নিজস্ব প্রতিনিধি, কুষ্টিয়া: মরুর দেশ সৌদি আরবের ফল ‘সাম্মাম’ চাষ হচ্ছে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কচুবাড়ীয়া গ্রামে। এই গ্রামের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নাইম ইসলাম খোকন তার প্রবাসী বড় ভাইয়ের পরামর্শে সৌদি আরবের ফল ‘সাম্মাম’ চাষ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পরে ইন্টারনেট ও স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শে বাণিজ্যিকভাবে এই ফল চাষ করেছেন তিনি। প্রথমবার এই ফল চাষ করে বেশ সাফল্যও পেয়েছেন নাইম।
জানা যায়, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নাইম ইসলাম খোকন তার নিজ গ্রাম কচুবাড়ীয়ায় ৩৩ শতক জমি বর্গা নিয়ে এ চাষ করেছেন। পুষ্টিগুণে ভরপর বিদেশি এই ফল চাষ এলাকায় নতুন হাওয়ায় প্রতিদিন তার ক্ষেত দেখতে আসছেন আশপাশের কৃষক। অনেকে আবার আগামীতে নতুন জাতের এই রসালো ফল চাষাবাদের জন্য পরামর্শও নিচ্ছেন নাইমের কাছ থেকে।
‘সাম্মাম’ চাষি নাইম বলেন, কলেজ বন্ধ, তাই বাড়িতে অবসর সময় কাটাচ্ছিলাম। বিদেশ থেকে ভাই ফোন দিয়ে এই সাম্মাম চাষ করা সম্পর্কে বলেন। পরে আমি ইউটিউব থেকে এটি কিভাবে চাষ করে সেটা জানলাম। পরবর্তীতে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ নিয়ে বগুড়ার একটি খামার থেকে এ ফলের চারা সংগ্রহ করি। সেই সাথে সেখানে গিয়ে চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
চাষ সম্পর্কে নাইম বলেন, দোঁয়াশ মাটিতে সাম্মাম চাষ করা ভালো। মাটি ভালোভাবে চাষ করে বেড এবং নালা করে, মালচিং দিয়ে এ ফলের চাষ করতে হয়। তাহলে বেশ ভালো ফলন পাওয়া যায়। এটি খুবই অল্প সময়ের ফসল। গাছ লাগানোর দেড় মাসের মধ্যেই হয় সাম্মাম ফল।
নাইম নতুন এই ফল সম্পর্কে বলেন, “সাম্মাম ফল খুবই পুষ্টি সমৃদ্ধ। বর্হিবিশ্বে এর বেশ চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশে এটির প্রচলন এখনো কম। এ ফল সৌদিতে সাম্মামসহ বিভিন্ন দেশে “রক মেলন”, “সুুইট মেলন”, “মাস্ক মেলন”, “হানী ডিউ” নামে পরিচিত। এই ফল মূলত দুই জাতের হয়ে থাকে। একটি জাতের বাইরের অংশ সবুজ আর ভেতরের অংশ লাল, আরেকটি জাতের বাইরের অংশ হলুদ এবং ভেতরের অংশ লাল। তবে খেতে দুই ধরনের ফলই খুব মিষ্টি ও রসালো।
নাইম বলেন, আমি প্রথমবারের মত ভাই এর কথায় ঝুঁকি নিয়ে এ ফলের চাষ শুরু করেছি। এক বিঘা জমিতে আমার ৩ হাজার সাম্মাম গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছে ২-৩টি করে ফল রয়েছে। বেশি ফল রাখলে ফলন কম হয়। একেকটি ফলের ওজন হয় দেড় থেকে দুই কেজি। প্রতিটি গাছেই ফল বেশ ভালো এসেছে। এক বিঘা জমিতে আমার খরচ হয়েছে প্রথমবার হওয়ায় ১লাখ টাকার মতো। আগামীতে খরচ কম হবে। আশা করছি এবছর দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার মতো লাভ হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু এই ফল কাঁচা-পাকা দুই অবস্থাতেই খাওয়া যায়, সে জন্য কিটনাশকের পরিবর্তে ফেরামন ফাঁদ, আগাছা যাতে না হয় এজন্য মালচিং দেয়া হয়েছে। সেই সাথে বিষমুক্ত উপায়ে চাষ করছি। নতুন এই ফল এবং ফলের চাষাবাদ দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকেও লোজন আসছে।
রবিউল ইসলাম নামে স্থানীয় এক কৃষক জানান, আমি এই গাছ লাগানো থেকে শুরু করে এই জমিতে দৈনিক হাজিরা হিসাবে কাজ করছি। এ জমিতে খুব ভালো ফল এসেছে। আর ফলগুলো খেতেও খুব ভালো। আগামীতে নিজের জমিতে আমি এ ফলের চাষ করবো বলে মনে করছি।
বিদেশী এ ফল অধিক লাভজনক উল্লেখ করে স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেন জানান, আধুনিক কৃষি গতানুগতিক কৃষি কাজের চেয়ে লাভজন। সাম্মাম বিদেশী ফল তবে আমাদের এখানেও চাষ করা সম্ভব। নাইম নামের তরুণ কৃষককে আমরা চাষে পরামর্শ দিয়ে সার্বক্ষণিক সহায়তা করছি। সে বিষমুক্ত আধুনিক উপায়ে চাষ করে বেশ সাফল্য পেয়েছে। আগামীতে এ চাষ বৃদ্ধি পাবে বলেও আশা করেন তিনি।
মিরপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, রক মেলন বা সাম্মাম বেদেশি ফল হলেও আমাদের দেশে এটির চাষ করা সম্ভব। মিরপুর উপজেলার কচুবাড়ীয়া এলাকার একজন তরুণ এক বিঘা (৩৩শতক) জমিতে এ বছর এ ফলের চাষ করেছে। সে খুব ভালো ফলও পাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে পুষ্টি সমৃদ্ধ ফলমূল এবং আধুনিক চাষাবাদে তরুণরা এগিয়ে আসছে। মিরপুর উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে শিক্ষিত তরুণ কৃষকদের অগ্রাধিকার দিয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে আধুনিক উপায়ে লাভজনক ফসল চাষের জন্য উদ্বুদ্ধ করছি।
সান নিউজ/আরএস