শরীফ ইকবাল, নরসিংদী: দেশে বিরাজমান করোনায় দুর্দিনে দিন কাটাছে নরসিংদীর মৃৎশিল্প পরিবারগুলো। হাঁড়ি পাতিল তৈরি করে বিক্রিই ছিলো তাদের আয়ের একমাত্র পথ। আর বিগত এক বছর ধরে করোনায় দোকানপাট বন্ধ থাকায় হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করতে না পাড়ায় বিপাকে পড়েছে এই শিল্পের সাথে জড়িতরা।
এ শিল্পর সাথে জড়িতরা জানায়, বৈশাখ আসার কয়েক মাস আগে থেকে তাদের মাটির জিনিস তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করতে হতো। কিন্তু কোভিড-১৯-এর দ্বিতীয় ঢেউয়ের আঘাত লেগেছে বিলুপ্তির পথে থাকা মৃৎশিল্পের উপর। লকডাউনসহ বৈশাখী মেলার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় কুমার পাড়ায় কর্মচঞ্চলতা নেই। গত বছরও করোনা পরিস্থিতির কারণে এ অবস্থা তৈরি হয়েছিল। সরেজমিনে কুমার পল্লিতে দেখা গেছে, সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। একদিকে মহামারি করোনা, অন্যদিকে লকডাউন। মাটির তৈজসপত্র বিক্রি শূন্যের কোঠায় নেমে আসায় সংসার চালাতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাওয়া এ পরিবারগুলোর কপালে পড়েছে ভাঁজ।
তবে মাটির দুষ্প্রাপ্যতার সঙ্গে শ্রমিকের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে মাটির তৈজসপত্র তৈরি ও বিক্রিতে খুব একটা লাভের মুখ দেখছেন না তারা। তাদের অভিযোগ, সরকারের অর্থনৈতিক সাহায্য-সহযোগিতা না পেলে এ শিল্প টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
মৃৎশিল্পের কারিগরগণ জানান, বংশের পূর্ব পুরুষের হাল ধরে রেখেছেন। নববর্ষ এলেই সাহেব-বাবুদের আমাদের কথা মনে পড়ে। বিশেষ করে পান্তা-ইলিশে আমাদের মাটির থালা দরকার হয়। এখন কেউ মনে রাখে না। সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন আমাদের দিকে নজর না দিলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে। আক্ষেপ করে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন বাসুদেব পাল।
সম্প্রতি নরসিংদীর পারুলিয়া পাল বাড়িতে গিয়ে এ শিল্পের সাথে জড়িতদের সাথে কথা বলে জানা যায়। এখানে প্রায় আড়াইশত লোকজন বসবাস করে। তাদের অধিকাংশই মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত। এখানে শিশুদের খেলনাপাতি, হাঁড়ি পাতিল ও দই পাতার পাতিল তৈরি করেই তারা সংসার চালায়।
কিন্তু বিগত এক বছর ধরে দেশে বিরাজমান করোনায় মিষ্টির দোকান বন্ধ ও দেশে মেলা পার্বণ বন্ধ থাকায় তাদের তৈরি পণ্য বিক্রি না হওয়ায় আয়ের পথটিও বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিন পার করছেন।
এ শিল্পের সাথে জড়িতরা আরো জানায়, করোনায় বাড়িতে বসে না থেকে হাঁড়ি-পাতিল তৈরি করে যাচ্ছেন কিন্তু বিক্রি না হওয়ায় ঘরের আনাচে কানাচে সাড়িবদ্ধবভাবে সাজানো রয়েছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের নিজেদের জায়গা জমি বিক্রি ও বন্ধক রেখে কোনক্রমে জীবন পার করছেন।
নিরঞ্জন পাল জানান, বিগত বছরের করোনায় জমি বন্ধক রেখে জীবন বাঁচাতে হয়েছে। এবারের করোনায় অনেকটাই অনাহারে দিন পার করতে হচ্ছে। চার দিকে সরকারি সহায়তা দিলেও এই পাল এলাকায় কোন সহায়তা পাওয়া যায়নি।
একই এলাকার আরেক সদস্য বিধান পাল জানান, চারদিকে সরকারি সহায়তা আসলেও এই পাল এলাকার সদস্যরা তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তাই এই শিল্পের সাথে জড়িতদের প্রাণ বাঁচাতে দ্রুত তাদের খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন।
সান নিউজ/আরএস