ফিচার

তোমায় আজও ভা‌লোবা‌সে বাংলা‌দেশ

নিজস্ব প্রতি‌বেদক : শুভ জন্ম‌দিন মুক্তির অগ্রনায়ক,পরাধীনতার নিকষ অন্ধকারে ডুবে থাকা বাঙালি জাতির মুক্তির দূত বঙ্গবন্ধু শেখ মু‌জিব। তু‌মি স্বাধীন বাংলার ধ্রুবতারা/তুমি হৃদয়ের বাতিঘর/আকাশে-বাতাসে বজ্রকণ্ঠ/তোমার কণ্ঠস্বর।

১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় মা সায়েরা খাতুনের কোল আলোকিত করে,পৃথিবীতে ধ্রবতারা হ‌য়েই জন্ম নিয়েছিলে তু‌মি। সেই তু‌মি আজ বেঁচে থাকলে তোমা‌কে নিয়েই বাঙালি উদযাপন করত ১০১তম জন্মবার্ষিকী। তোমার হাত দিয়েই ঠিক নয় দিন পর উড়ত স্বাধীন বাংলার সুবর্ণজয়ন্তীর পতাকা। কিন্তু তু‌মি আজ নেই। তাই‌তো গা‌নেগা‌নে র‌চিত হ‌য়ে‌ছে,বাঙালির মনের কথা,“যদি রাত পোহালেই শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই”।

তোমা‌কে নি‌য়ে র‌চিত হ‌য়ে‌ছে ক‌বিতা। যে বছর বাঙালির মুক্তির সংগ্রাম চূড়ান্ত লড়াইয়ের রূপ পেল, সেই বছর ১৯৭১ সালের ১৭ মার্চ পল্লীকবি জসীম উদ্দীন বাংলার ধ্রবতারা বঙ্গবন্ধু‌কে নি‌য়ে বঙ্গ-বন্ধু শিরোনামে লিখলেন-মুজিবর রহমান/ ওই নাম যেন বিসুভিয়াসের অগ্নি-উদারী বান।

তু‌মি‌তো সেই ধ্রবতারা,সেই অগ্নি-উদারী বান,৭১ এর ৭ ই মার্চ মাত্র ১৮ মিনিটের কন্ঠস্ব‌রে আগু‌ণের ফুল‌কির মতো মুগ্ধতা ছ‌ড়িয়েছে। তুমি কাঁপা‌লে জনতার মঞ্চ, কাঁপল বিশ্ব, সারাদেশ।তোমার আগুণ জড়া ক‌ন্ঠে বে‌জে উঠল দীর্ঘ লড়াই সংগ্রা‌মে স্বাধীনতার লোকা‌নো মন্ত্র। অব‌শে‌ষে তু‌মি বল‌লে “এবা‌রের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবা‌রের সংগ্রাম মু‌ক্তির সংগ্রাম”। “আ‌মি য‌দি হুকুম দিবার নাও পা‌রি, তোমা‌দের যার যা কিছু আ‌ছে তাই ‌দি‌য়ে শক্রুর মোকা‌বেলা কর‌বে”।

“ম‌নে রাখবা রক্ত যখন দি‌য়ে‌ছি রক্ত আরও দেব, তবুও এই দেশের মানুষ‌কে মুক্ত ক‌রে ছাড়ব ইনশাল্লহ”। তোমার এ মন্ত্রে উদ্দীপ্ত মানুষ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে ছিনিয়ে আনল স্বাধীনতার র‌ক্তিম সূর্য। বি‌শ্বের বু‌কে জন্ম‌নিল স্বাধীন বাংলা‌দেশ। স্বার্থকতা পে‌লো তোমার জন্ম ।বাঙ্গালী পে‌লো স্বাধীনতা। সেই থে‌কে তু‌মি স্বাধীনতার স্থপ‌তি বঙ্গবন্ধু শেখ মু‌জিব।হ‌লে বাংলার স্বাধীনতার ধ্রবতারা।

তোমার ১০১তম জন্মদিনে আজ বাঙালি জাতির আনন্দে পুলকিত হওয়ার দিন। তাই তোমার জন্মদিনে দেশের ১৬ কোটি মানুষ বিনম্র শ্রদ্ধা, সালাম আর হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় নানা কর্মসূচির মধ্যে ‌দি‌য়ে স্বরণ কর‌ছে। তাই সকালের শুরু‌তেই রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তল‌নের মধ্যে দি‌য়েই শুভ আনুষ্ঠা‌নিকতার যাত্রা শুরু । এছাড়া সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা হবে।

মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছর হওয়ায় এবার বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে উদযাপিত হচ্ছে মহান নেতার শততম জন্মদিবস। তাই‌তো দেশের সর্বত্র নানা আয়োজন ছড়িয়েছে অন্য আলো। একই স‌ঙ্গে এই দিনটি জাতীয় শিশু কিশোর দিবস হিসাবেও উদযাপিত হচ্ছে। এবারের জাতীয় শিশু দিবসের প্রতিপাদ্য বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, শিশুর হৃদয় হোক রঙিন।

উল্লেখ্য, বিদা‌য়ি বছরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মদিন উপলক্ষে ২০২০-২১ সালকে মুজিববর্ষ ঘোষণা করে সরকার।

বিশ্ব গণমাধ্যমের চোখে বঙ্গবন্ধু আজও তুমি ক্ষণজন্মা পুরুষ। স্বাধীনতার প্রতীক,রাজনীতির ক‌বি। তাই‌তো কিউবার বিপ্লবী নেতা প্রয়াত ফিদেল ক্যাস্ট্রো তোমা‌কে হিমালয়ের সঙ্গে তুলনা করে বলেছিলেন, আমি হিমালয়কে দেখেনি, তবে শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসে এই মানুষটি ছিলেন হিমালয় সমান। সুতরাং হিমালয় দেখার অভিজ্ঞতা আমি লাভ করেছি।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও সহ‌যোগী সংগঠনগু‌লো।। ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে সংবাদপত্রগুলো। দেশব্যাপী দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের পাশাপাশি বিশেষ প্রার্থনা সভার আ‌য়োজন করা হ‌য়ে‌ছে। করা হ‌চ্ছে এতিমদের মধ্যে বিতরণ করা হবে উন্নতমানের খাবার।

আওয়ামী লী‌গের কর্মসূ‌চির ম‌ধ্যে সকাল সাড়ে ১১টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে রক্ষিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ। যাতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া বিকেল সাড়ে তিনটায় জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে অনুষ্ঠিত হবে বিশেষ অনুষ্ঠান।

এছাড়া আগামী রোববার সকাল ১১টায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। যাতে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা : মুজিব শতবর্ষ উৎযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে ১০ দিনের কর্মসূচিতে থাকছে- ১৭ মার্চের আয়োজনের থিম ‘ভেঙেছে দুয়ার এসেছ জ্যোতির্ময়’। এদিন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ প্রধান অতিথি থাকবেন। সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবং মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইবরাহীম মু. সালেহ উপস্থিত থাকবেন। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ভিডিওবার্তা দেবেন।

১৮ মার্চ আয়োজনের থিম ‘মহাকালের তর্জনী’। সে অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন। ১৯ মার্চের অনুষ্ঠান যতকাল রবে পদ্মা যমুনা। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে উপস্থিত থাকবেন। ২০ মার্চ তারুণ্যের আলোকশিখা। এই অনুষ্ঠানে ওআইসি’র সেক্রেটারি জেনারেল ড. ইউসেফ আল ওথাইমিন শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন। ২১ মার্চের আয়োজন ধ্বংসস্তূপে জীবনের গান, এতে দেশীয় একাডেমিশিয়ানরা বক্তব্য দেবেন।

২২ মার্চের আয়োজন বাংলার মাটি আমার মাটি। এদিন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারী উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইউশিহিদে সুগা শুভেচ্ছা বার্তা দেবেন। ২৩ মার্চ ‘নারীমুক্তি, সাম্য ও স্বাধীনতা’, এদিন ইউনেস্কোর ডিজি উপস্থিত থাকবেন। ২৪ মার্চ ‘শান্তি-মুক্তি ও মানবতার অগ্রদূত’, সেদিন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং উপস্থিত থাকবেন। পোপ ফ্রান্সিস শুভেচ্ছা বার্তা দেবেন।

২৫ মার্চ গণহত্যার কালরাত্রি ও আলোকের অভিযাত্রা’। এদিন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী চুং স্যু-কুয়েন এবং তাকাশি হাওয়াকাওয়ার পুত্র ওসামু হাওয়াকাওয়া শুভেচ্ছাবার্তা দেবেন। ২৬ মার্চের আয়োজন ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর ও অগ্রগতির সুবর্ণরেখা’। এদিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উপস্থিত থাকবেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন।

বঙ্গবন্ধুর রাজ‌নৈ‌তিক জীবন : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আজীবন সোচ্চার এই অবিসংবাদিত নেতাকে রাজনৈতিক জীবনে বহুবার কারাবরণ করতে হয়। তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা ও পরবর্তীতে ১১ দফা আন্দোলন ও ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।

এরপর তিনি বঙ্গবন্ধু উপাধি লাভ করেন। তার সাহসী নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ধাপে ধাপে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে থাকে। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়পে‌লেও, অর্জিত পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে বাঙালি জাতির ওপর নানা নির্যাতন শুরু করে।

বঙ্গবন্ধু একাত্তরের ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ (২৫ মার্চ মধ্যরাতে) তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তার নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালির বহু আকাঙ্ক্ষিত বিজয় ও স্বাধীনতা অর্জিত হয়। বিংশ শতাব্দীতে নির্যাতিত, নিপীড়িত ও শোষিত মানুষের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করে যারা বিশ্বনন্দিত নেতা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাদের অন্যতম।

সান নিউজ/এমআর/

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

নলছিটিতে ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু

ঝালকাঠি প্রতিনিধি: ঝালকাঠির নলছিটিতে শুরু হয়েছে ভূট্টো স্মৃত...

জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের পরামর্শ

নিজস্ব প্রতিবেদক : নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সদস্য তোফায়েল আহ...

স্বামীর মুঠোফোনে সাবেক প্রেমিকের ম্যাসেজ-ভিডিও, নববধূর আত্মহত্যা

নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালীর সুবর্ণচরে স্বামীর মুঠোফোনে সা...

বাজার সহনশীল করার চেষ্টা করছি

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাজারে নিত্যপণ্যের দাম কিছুটা কমে এসেছে জ...

বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৩ জনের মৃত্যু

জেলা প্রতিনিধি: গাজীপুরের শ্রীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃ...

ডেঙ্গুতে একদিনে বছরের সর্বোচ্চ মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক: একদিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ১১ জনের মৃত...

অটোরিকশার বিষয়ে যে বার্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক: উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী অটোরিকশা সম...

পেপার মিলে অগ্নিকাণ্ড, দগ্ধ ১১

জেলা প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের একটি পেপার মিলে অগ্...

পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, নিহত ২১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবারপাখ...

আমরা সব লিপিবদ্ধ করে যাবো

বিনোদন ডেস্ক: অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা