আন্তর্জাতিক ডেস্ক : করোনা মহামারীর কারণে বিশ্বব্যাপী অচলাবস্থায় সংকোচনের মুখে পড়ে বড় থেকে ছোট প্রতিটি অর্থনীতিই। এমন পরিস্থিতিতে ধনী দেশগুলো বিপুল পরিমাণ প্রণোদনা, কভিড-১৯ পরীক্ষা এবং টিকাদান কার্যক্রম বিস্তৃত করে মহামারীর ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে দরিদ্র ও স্বল্পোন্নত দেশগুলো। যথাযথ সহায়তা না দেয়া হলে চলতি বছর কেবল দারিদ্র্যপীড়িত আফ্রিকা মহাদেশেরই আরো ৩ কোটি ৯০ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে পড়তে পারে বলে জানিয়েছে আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এএফডিবি)। খবর ব্লুমবার্গ।
মহামারীর কারণে আফ্রিকা মহাদেশের অর্থনীতি অর্ধশতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ মন্দার মধ্যে পড়েছে। তবে ২০২১ সালেই এ অঞ্চলের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এএফডিবি ২০২১ সালের অর্থনৈতিক প্রতিবেদনে বলেছে, গত বছর প্রায় তিন কোটি আফ্রিকানকে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে ঠেলে দিয়েছিল এ মহামারী। যথাযথ সহায়তা না দেয়া হলে এ বছর আরো ৩ কোটি ৯০ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে পড়তে পারে।
শুক্রবার প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহামারীর প্রভাব ধনী-দরিদ্রদের মধ্যে বৈষম্য বাড়িয়ে তুলবে, কঠোর পরিশ্রমের ফলে অর্জিত দারিদ্র্যের হার আবারো বেড়ে যাবে এবং নারীরা তুলনামূলকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটি প্রতিদিন ১ দশমিক ৯০ ডলারের কম অর্থ দিয়ে জীবনযাপন করা মানুষের সংখ্যা ৪৬ কোটি থেকে ৫৩ লাখে উন্নীত করবে। এ সংখ্যা মহাদেশের মোট জনসংখ্যার ৩৪ দশমিক ৪ শতাংশ।
গত বছর মহাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ২ দশমিক ১ শতাংশ কমেছিল। যদিও চলতি বছরই এ অঞ্চলের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হয়ে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। তবে ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানটির আশঙ্কা কভিড-১৯-এর সংক্রমণ, বিপুল পরিমাণ ঋণের বোঝা, সীমিত মূলধন প্রবাহ, পণ্যের কম দাম, পর্যটন ও বৈদেশিক আয় কমে যাওয়া, প্রতিকূল আবহাওয়া এবং সামাজিক উত্তেজনার কারণে প্রত্যাশিত এ অর্থনীতিক পুনরুদ্ধার বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
মহামারীতে আফ্রিকার সরকারগুলোকে দেয়া অর্থায়ন বৃদ্ধির বিষয়টি অত্যাবশ্যকীয় হয়ে উঠেছে এবং কিছু সরকার তাদের ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছে। গত বছর বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য সংকট শুরুর পর থেকে ঋণ পরিশোধে অক্ষম হওয়া প্রথম দেশ হয়ে উঠেছিল জাম্বিয়া। জাতিসংঘের আফ্রিকার অর্থনৈতিক কমিশনের নির্বাহী সচিব ভেরা সংওয়ে বলেছিলেন, এ মাসে সম্ভবত আরো আফ্রিকান দেশ তাদের ঋণের পুনর্গঠন চাইবে।
এএফডিবির প্রাক্কলন অনুয়ায়ী, সংকট মোকাবেলায় ২০২০ সালে আফ্রিকান সরকারগুলোর প্রায় ১৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলার অতিরিক্ত অর্থসহায়তার প্রয়োজন ছিল। মহাদেশটির মোট জিডিপিতে ঋণের গড় অনুপাত ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশে স্থিতিশীল ছিল। এ বছর নাগাদ ঋণের হার ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পয়েন্ট বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এএফডিবি বলছে, অর্থায়নের অভাবে মহাদেশজুড়ে কভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচি এবং মহাদেশীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য খাতের অব্যাহত সমর্থন, সামাজিক সুরক্ষা সম্প্রসারণ এবং আঞ্চলিক ও বহুজাতিক সংহতি জোরদার করাসহ অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সহায়তা করার নীতিগত সুপারিশ করা হয়েছে।
এর আগে চলতি বছরের শুরুতে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির এক গবেষণায় বলা হয়েছিল, কভিড-১৯ মহামারীর কারণে ২০৩০ সালের মধ্যে আরো ২০ কোটি ৭০ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যসীমায় প্রবেশ করবে। এর মধ্যে ১০ কোটি ২০ লাখই হবে নারী। সব মিলিয়ে এ সময়ে বিশ্বের চরম দারিদ্র্যের সংখ্যা ১০০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে।
সান নিউজ/এসএ