানীয় বাসিন্দা বাবুল রায় বলেন, জাহানারা খাতুন দীর্ঘদিন এখানে চায়ের দোকান করছেন। কান্তজিউ মন্দির দেখতে আসা ভক্ত ও পর্যটকরা তার দোকানের চা ও অন্যান্য খাবার খেয়ে বেশ সুনাম করে। এছাড়া তার চায়ের কদর আশপাশের এলাকায়ও রয়েছে।
তার গরুর দুধের এক কাপ চা খেতে আশপাশের মানুষ বিকেলে এখানে ভিড় জমান। জাহানারা নিজেই তৈরি করে দেন চা। গ্রাহকদের সন্তষ্ট ও তৃপ্তি দিয়ে ধরে রাখতে দোকানে ভেজাল কোনো কিছুই রাখেন না তিনি।
নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর শহর থেকে কান্তজিউ মন্দির দেখতে আসা সাব্বির আহমেদ বলেন, এখানে এসে সব কিছু ঘুরে দেখে খুবই ক্লান্ত লাগছিলো।
জাহানারা খাতুনের এক কাপ চা খেয়ে খুবই ভালো লাগলো। যেন সব ক্লান্তি দূর হয়ে গেলো। গরুর খাঁটি দুধের সুগন্ধে ভরা এখানকার চায়ের স্বাদই আলাদা। এতো সুস্বাদু চা আবার দামেও সস্তা, মাত্র ৫ টাকা প্রতি কাপ।
সাননিউজ/এএসএম