সান নিউজ ডেস্ক : বড়ই বিচিত্র প্রাণীজগৎ! এ প্রাণীজগতের অপর একটি বিস্ময় পাখি। পাখিরা প্রকৃতির সবচেয়ে বড় উপকারী বন্ধু। পাখীদের উপকারের কথা বলে শেষ করা যাবে না। বস্তুতপক্ষে ওরাই বাঁচিয়ে রেখেছে, সুস্থ রেখেছে আমাদের প্রকৃতি ও পরিবেশ। প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতি এতোটাই তাদের নিঃশব্দের কমিটমেন্ট!
ঋতুরাজ বসন্ত ঘিরে প্রকৃতিতে এখন কোকিলের (Western Koel) ক্রমাগত ডাক। সে বিরামহীন ডাক আমাদেরকে অনেকাংশে বিমুগ্ধ করে। আবার কখনো কখনো আমাদের স্মৃতিকাতর করে তুলে। কোকিল ফাল্গুন প্রকৃতির সুমিষ্ট ধারাভাষ্যকার। কিন্তু তার জন্মক্ষণ বা বড় হয়ে উঠার বিষয়টি বড়ই বেদনাবহ!
কোকিল নিজে অন্য পাখির মতো বাসা তৈরি করতে পারে না। তাই তাকে বাধ্য হয়েই অন্য পাখিদের তৈরিকৃত বাসাতেই লুকিয়ে ডিম দিয়ে পালিয়ে যেতে হয়। আর যে পাখিটির বাসা কোকিল ডিম দিলো সেই পাখিটি কিন্তু ডিমগুলোকে পরের ভেবে কখনোই ফেলে দেয় না। বরং দিনের পর দিন দায়িত্ব ও মমতার সাথে পরের ডিমগুলোকে তা দিয়ে ছানা ফুটিয়ে থাকে।
ছোটপাখি মৌটুসির বাসায় বড় আকারের পাখি সুরেরা কোকিলের ডিম পেড়ে চলে যাওয়া একটি তাক লাগানো আশ্চর্য ঘটনা। বাংলাদেশের ছোট পাখিদের দলের একটি প্রজাতি হলো মৌটুসি (Sunbird)। আর তার থেকে দশগুণ বড় আকারের পাখি কোকিল (Western Koel)। তাহলে এটি কী করে সম্ভব?
প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক এ প্রসঙ্গে বলেন, “এর ফলেই উপলব্ধি করা যায়, এই ছোট মৌটুসিপাখিটার টিকে থাকার ক্ষমতা এতোই বেশি যে, বাচ্চা তোলার পরই সে কিন্তু বিলুপ্ত হয়নি। অন্যের বাচ্চা তুললে তো তার নিজে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। বংশপরম্পরায় মৌটুসি যদি তাদের বাচ্চা তুলতে না পারে তাহলে কয়েক যুগ পরে তো তাদের বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি।”
তিনি আরো বলেন, যেমন- কাক কোকিলের বাচ্চাও তোলে। কাকও কিন্তু বিলুপ্ত হয়নি। প্রচুর সংখ্যায় কাক আমাদের চারপাশে রযেছে। তার মনে কাকের মতোই মৌটুসিরও কিন্তু টিকে থাকার ক্ষমতা এতেই বেশি যে, নিজের বাচ্চা তোলার পরও সে অন্যের বাচ্চা তুলে থাকে। এই ভাবে শক্তিশালী পাখিরা মাঝে মাঝে অন্যের বাচ্চাও তুলে দেয়।
বাসা তৈরির তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, আরো মজার ব্যাপার হলো মৌটুসি বাসা করে একটি ঝুলা বা ব্যাগের মতো। এর মধ্যে একটা ছোট্ট ছিদ্র থাকে। যেমন বাবুই পাখির ঝুলে থাকা বাসার প্রবেশপথটা একটি পাইপের মতো। এর ফলে অন্য পাখিরা সহজে ভেতরে ঢুকতে পারে না। তাই বাবুইয়ের বাসায় অন্য পাখিরা ডিম পারতে পারে না।
‘আর মৌটুসির ঝুলন্ত বাসার পাশেই একটি গোল ছিদ্র রয়েছে। এই গোল দিয়ে ওই শুধু ঢুকতে পারে। একটা বড় পাখি মোটেই এর ভেতর দিয়ে ঢুকতে পারে না। ঢুকলে ওঠা ছিড়ে যাবে বাসাটা। সুরেরা কোকিল এসে মৌটুসির বাসায় বসে ঝুলার উপরের বসে ছোট্ট ছিদ্র দিয়ে ডিমটা ভেতরে ফেলে দেয়।’
এই অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ইনাম আল হক বলেন, ‘এই মৌটুসি পাখির জীবনে এমন অদ্ভুত ঘটনা মাঝে মাঝে ঘটে থাকে যে, সে নিজের বাচ্চাকে খাওচ্ছে। একদিন হঠাৎ দেখা গেল কারো ঘরে অন্য পাখির বাচ্চা বড় হয়ে উঠলো। এটা খুব ঘন ঘন ঘটে না। খুব কম চোখে পড়ে আমাদের। কাকের বাসায় কোকিলের বাচ্চা আমাদের বেশি চোখে পড়ে।’
‘মৌটুসির বাসায় এর ঘটনা খুবই কম চোখে পড়ে কারণ মৌটুসিরা লুকিয়ে বাসা বানায়। অনেক সময় মানুষের বাসার আশেপাশেও সে বাসা করে। কারণ মানুষের বাসার আশেপাশেও হলে তখন আর কোকিল আসবে না তার বাসায়। কোকিল লাজুক পাখি বলে মানুষের থেকে দূরত্ব থাকে। আর এই ব্যাপারটি অনুভাবন করেই মৌটুসিরা মানুষের বসতির কাছাকাছি বাসা তৈরি করে।’
সুরেলা কোকিল যদিও আমাদের কোকিল প্রজাতিদের মাঝে সবচেয়ে ছোট, তারপরও কিন্তু মৌটুসির চেয়ে দশগুণ বড়। দু’ জাতের মৌটুসি আমাদের চারপাশে সর্বদা বিচরণ করে। একটি হলো বেগুনি-মৌটুসি (Purple Sunbird) এবং অপরটি বেগুনি-কোমড় মৌটুসি (Purple-rumed Sunbird)। এদের দু প্রজাতির আকার প্রায় ১০ সেন্টিমিটার বলে জানান প্রখ্যাতপাখি গবেষক ইনাম আল হক।
সান নিউজ/এসএম