নিজস্ব প্রতিবেদক : সাধারণত ভাজা পোড়া, স্ন্যাক্স ও বেকারি পণ্য তৈরি এবং হোটেল-রেস্তোরাঁ ও ফুটপাতের সড়কসংলগ্ন দোকানের খাবার বা স্ট্রিট-ফুড তৈরিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে উচ্চমাত্রায় ট্রান্সফ্যাট। যা দেশের জনস্বাস্থ্য হুমকিতে (ট্রান্স ফ্যাটি এসিড) থাকায় হৃদরোগ জনিত মৃত্যুঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
আগামী বৃহস্পতিবার ১৮ মার্চ নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, আগামী সপ্তাহের যেকোনও দিন খসড়া নীতিমালা মতামতের জন্য উন্মুক্ত করা হতে পারে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে খাদ্যে ট্রান্সফ্যাটের মাত্রা নির্ধারণে নীতিমালা করা হচ্ছে। খসড়া নীতি প্রস্তুত করা হয়েছে। সব ঠিক থাকলে ৬ মাসের মধ্যে চূড়ান্ত নীতিমালা করা সম্ভব হবে।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক প্রতিবেদন জানা যায়, বাংলাদেশে প্রতিবছর হৃদরোগ জনিত মৃত্যুর ৪ দশমিক ৪১ শতাংশের জন্য দায়ী ট্রান্সফ্যাট। তবে এ বিষয়ে কোনও নীতিমালা না থাকায় হুমকিতে রয়েছে দেশের জনস্বাস্থ্য।
নীতি প্রণয়নের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের (বিএফএসএ) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইউম সরকার বলেন, খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। শিগগিরই মতামত আহবান করে ওয়েব সাইটে উন্মুক্ত করা হবে। সব ঠিক থাকলে আগামী ৬ মাসে চূড়ান্ত নীতিমালা করা সম্ভব হবে।
ট্রান্স ফ্যাটি এসিড (টিএফএ) বা ট্রান্সফ্যাট এক ধরনের ক্ষতিকর ফ্যাট বা স্নেহ জাতীয় খাদ্য উপাদান। শিল্পোৎপাদিত ট্রান্সফ্যাটের প্রধান উৎস পারশিয়ালি হাইড্রোজেনেটেড অয়েল বা পিএইচও, যা বাংলাদেশে ডালডা বা বনস্পতি ঘি নামে পরিচিত। সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রান্সফ্যাট নির্মূল করার বৈশ্বিক আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রান্সফ্যাটের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ নির্ধারণ করে নীতিমালা ঘোষণা করেছে।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি ভারতের নিরাপদ খাদ্য ও মান নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (এফএসএসএআই) তাদের নিরাপদ খাদ্য ও মান (বিক্রয়ের নিষেধাজ্ঞা ও বাধ্যবাধকতা) বিষয়ক প্রবিধানমালা সংশোধন করে তেল ও ফ্যাট দিয়ে তৈরি সব খাদ্যপণ্যে ট্রান্সফ্যাটের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ (বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশকৃত) ধার্য করেছে। এর মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই এফএসএসএআই বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী সব তেল ও ফ্যাটে ট্রান্সফ্যাটের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ নির্ধারণ করে।
২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে এই নির্দেশনা কার্যকর হবে। সংশোধিত প্রবিধানমালাটি সব পরিশোধিত ভোজ্যতেল, বনস্পতি ঘি (পিএইচও), মারজারিন, বেকারি শরটেনিং ও ভেজিটেবল ফ্যাট স্প্রেড এবং মিক্সড ফ্যাট স্প্রেডসহ অন্যান্য রান্নার উপকরণ এবং এসব দিয়ে তৈরি সব খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল হেলথ এডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই)-এর দক্ষিণ এশিয়া প্রোগ্রামের রিজিওনাল ডিরেক্টর বন্দনা শাহ সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন, ‘আশা করি ভারতের মতো এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশকেও অতি দ্রুত একই ধরনের নীতি গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করবে। বাংলাদেশের খাদ্য সরবরাহ থেকে এই ক্ষতিকর উপাদানটি নির্মূল করা হলে তা নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য ব্যবস্থা তৈরির পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং একইসঙ্গে হৃদরোগ হ্রাস করার মাধ্যমে আর্থিক সাশ্রয় সাধন করবে।’
গত বছর এক গবেষণায় ঢাকার শীর্ষস্থানীয় পিএইচও ব্র্যান্ডসমূহের মোট ২৪টি নমুনা বিশ্লেষণ করে ৯২ শতাংশ নমুনায় ডব্লিউএইচও সুপারিশকৃত ২ শতাংশ মাত্রার চেয়ে বেশি ট্রান্সফ্যাট পাওয়া গেছে। এই গবেষক দলের অন্যতম সদস্য ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের ইপিডেমিওলজি এন্ড রিসার্চ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী। তিনি বলেন, ২০২৩ সালের মধ্যে ট্রান্সফ্যাট নীতিমালা বাস্তবায়নে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা রয়েছে। তবে যত তাড়াতাড়ি করা সম্ভব, ততই মঙ্গল।
সান নিউজ/এসএ