সান নিউজ ডেস্ক : বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও এটাই সত্যি যে, একটি বিশেষ প্রজাতির পাখির গতি উড়ন্ত বিমানের মতোই! দ্রুত গতিসম্পন্ন এবং দ্রুত আপন উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সক্ষম। পাখিরাজ্যের আর অন্যান্য পাখি রয়েছে তার পেছনে। শুধু সব পাখিই কেন? সব প্রাণিদের থেকে সে অনেকখানি এগিয়ে। আর এই দুর্দান্ত গতিময়তাকে কাজে লাগিয়ে সে শিকারে সব পাখি-প্রাণীদের চেয়ে অনেক বেশি পটু।
বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগামী প্রাণী হিসেবে যার নাম শীর্ষে সে হলো পেরেগ্রিন ফেলকন (Peregrine Falcon)। জল, স্থল আর বায়ুর মধ্যে সে-ই সর্বাধিক দ্রুতগামী। এর যেমন রয়েছে অবিশ্বাস্য গতি; তেমনি রয়েছে শিকার ধরার ব্যতিক্রমী কৌশল।
বাংলায় এ পাখিকে ‘পেরেগ্রিন শাহিন’ বা ‘বহেরি বাজ’ বলা হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Falco Peregrinus। একদিকে তার ডানার প্রচন্ড গতি অন্যদিকে শিকার ধরার বিশেষ কৌশল এই দুয়ের কারণে পাখিরাজ্যে বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী এ পাখিটিকে সব মহাদেশেই অত্যন্ত দাপটের সাথে রাজত্ব করতে দেখা যায়। এরা আমাদের দেশের বিরল পরিযায়ী পাখি।
পাখি পর্যবেক্ষক ও বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট তারেক অণু বলেন, আমাদের গ্রহের নভোচর, জলচর ও স্থলচর প্রাণীদের পর্যায়ে দ্রুতগতির রেকর্ডধারী প্রাণীটিই হলো এই পেরেগ্রিন ফেলকন। স্থলচর দ্রুত গতিসম্পন্ন প্রাণী চিতার গতির থেকেও এর গতি অনেকগুণ বেশি।
গতিময়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘চিতার গতি প্রতি ঘণ্টায় ১১০ কিমি থেকে ১২০ কিমি। এ পাখির গতি প্রতি ঘণ্টায় ৩২২ কিলোমিটার অর্থাৎ ২০০ মাইল ছুটে চলার প্রমাণ মিলেছে। নদী, হ্রদ, পাহাড়, জলাভূমি, প্যারাবন, অর্ধমরুভূমি প্রভৃতি স্থানে এরা অবস্থান করে। ভোরে এবং গোধুলিতে এরা বেশি কর্মচঞ্চল থাকে। মার্চ-মে এদের প্রজননকাল। খাড়া পর্বতের গায়ে অথবা উঁচু গাছের শক্ত ডালে মাচার মতো বাসা বানিয়ে মেয়ে পাখিটি একাই ডিমে তা দেয়।’
এ পাখিটির শারীরিক গঠন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘পেরেগ্রিন ফেলকনের ওজন ৩০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি পর্যন্ত এবং শরীরের দৈর্ঘ্য ৩৪ সেমি থেকে ৫৮ সেমি। এরা আমাদের দেশের বিরল পরিযায়ী পাখি। শীতকালে আমাদের দেশে মাঝে মাঝে দেখা যায়। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠের দিক কালচে ধূসর, দেহের নিচে লালচে, মাথা কালো, পেট ও রানে কালো ডোরা, চোখ গাঢ় বাদামি এবং পা ও পায়ের পাতা হলুদ থাকে।’
পৃথিবীতে পেরেগ্রিন শাহিনের মোট ১৯টি উপপ্রজাতি রয়েছে। বাঁকানো ধরাল দাঁত ও তীক্ষ্ণ নখ দিয়ে এরা শিকারকে মুহূর্তেই ছিন্নভিন্ন করে ফেলতে পারে। এদের শিকারের তালিকায় রয়েছে কবুতর, জলজ পাখি, এমনকি স্তন্যপায়ী বাদুড় বলে জানান তারেক অণু।
এ পাখি শিকার কৌশল সম্পর্কে তারেক অণু বলেন, ‘এ পাখিটির শিকার ধরার মুহূর্তটি প্রাণীজগতের সর্বাধিক আকর্ষণীয় একটি বিষয়। চিহ্নিত শিকারকে ধরার জন্য সে মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে ব্যবহার করে থাকে। ডানা দুটোকে তার শরীরের সাথে লেপ্টে রেখে প্রচন্ড গতি ছুটতে পারে। নির্দিষ্ট উচ্চতা থেকে পাখিটি নিচের দিকে মুক্তভাবে লাফ দিয়ে শিকারকে অব্যর্থভাবে জাপটে ধরে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিকারের সময় এর এতই অতি মৃদু নড়াচড়া করে চোখের নিমিষে দিক পরিবর্তন করতে পারে। অনায়াসে ২ কিলোমিটার দূর থেকে কবুতরের মতো ছোট-খাটো শিকারের দিকে ধাবিত হতে পারে। সাধারণত শিকারকে বধ করতে এরা তীক্ষ্ণ ধারালো নখ ব্যবহার করে। তবে এতো প্রচন্ডবেগে ধেয়ে আসার দ্রুতগতির ধাক্কায় সেই শিকারের ঘাড় মুহূর্তে ভেঙে যায়।’
শিকার ধরার অতিসফল এ পদ্ধতিকে বলা হয় ডেড স্টপ (Dead stoop)। এই বিশেষ ক্ষমতার জন্য পৃথিবীর পাখিপ্রেমী ও গবেষকদের কাছে এর যথেষ্ট কদর রয়েছে।
সান নিউজ/এসএম