নিজস্ব প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা : পতিত জমির পুকুর থেকে হাজার কেজি শোল মাছ তুলে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সাতক্ষীরার জাকির হোসেন। জাকির হোসেন তার পুরান সাতক্ষীরার পুকুর থেকে এই মাছ তোলেন। এ সময় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও জেলা মৎস্য কর্মকর্তা তা প্রত্যক্ষ করেন।
মাত্র ৫ শতক জমির একটি পতিত ও অব্যবহৃত পুকুর বন্দোবস্ত নিয়েছিলেন জাকির। সেখানে দেশি জাতের পোনা ছেড়ে এক বছরের মাথায় তিনি লাভ করেছেন এক টন শোল মাছ। যার বাজার মূল্য প্রতি কেজি ৫০০ টাকা হিসাবে ৫ লাখ টাকা।
জাকির বলেন, ১৯৯৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ শেষ করেন তিনি। এরপর চাকরির পেছনে না ছুটে তিনি আত্মকর্ম সংস্থানের পথ খুঁজে নেন। বৃষ্টির পানিতে তার এলাকা ডুবে যাওয়ায় জাকির একদিন খুঁজে পান এক জোড়া দেশি শোল মাছ। এই শোল জোড়া থেকে তিনি শোল মাছ চাষে উদ্যোগী হয়ে ওঠেন। এখন তার ৫টি পুকুরে চলছে শোল মাছের চাষ।
পুরান সাতক্ষীরার এই পতিত জমির পুকুরটি বার্ষিক মাত্র দেড় হাজার টাকার বন্দোবস্থ চুক্তিতে সেখানে চাষ করেন শোল মাছের। মাত্র ১ বছরের মাথায় এই শোল প্রতিটি ৮০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি পর্যন্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
জাকির বলেন তার পুকুরে কোনও ধরনের রাসায়নিক পদার্থ এমনকি কীটনাশকও প্রয়োগ করতে হয় না। সম্পূর্ণ জৈব সারের ওপর ভিত্তি করে তিনি এই মাছ লালন করেছেন। কোনও রাসায়নিক খাদ্য, বিশেষ করে পোলট্রি ফিড ব্যবহার করেননি তিনি। মাছের খাদ্য হিসাবে ছোট জাতের মাছ ব্যবহার করে এই শোল বড় করে তুলেছেন জাকির হোসেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মাটি পানি ও প্রকৃতি মাছ চাষের অনুকূল। পুরনো পতিত জলাশয়ে দেশি জাতের মাছ চাষের উপযুক্ত জায়গা উল্লেখ করে তিনি বলেন, চাকরি না পেয়ে হতাশ না হয়ে দেশের যুব সমাজ এ ধরনের উদ্যোগে এগিয়ে আসতে পারে। এর ফলে আমাদের হারিয়ে যাওয়া নানা জাতের দেশি মাছ পুনরায় বাঙ্গালির ঘরে উঠবে। বিদেশি প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে হাইব্রিড জাতের মাছ উৎপাদনের প্রয়োজন পড়বে না।
জাকিরের এই আত্মকর্মসংস্থানমূলক উদ্যোগের প্রশংসা করে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বলেন, তিনি আশাব্যঞ্জক কাজ করে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। আত্মকর্ম সংস্থানের পথ দেখিয়েছেন। শিক্ষা শেষে অথবা শিক্ষাকালীন চাকরির পেছনে না ছুটে জাকিরের দেখানো পথ বেয়ে এগোনের জন্য দেশের যুব সমাজকে পরামর্শ দেন তিনি।
জেলা প্রশাসক বলেন, ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ অর্জন করতে হলে জাকিরের মতো অন্যদেরও এগিয়ে আসতে হবে। জেলা প্রশাসক বলেন, ‘জাকিরের পথ অনুসরণ করলে আমরা যেমন আমাদের মাছের চাহিদা পূরণ করতে পারবো, তেমনি এর ফলে দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে। সমাজ থেকে বেকারত্ব বহুলাংশের দূর হবে।’
জেলা মৎস্য অফিসার মো. মসিউর রহমান বলেন, ‘জাকির হোসেনের শোল মাছ চাষে মৎস্য বিভাগ সহযোগিতা করেছে। তার শোল মাছ উৎপাদন আরও সম্প্রসারিত করতে সহায়তা দেওয়া হবে। তার দেখাদেখি অন্যদেরও এগিয়ে আসা দরকার।’
সান নিউজ/এসএ